শুক্রবার সকাল থেকে কাকরাইল মসজিদের সামনে আসতে থাকেন সাদ সমর্থকরা
তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বি মাওলানা সাদ কান্ধলভী ও জুবায়ের সমর্থকদের মধ্যে আবারো উত্তেজনা বিরাজ করছে। বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) কাকরাইলের মারকাজ মসজিদে অবস্থান নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন সাদপন্থিরা।
ঘোষণা অনুযায়ী শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) সকাল থেকেই দলে দলে কাকরাইল মারকাজ মসজিদে আসতে শুরু করেন মাওলানা সাদের সমর্থকরা। সারাদেশের পাশাপাশি ঢাকার বিভিন্ন এলাকা হয়ে হাজার হাজার সাদ সমর্থককে কাকরাইল মসজিদের দিকে যেতে দেখা যায়। আস্তে আস্তে তাদের জমায়েত অনেক বড় হয়। প্রধান সড়ক পার হয়ে প্রধান বিচারপতির বাসভবন ছাড়িয়ে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে জুমার নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা।
নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাকরাইল মসজিদ ও আশপাশের এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) জুয়েল রানা।
তিনি বলেন, তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষই সমঝোতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে- কাকরাইল মসজিদে চার সপ্তাহ থাকবেন জুবায়ের পন্থিরা আর দুই সপ্তাহ থাকবেন সাদপন্থিরা। সে অনুযায়ী সাদপন্থিরা আজ জমায়েত হয়েছেন।
এডিসি জুয়েল রানা বলেন, আজ থেকে আগামী দুই সপ্তাহের জন্য তারা কাকরাইল মসজিদে থাকবেন। কিন্তু সারা দেশ থেকে উলামায়ে-মাশায়েখরা এসেছেন, তাদের অধিকাংশই জুমার নামাজে অংশ নিতে এসেছেন। নামাজের পর চলে যাবেন। আর একটি অংশ মসজিদে থেকে তাদের নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন।
এই ব্যাপক জমায়েত ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
তাবলিগ-জামাতের বিবদমান দ্বন্দ্বের পর থেকে বিগত ৭ বছর ধরে প্রশাসনের সিদ্ধান্তে কাকরাইল মসজিদে অবস্থানের ক্ষেত্রে জুবায়েরপন্থিরা ৪ সপ্তাহ ও সাদপন্থিরা দুই সপ্তাহ করে পর্যায়ক্রমে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। যদিও বিগত সরকারের এমন বৈষম্যপূর্ণ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে আসছিল সাদপন্থিরা। এখন পুরো কাকরাইল মসজিদ অবৈধ দখল করে ১৫ নভেম্বর থেকে অবস্থান নিতে চায় জুবায়েরপন্থিরা। বুধবার (১৩ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সাদ অনুসারীরা।
তারা আরও জানান, অপরদিকে কাকরাইল মসজিদের একটি অংশে এমনিতেই জুবায়েরপন্থিরা সারা বছর মাদ্রাসার নামে আলাদা অবস্থান নিয়ে থাকেন। কিন্তু হেফাজতপন্থি আলেমদের সাম্প্রতিক ঘোষণার প্রেক্ষাপটে জুবায়েরপন্থিরা সরকারি সিদ্ধান্ত অমান্য করে কাকরাইল মসজিদ স্থায়ীভাবে দখল নেওয়ার ঘোষণা দেওয়াকে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের দিকে ঠেলে দেওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
এর আগে গত ৪ নভেম্বর সচিবালয়ে এক বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা দুই দফায় আয়োজিত হবে। প্রথম দফার ইজতেমা শুরু হবে আগামী ৩১ জানুয়ারি এবং দ্বিতীয় দফায় শুরু হবে ৭ ফেব্রুয়ারি।
তবে ৫ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক সমাবেশে মাওলানা জুবায়ের অনুসারীরা বলেন, দেশে ইজতেমা একবারই হবে, দু’বার নয়। টঙ্গীতে ইজতেমার মাঠ ও ঢাকার কাকরাইল মসজিদে দিল্লির মাওলানা সাদের অনুসারীদের আর ঢুকতে দেওয়া হবে না।
অন্যদিকে ৯ নভেম্বর এক ভিডিও বার্তায় সাদপন্থি ইমাম মুফতি আজিমুদ্দিন আগামী শুক্রবার কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের কাকরাইল মসজিদে না আসার আহ্বান জানান।
এমন পরিস্থিতিতে ভয়াবহ ধর্মীয় সংঘাত ও হতাহতের মতো ঘটনার আশঙ্কা করছেন সাধারণ মুসল্লি ও তাবলিগের সাথিরা।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।