Apan Desh | আপন দেশ

গণপরিবহনে যাত্রী বীমার ফাইল লাল ফিতায় বাধা ২ যুগ 

নিজস্ব প্রতিবদেক

প্রকাশিত: ১৭:৩০, ১২ নভেম্বর ২০২৪

গণপরিবহনে যাত্রী বীমার ফাইল লাল ফিতায় বাধা ২ যুগ 

ছবি: সংগৃহীত

জল, স্থল, রেল ও আকাশপথে পরিবহণ দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণের জন্য বীমা সুবিধা রয়েছে। কিন্তু যাত্রীদের জন্য কোনো প্রকার বীমার ব্যবস্থা নেই। এক সময় বাস, লঞ্চ, রেলসহ বিভিন্ন গণপরিবহনের গায়ে ‘যাত্রী বীমা করা আছে’ এমন লেখা দেখা যেত। তবে বর্তমানে প্রায় একযুগ ধরে এ লেখা আর দেখা যায় না। আধুনিক সময়ে যাত্রীদের নিরাপত্তা ও বীমা ব্যবস্থা নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা বা উদ্যোগ নেয়া হয়নি। আজকাল কোনো গণপরিবহনেই যাত্রীদের জন্য বীমার সুবিধা রয়েছে কিনা তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় না। যা যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়ে একটা শূন্যতা সৃষ্টি করেছে।

এ বিষয়ে বাধ্যতামূলক আইন থাকা সত্ত্বেও পরিবহণ মালিকরা যাত্রী বীমা চালু করেন না জানান মালিক-চালক ও শ্রমিকরা। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হলেও যাত্রীদের পরিবার কোনো ক্ষতিপূরণ পায় না  বলে অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, এরশাদ সরকারের আমলে যাত্রী বীমার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরিবহণ মালিকদের বাধায় তা বাস্তবায়িত হয়নি। পরবর্তীতে একাধিক উদ্যোগ নেয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। বীমা খাত আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ছিল। এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে।  এরপর নৌপথের জন্য একটি বীমা নীতিমালা তৈরি হলেও তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।

এ ব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, নৌপথে যাত্রীদের জন্য বীমা নীতিমালা তৈরি হয়েছে। তা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য আইডিআরএ (বীমা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ) এর মাধ্যমে কাজ চলছে।

আইডিআরএ-এর এক কর্মকর্তা বলেন, দেশের অন্য সব পরিবহনের মতো যাত্রী বীমা বাধ্যতামূলক করা উচিত। এর ফলে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা কিছু ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন। দেশে বর্তমানে চার ধরনের বীমা চালু রয়েছে—অগ্নি, মোটর, নৌ ও বিবিধ বীমা। সড়ক, আকাশ ও রেলপথে যাত্রীদের বীমা করা বাধ্যতামূলক। তবে নদীপথে তা নেই।

সাবেক বীমা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের (বর্তমানে যা আইডিআরএ) এক সাবেক কর্মকর্তা জানান, শুধু নৌযানই নয়, অন্যান্য গণপরিবহনেও যাত্রীদের নামে কোনও বীমা নেই। মালিক পক্ষ নিজের গাড়ির জন্য বীমা করে থাকেন। ক্ষতিগ্রস্ত যাত্রী পরিবারের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।  

তিনি আরও বলেন, ২০০১ সালে যাত্রী বীমা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু তা মন্ত্রণালয়ে আটকে যায়। এর পরও বেশ কয়েকবার এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। 

বরিশাল রুটের একাধিক সুকানি বলেন, লঞ্চে যাত্রীদের জন্য কোনো বীমা নেই। এ ব্যাপারে আইনি বাধ্যবাধকতাও নেই। ফলে লঞ্চডুবিতে নিহত যাত্রীর পরিবার কোনো ক্ষতিপূরণ পায় না। তবে প্রতিটি লঞ্চে মালিকদের অর্থে একটি কল্যাণ তহবিল রয়েছে। এ তহবিল থেকে সামান্য ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়। লঞ্চের জন্য বীমা বাধ্যতামূলক না হলেও ব্যাংক ঋণ নিয়ে লঞ্চ কিনলে বীমা বাধ্যতামূলক হয়। কিন্তু এ বীমার সুবিধা যাত্রী পায় না। শুধুমাত্র মালিক ও ব্যাংকই সুবিধা পায়। নদীপথে পণ্য বহনকারী কার্গোর জন্য বীমা বাধ্যতামূলক রয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নদীপথে চলাচলকারী লঞ্চ, জাহাজ, কার্গো জাহাজ ও স্টিমারের যাত্রী ও পণ্যের বীমা সংক্রান্ত একটি খসড়া নীতিমালা ইতোমধ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে। নীতিমালাটি দ্রুত চূড়ান্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেটি আইডিআরএ (বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ) এর মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) এক কর্মকর্তা বলেন, পরিবহণ যাত্রীদের বীমা বাধ্যতামূলক করা উচিত। এতে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা কিছু ক্ষতিপূরণ পাবে। আইডিআরএ নিয়ম মেনে বীমা বাস্তবায়ন ও ক্ষতিপূরণ প্রদান করবে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সব ধরনের পরিবহনে যাত্রী বীমা বাধ্যতামূলক। দেশে চার ধরনের বীমা রয়েছে—অগ্নি, মোটর, নৌ ও বিবিধ। জল, স্থল, বিমান ও রেলপথে বীমা আইন রয়েছে। আর নদীপথের পরিবহণ বিবিধ বীমার আওতায় আসে।

গণপরিবহনের ক্ষেত্রে দুই-তিন ধরনের বীমা করতে হয়। আইডিআরএর এক কর্মকর্তা জানান, সড়ক, আকাশ ও রেলপথে যানবাহন চলাচল করতে হলে যাত্রীদের জন্য বীমা বাধ্যতামূলক। যদি বীমা না করা হয় তবে ক্ষতিগ্রস্ত যাত্রীর পরিবার কোনো ক্ষতিপূরণ পাবে না।

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়