একাডেমিতে ‘২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে আমাদের নজরুল’ শীর্ষক আলোচনা সভা।
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, জুলাই হত্যাকাণ্ডের খুনিদের যেকোনো মূল্যে বিচার করা হবে। ভারতীয় সাংস্কৃতিক আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে। নজরুলকে উপভোগ্য ও আনন্দময় করে তুলতে হবে।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) নজরুল ইনস্টিটিউট আয়োজিত ‘২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে আমাদের নজরুল’ শীর্ষক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক লতিফুল ইসলাম শিবলী। আলোচক ছিলেন দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, কবি আব্দুল হাই শিকদার ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিটির সদস্য ডা. জাহেদ উর রহমান।
আসিফ নজরুল বলেন, নজরুল আমাদের জাতীয় চেতনার অংশ। তার বিপ্লবী চেতনা আমাদের প্রজন্মকে উদ্দীপ্ত করেছে। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে নজরুলের গান ও কবিতা জাতিকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রেরণা দিয়েছিল। নজরুলের ‘আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে’ কবিতার মাধ্যমে তিনি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে রাজপথে নেমেছিলেন। কবি নজরুল ইসলাম বিদ্রোহী চেতনা ও অনন্য রক্ত ঝরা লেখার মাধ্যমে স্বৈরাচারের নির্যাতনের বিরুদ্ধে ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের যোদ্ধাদের উজ্জীবিত করেছিলেন। এজন্য ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে নজরুল খুবই প্রাসঙ্গিক ছিলেন।
আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের সাহিত্য, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক চর্চায় জাতীয় কবি নজরুলকে যথাযথভাবে চর্চা করা হয়নি। তিনি জীবনের পুরো সময়ে দেখেছেন যে রবীন্দ্রনাথের চর্চা সবচেয়ে বেশি হয়েছে। সেটি সব জায়গায়, যেমন গান, নাচ, আবৃত্তি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বেতার ও টিভিতে প্রাধান্য পেয়েছে। তবে নজরুলকে সেইভাবে চর্চা করা হয়নি। যেমনটি তাকে করা উচিত ছিল।
আসিফ নজরুল বলেন, মাঝে মাঝে মনে হতো শেখ হাসিনার সরকার একজনকে রাজনৈতিক ঈশ্বর আরেকজনকে সাংস্কৃতিক ঈশ্বর বানিয়েছে। তবে ঈশ্বরদের দাপটে নজরুলের মতো গণমানুষের প্রতিনিধিকে যথাযথভাবে তুলে ধরা হয়নি। আমাদের জাতীয় জীবনে নজরুলের রাজনৈতিক ও সামাজিক চরিত্র অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তিনি ছিলেন বিদ্রোহের কবি।
আসিফ নজরুল বলেন, একসময় আমরা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। মনে হতো, ২০৪২ না ৮২, কোনটা হবে? একজন মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যু কবে হবে? মাঝে মাঝে মনে হতো আমরা সবাই মারা যাব। কিন্তু তিনি বেঁচে থাকবেন। আর ধীরে ধীরে বয়স কমে আসবে। এ সময়ে তরুণরা বিদ্রোহ করেছিল। জীবনকে ত্যাগ করে তারা অবিশ্বাস্যভাবে বিদ্রোহ করে আমাদের মতো বৃদ্ধদের মাঝে সাহস সঞ্চয় করেছিল। এমন একটি জাতির প্রতিটি চর্চায় নজরুলের উপস্থিতি অত্যন্ত প্রয়োজন।
ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে মাহমুদুর রহমানের সাহস তুলে ধরে আসিফ নজরুল বলেন, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য তার রুমে আগুন দেয়া হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবি তোলা হয়েছিল। তিনি ভেবেছিলেন আর কত ঝুঁকি নেবেন। কিন্তু মাহমুদুর রহমানের কাছ থেকে নতুন সাহস পেয়েছিলেন। ‘শাহবাগের ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি’ শিরোনামে তার লেখা হেডলাইন তাকে উজ্জীবিত করেছিল। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কলম ধরার জন্য মাহমুদুর রহমানের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছিল। যেমন নজরুলকে ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে কলম ধরার জন্য নির্যাতন করা হয়েছিল। মাহমুদ ভাই তার কাছে একজন জীবন্ত নজরুল।
মাহমুদুর রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদের দালালরা যাতে আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেজন্য আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার জন্য তরুণরা নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন তরুণদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এ স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে।
জাহেদ উর রহমান বলেন, শেখ হাসিনাকে আমি ফ্যাসিস্ট বলি না। ২০১৮ পর্যন্ত তিনি ফ্যাসিস্ট ছিলেন। কিন্তু এরপর তিনি ফ্যাসিবাদকেও হার মানিয়েছেন। ফ্যাসিস্ট বা স্বৈরাচারের চেয়ে নিকৃষ্ট কোনো শব্দ থাকলে আমি তাকে সেটাই বলতাম। ফ্যাসিবাদী আচরণ ও জুলুম নির্যাতনে শেখ হাসিনা হিটলারকেও হার মানিয়েছে। তার স্বৈর শাসন দেখলে হিটলারও লজ্জা পেত।
আব্দুল হাই শিকদার বলেন, ভারতীয় দাদাদের খুশি করার জন্য গত ১৫ বছর নজরুল অবহেলিত ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের বন্দনা করতে গিয়ে নজরুলকে অবজ্ঞা করা হয়েছে। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের জন্য নজরুলচর্চা অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। যে তরুণের কানে সব সময় বাজে ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ লাথি মার ভাংরে তালা, সে তরুণ বিপ্লবের চেতনায় জেগে উঠবে সেটাই স্বাভাবিক। ভারতে কবি রবীন্দ্রনাথ, জার্মানির গ্যেটে, ইরানের ফেরদৌসী ও পাকিস্তানের আল্লামা ইকবালকে জাতীয় কবির মর্যাদা দেয়া হলেও আমাদের দেশে নজরুলকে এখনো সে মর্যাদা দেয়া হয়নি। আশা করছি অন্তর্বর্তী সরকার নজরুলের সঠিক মূল্যায়ন করবে। কারণ বরাবরের মতো এবারের ২৪ এর বিপ্লব আর অভ্যুত্থানে নজরুল আমাদের কাছে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক ছিলেন। সারা-দেশের দেয়াল লিখন, গান কবিতা ও গ্রাফিতেতে বারবারই নজরুলের বিদ্রোহী ও বিপ্লবী চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
সবশেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করেন ড. নাশিদ কামাল, ব্যান্ডসংগীত পরিবেশন করে র্যাবেল ব্যান্ড ও আবৃত্তি করেন টিটো মুন্সী।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।