
ছবি: নেত্র নিউজ
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ১২ বছর বয়সী রাকিব হাসানের মৃত্যু সেদিন রাতে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। তার প্রাণহানির পেছনে যেটি ঘটেছিল তা ছিল অত্যন্ত করুণ ও মর্মান্তিক। রাকিবকে আহত অবস্থায় হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।সেখানে দেখা যায় তার মাথা থেকে রক্ত ঝরছে। কেউ একজন আর্জেন্টিনার জার্সি দিয়ে তার মাথা বেঁধে দিচ্ছে। ওই সময় এক দর্শনার্থীকে চিৎকার দিয়ে আহাজারি করছিলেন ‘এক শিশু, এক শিশু’।
একই সময় ঘটনাস্থল থেকে আধা কিলোমিটার দূরে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী হেলিকপ্টার থেকে গ্রেনেড ছোঁড়ার দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেন। ওই হেলিকপ্টারটি আকাশে চক্কর দিয়ে সাউন্ড (স্টান) গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছিল। হেলিকপ্টারটি থেকে বৃষ্টির মতো সাউন্ড (স্টান) গ্রেনেড ছোড়া হচ্ছিল। ওই সন্ধ্যার অন্ধকার ভেদ করে হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া সেসব গ্রেনেড প্রচণ্ড শব্দের সঙ্গে বিদ্যুতের মতো ঝলকানি দিচ্ছিল।
নেত্র নিউজের অনুসন্ধানে উঠে আসে যে, র্যাব—যারা সাধারণত এমন অভিযান পরিচালনা করে—সে দিন মোহাম্মদপুরে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ করতে স্টান গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়েছিল। যদিও র্যাব মৃত্যুর জন্য তাদের দায় অস্বীকার করেছে। কিন্তু ঘটনাস্থল থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও ভিডিওগুলি স্পষ্টভাবে দেখিয়েছে যে, স্টান গ্রেনেডের আঘাতেই রাকিবের মৃত্যু হয়েছিল।
নেত্র নিউজের বিশ্লেষণে জানা গেছে, ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৬টা ৩৮ মিনিটে রাকিবকে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। ভিডিওতে উঠে আসে লোকজন দ্রুততার সঙ্গে তাকে হাসপাতালের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। হাসপাতালে রাকিবের মাথায় গভীর আঘাত পাওয়া গেছে। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রাকিবের মৃত্যুর কারণ ছিল ‘গ্রেনেডের আঘাত’ যা তার মাথায় পড়েছিল। ‘হত্যাকাণ্ড (হোমিসাইড)’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
প্রাথমিকভাবে স্থানীয় পুলিশ রাকিবের পরিবারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। যেন তারা আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ না করে। তবে পরবর্তীতে নতুন সরকারের অধীনে র্যাবের কর্মকাণ্ডের তদন্ত শুরু হয়। র্যাবের দাবি ছিল, তারা সেদিন গ্রেনেড ব্যবহার করেছিল। তবে কোনো মৃত্যুর দায় তাদের নয়। কিন্তু নেত্র নিউজের অনুসন্ধান ও ফরেনসিক প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে দেখা যায়, স্টান গ্রেনেডের আঘাতেই রাকিবের মৃত্যু হয়েছিল।
রাকিবের মাথায় যে গভীর আঘাত ছিল তা বিশেষজ্ঞদের মতে, স্টান গ্রেনেডের আঘাতের ফলেই হয়েছে। এ ধরনের গ্রেনেড সরাসরি শারীরিক আঘাত বা বিস্ফোরণের মাধ্যমে গুরুতর ক্ষতি করতে পারে। ফিজিশিয়ান্স ফর হিউম্যান রাইটসের বিশেষজ্ঞরা জানান, এ ধরনের আঘাতের ফলে মৃত্যু হওয়া সম্ভব। এটি খুবই বিপজ্জনক।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাকিবের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। তবে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, র্যাবের স্টান গ্রেনেড ব্যবহারের বিষয়টি ছিল না। একদিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও দলের কর্মীরা এ ঘটনাকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন। আবার নতুন সরকার এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের বিচার করার অঙ্গীকার করেছে।
নেত্র নিউজের খবরে জানা গেছে, সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হলেও তার বিরুদ্ধে সরাসরি র্যাবের কর্মকাণ্ডের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। পুলিশও হয়তো যারা ট্রিগার টেনেছিল তাদের চেয়ে বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলকে অগ্রাধিকার দিতে পারে—এ গ্রেফতার তারই ইঙ্গিত দেয়।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।