Apan Desh | আপন দেশ

আহত বিপ্লবী বাবুকে থাইল্যান্ডে নেয়া হচ্ছে আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৯:৪৭, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

আহত বিপ্লবী বাবুকে থাইল্যান্ডে নেয়া হচ্ছে আজ

ছবি : সংগৃহীত

ছাত্র জনতার বিপ্লবে পতন ঘটেছে ১৬ বছরের স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের। তবে এ জন্য প্রণ বিসর্জন দিতে হয়েছে দেড় সহস্রাধিক ছাত্র জনতার। আহত হয়েছে আরও ২৬ হাজার। তাদেরই একজন মোহাম্মদ বাবু। আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হন মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমানের এ সন্তান। উন্নিত চিকিৎসার জন্য ৩৬ বছর বয়সীয় বাবুকে থাইল্যান্ডে পাঠানো হচ্ছে। 

শনিবার (২৩ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে ঢাকা ছাড়বেন এই বিপ্লবী। বাবুর সঙ্গে থাইল্যান্ড যাচ্ছেন তার বোন সুবর্ণা। তিনি জানান, আমার ভাইয়ের চিকিৎসায় সরকার খুব আন্তরিক। আমরা চিন্তাও করতে পারি নাই বাবুকে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড নেয়া হবে। তিনি স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানান।

জানা গেছে, মোহাম্মদ বাবু কাজ করতেন নয়াপল্টনের ছাপাখানায়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় বন্ধ হয়ে যায় ছাপাখানা। কিন্তু বাসায় বসে থাকেননি তিনি। জড়িয়ে পড়েন স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে। শনির আখড়ায় বাসা হওয়ার এ এলাকায় প্রতিদিন আন্দোলন করতেন। 

২০ তারিখ সকালের দিকে আন্দোলনে যোগদান করেন। গলি থেকে মিছিল নিয়ে মেইন রাস্তায় চলে যান। এ সময় হেলিকপ্টার দিয়ে টহল দিচ্ছিলো বিজিবি। হঠাৎ করে হেলিকপ্টার থেকে গুলি শুরু হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাবু ৫-৬ হাত দূরে ছিটকে পড়েন। পুলিশ তাকে ঘিরে ধরে রাখে। রক্ত দিয়ে ভিজে যায় রাস্তা। পরিচিত একজন তার বোনকে ফোন দিয়ে আসতে বলে। বোন বাবুর ৪ বন্ধুসহ ভাইকে উদ্ধার করতে আসেন। কিন্তু পুলিশ তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়। রাস্তায় পড়ে থাকে বাবু। ৫-৬ ঘন্টা পর বোনের জামাই এসে তাকে মুগদা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায়। এখানেও শুরু হয় বিড়ম্বনা। কেন হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে? এ অভিযোগে চিকিৎসা শুরু করতেও দেরি হয়। এদিকে রক্তশুণ্য হয়ে বাবু মৃতপ্রায়। মুক্তিযোদ্ধা বাবা চিকিৎসকসহ অন্যান্যদের পায়ে পড়েন। শুরু হয় চিকিৎসা। 

কিন্তু মেয়ে তো হাজতে বন্দি। তাকে ছোটাতে যান মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান। পুলিশ তাকে অপমান করে তাড়িয়ে দেয়। পরে রাতে পুলিশ ফোন করে স্বামীকে ৪ হাজার টাকা নিয়ে যেতে বলে। গরীব মানুষ ধারদেনা করে ৪ হাজার টাকা দিলে মুক্তি মেলে বাবুর বোনের। কিন্তু মুক্তি মেলে না বন্ধুদের। তাদের পাঠানো হয় কারাগারে। গুলি বাবুর পেটের নিচের অংশ দিয়ে ঢুকে কোমরের পিছন দিয়ে বের হয়ে যায়। গুলি ছিন্নভিন্ন করে বাবুর খাদ্যনালী, মুত্রথলি, কোমরের হাড়।

মুগদা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকরা তার পেটে দুবার অপারেশন করেন। তার খাদ্যনালীর অনেকাংশ কেটে ফেলতে হয়। বাকি অংশ পেটে ফুটো করে আলাদা করে মলত্যাগের রাস্তা বানানো হয়। কিন্তু অবস্থার কোন উন্নতি হয় না। পরে সেপ্টেম্বর মাসে তাকে বিএমএমইউ-তে স্থানান্তরিত করা হয়। চিকিৎসায় কিছু উন্নতি হলেও একদিন খাদ্যনালী নতুন করে বানানো মলত্যাগের রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে আসে। ফলে অবস্থা খারাপ হয় বাবুর। মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত দেয় তাকে দেশের বাইরে পাঠানোর। ১৫ দিন আগে থাইল্যান্ডের চিকিৎসক এসে বাবুর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। পরে তারা তাকে থাইল্যান্ডে নেয়ার সিদ্ধান্ত দেন।

মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমকে জানানো হলে তিনি দ্রুত বাবুকে থাইল্যান্ডে নেয়ার ব্যবস্থা করেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তার চিকিৎসায় এক কোটি টাকা খরচ হবে। তবে তা আরোও বাড়তে পারে।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ব্যাক্তিগত কর্মকর্তা ডা. মাহমুদ বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা মহোদয়ের নির্দেশে আমরা বাবুকে দ্রুত বিদেশে নেয়ার ব্যবস্থা করি।  শুক্রবার তার টিকেট পাওয়া যায়। সকাল ১১ টার বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে তাকে থাইল্যান্ডে পাঠানো হচ্ছে। থাইল্যান্ডের বেজথানি হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে বাবুকে। ইতোমধ্যে গণবিপ্লবে আহত আরোও ৪ জন এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়