Apan Desh | আপন দেশ

মৎস্য-প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালায়ের ১০০ দিন, যা বললেন উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫:০১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

আপডেট: ১৫:০৪, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

মৎস্য-প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালায়ের ১০০ দিন, যা বললেন উপদেষ্টা

ছবি : আপন দেশ

জনগণের দৈনন্দিন জীবনের খাদ্যের চাহিদা মেটানোই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। বুধবার (২৭ নভেম্বর) আন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালায়ের ১০০ দিনে কাজের অগ্রগতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, জনগণের জন্য প্রাণিজ আমিষ (মাছ, মাংস, দুধ, ডিম) সরবরাহের কাজ জড়িত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। পুষ্টির চাহিদা মেটানো রাষ্ট্রের দায়িত্ব। বিভিন্ন বয়সের নারী, পুরুষ এবং বিশেষ করে শিশুদের জন্য পুষ্টির যোগান দিতে পারা এই মন্ত্রণালয়ের কাজের সাফল্য বা ব্যর্থতা প্রমাণ করে। 

তিনি বলেন, বিগত ১০০ দিনে দুটি অধিদফতরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাজকে ফলপ্রসূ করার জন্য প্রশাসনিক সংস্কারের কাজ যেমন বদলি, বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার কর্মকর্তাদের পদায়ন, পদন্নোতির কাজ করা হয়েছে। এই কাজ এখনো চলমান আছে। এসব পরিবর্তন অধিদফতরের কার্যক্রমের গতিশীলতা বৃদ্ধি এবং দক্ষতা উন্নয়নে সহায়ক হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন উপদেষ্টা।

ফরিদা আখতার  বলেন, আগস্ট মাসের বন্যায় কৃষির পাশাপাশি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ১৩টি জেলার ৮৮টি উপজেলায় এক লক্ষ ৯৭ হাজার ১৬৬টি পুকুর/দিঘি/খামারের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে ১০৭৫১৭ মেট্রিক টন মাছ ও চিংড়ি, পোনা নষ্ট হয়েছে ৪৪ কোটি। মৎস্যখাতে মোট ক্ষতি ১৮৯৯ কোটি টাকা। অন্যদিকে গবাদি পশু (গরু ২.৬০ লক্ষ, মহিষ ৮ হাজার, ছাগল ৯৩ হাজার, ভেড়া ১০ হাজার,মুরগি ৩৪.২১ লক্ষ, হাঁস ৪.৬০ লক্ষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, মারা গেছে ৩৯০০০ গরু, ১৬ হাজার ছাগল, মুরগি ২১ লক্ষ, হাঁস ২ লক্ষ। প্রায় ৭ লক্ষ ৮২ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। মোট ক্ষতির পরিমাণ টাকার অংকে ৪২৮ কোটি টাকা।

উপদেষ্টা বলেন, মৎস্য খাত জিডিপিতে ২.৪৩% এবং কৃষি জিডিপিতে ২২% অবদান রাখে। রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক আয়ের ১% অর্জন করছে। নদী, বিল, হাওরসহ শত শত জলাশয়ের পাশাপাশি সামুদ্রিক মাছ আহরনের সাথে জড়িয়ে আছে কয়েক লাখ মানুষ। মাছের উৎপাদন/আহরণ বাড়ানোর পাশাপাশি মৎস্যজীবিদের জীবিকা রক্ষার কাজ করা হয়েছে। মৎস্য খাতের কাজের মধ্যে ইলিশ আহরণ সংক্রান্ত কাজ করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৪ এর আওতায় মোট ২ হাজার ১৬৫টি মোবাইল কোর্ট ও ৯ হাজার ৮০২টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এ সকল মোবাইল কোর্ট ও অভিযানের মাধ্যমে ৫৪.৮৪ মে.টন ইলিশ জব্দ, ৬১১.৬৩৮ লক্ষ মিটার জাল আটক, ৩ হাজার ২৫টি মামলা দায়ের, ৭৫.২৭৩ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় এবং ২ হাজার ৯ জনকে জেল প্রদান করা হয়েছে।

উপদেষ্টা বলেন, ইলিশ রক্ষার জন্য অবৈধ জাল আটক এবং কারখানায় অভিযান চালানো হয়েছে। মুন্সিগঞ্জে কারখানায় অভিযান চালিয়ে ২৪.৯০ লক্ষ মিটার এবং ৬৬০০ পিস রেইল আটক করা হয়েছে। এই অভিযান অব্যাহতঁ আছে। এবং কারখানাগুলো বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। ইলিশ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে গত ১০ বছর ধরে। তবুও দুর্গা পুজার সময় ৩৯৫০ মেট্রিক টন রপ্তানীর অনুমতি দেয়া হলেও ভারতে গেছে মাত্র ৬৬৫ মেট্রিক টন।

তিনি বলেন, আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে বন্যার প্রভাবে ডিমের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। একই সাথে কৃষি ফসলও নষ্ট হবার কারণে বাজারে সব্জির সরবরাহ কম ছিল। ফলে ডিমের চাহিদাও সাভাবিকের তুলনায় বেশি ছিল। তাই ডিমের দাম নিয়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। এবং একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা এই সুযোগে মুনাফা লাভের জন্য ডিমের সরবরাহে হস্তক্ষেপ করে। এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার যথেষ্ট অভিযান চালিয়েছে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছে। 

ফরিদা আখতার বলেন, অন্যদকে টিসিবি এবং ট্রাকে করে ন্যায্য মূল্যে ডিম বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর থেকে খামারি পর্যায় থেকে সরাসরি বাজারে ডিম আনার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বর্তমানে খামারি পর্যায়ে ১৩৩-১৩৪ টাকা, কর্পোরেট পর্যায়ে ১২৭ টাকা, পাইকারী পর্যায়ে ১৩২ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ডিমের মূল্য ১৪০-১৪২ টাকা ডজন। এই দাম আরো কমতে পারে যদি উৎপাদন খরচ বিশেষ করে ফিড, একদিনের বাচ্চা এবং বিদ্যুতের দাম কমানো যায়।

উপদেষ্টা বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা যথাক্রমে ১৩৫ এবং ১৫% যা প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থায় মাধ্যমে বিতরণ করা হচ্ছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় পর্যান্ত নয় এবং সুদের হারও বেশি। তাই কৃষি ব্যাংকের মতো মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে ‘মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন ব্যাংক গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এই খাতে গতিশীলতা আনতে তা কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ.টি.এম মোস্তফা কামাল, অতিরিক্ত সচিব সৈয়দা নওয়ারা জাহান, বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সুরাইয়া আখতার জাহান, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক, মৎস্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. মোঃ আবদুর রউফসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়