ফাইল ছবি
ভারতের মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বাংলাদেশকে লক্ষ্য করে মিথ্যা তথ্যসহ অপপ্রচার তুঙ্গে পৌঁছেছে। বিশেষ করে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোর বিকৃত তথ্য ছড়িয়ে ভারত বিশ্বব্যাপী তাদের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের চেষ্টা করছে।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বিশ্বে মিথ্যা ও ভুয়া তথ্য ছড়ানোয় ভারত শীর্ষে। বিভিন্ন অপপ্রচার ও ভুয়া তথ্যে সয়লাব হয়ে গেছে ভারতের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সংবাদমাধ্যমগুলোও। ৬০ শতাংশেরও বেশি অনলাইনে ভুয়া খবরের মুখোমুখি হয়েছেন দেশটি। যা এ হারের বৈশ্বিক গড় ৫৭ শতাংশ।
বাংলাদেশে স্বৈরশাসন শেখ হাসিনার পর ভারত যেন উন্মাদ হয়ে গেছে। দেশটি সভ্যতা ও ভব্যতার সব সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। সে দেশের সরকারের রাজনীতিবিদ ও সাধারণ মানুষের আচরণে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ তাদের করদরাজ্য হয়ে গেছে। হাসিনার পতনের পর তারা জমিদারি হারিয়েছে।
ভারতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর অসংখ্য নির্মমতার ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। সেসব নিয়ে দেশটির কোনো সংকোচ বা অনুশোচনা নেই। কিন্তু বাংলাদেশে তাদের মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন না হওয়ায় তারা অযাচিত উদ্বেগ-উগ্রতা প্রকাশ করছে।
২ ডিসেম্বর ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা রাজ্যের উত্তর আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে হামলা করা হয়। হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি নামের একটি সংগঠনের সদস্যরা দুপুরের দিকে সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে ঢুকে এ হামলা করে।
এ ব্যাপারে ত্রিপুরার পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী ঘটনাটিকে ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ বলেছেন। তবে একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, এটাও মনে রাখতে হবে, এটা কিন্তু দীর্ঘদিনের ক্ষোভের প্রকাশ। অর্থাৎ, রাজ্য সরকারের সর্বোচ্চ তরফ থেকেই হামলায় এক ধরনের বৈধতা দেয়া হলো। যা কূটনীতিক শিষ্টাচারের চরম লঙ্ঘন।
হাসিনা পতনের পর থেকেই ভারতে মোদী সরকারের পোষ্য ‘গোধি মিডিয়া’ বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর হামলার অতিরঞ্জিত খবর প্রকাশ করে যাচ্ছে। অন্যদিকে ভারতের উত্তরপ্রদেশের সম্ভল শহরে মসজিদে জরিপ চালায়। এতে পুলিশের গুলিতে চার মুসলিম যুবকের মৃত্যু হয়। আবার ভারতের উত্তরাখণ্ড প্রদেশে একটি মসজিদ ও মাদ্রাসা গুড়িয়ে দেয়া হয়। এদিকে বাংলাদেশকে নিয়ে একের পর এক মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে ভারতের মিডিয়া।
আল-জাজিরার সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ভারত মিথ্যা তথ্য বা ডিসইনফরমেশন ছড়ানোর ব্যাপারে রীতিমতো ইন্ড্রাস্ট্রি গড়ে তুলেছে। গত ১৫ বছর ধরে শয়ে শয়ে কোটি টাকা, অগণিত মিথ্যা মিডিয়া তৈরি করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এ ইন্ডাস্ট্রি প্রোপাগান্ডা চালায়। ধারণা করা যায়, সে ইন্ডাস্ট্রি এখন বাংলাদেশের পিছনে লেগেছে।
বাংলাদেশে ইসকনের এক ধর্মীয় নেতার গ্রেফতারের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের আদালত চত্বরে এক মুসলিম আইনজীবীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হিন্দুরা এ হামলা করেছে এ ধোঁয়া তুলে মুসলিমদের হিন্দু নিধনে লেলিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল এ ঘটনা। কিন্তু এ দেশের মুসলমানরা সে ফাঁদে পা দেয়নি।
এরপরে বাংলাদেশিরা ভারতের পতাকার অপমান করেছে এ কথা বলে ভারতে বাংলাদেশের পতাকা পোড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে বিক্ষোভও করা হয়। ভারতের রাজনীতিবিদরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে বাংলাদেশে পণ্য রফতানি করতে দেবে না। মমতা ব্যানার্জি জাতিসংঘের সেনাদের বাংলাদেশে পাঠানোর আহবান করেছেন। আগরতলায় হামলা সব ধরনের শিষ্টাচার ছাড়িয়েছে।
বাংলাদেশ যে একটা স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ তা ভারত যেন মানতেই পারছে না। যেই দেশে দেড় যুগ ধরে হিন্দুত্ববাদীরা ক্ষমতায়, যেখানে মুসলমানসহ সমস্ত সংখ্যালঘু তীব্র রোষানলের শিকার। সে দেশ অন্য দেশের সংখ্যালঘুদের নিয়ে মায়াকান্না দেখানো তীব্র ভণ্ডামি।
আর পণ্য রফতানি তো বাংলাদেশ বিনা পয়সায় করে না। বরং বাংলাদেশ ভারতের বিশাল বাজার। বাংলাদেশ থেকে ভারতীয়রা বিপুল রেমিট্যান্সও পাঠায়। ফলে এইসব হুমকি-ধামকি খুবই বায়বীয়। বৈশ্বিক যুগে ভারত বাদেও বাংলাদেশের পণ্যর অভাব হবে না। আদতে বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন খাতে হাসিনার দাসখতের কারণে বাংলাদেশকে ভারতের পণ্য চড়া দামে কিনতে হতো।
এদেরকে দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ঐক্য চায় রাজনৈতিক দলগুলোও। আজ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে সংলাপ করবেন তিনি। আগামীকাল বৃহস্পতিবার ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে সংলাপ করবেন।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।