Apan Desh | আপন দেশ

মধুমতি মডেল টাউন প্লট মালিকদের আত্মহুতির হুমকি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:০০, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

আপডেট: ১৭:৩২, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

মধুমতি মডেল টাউন প্লট মালিকদের আত্মহুতির হুমকি

ছবি: আপন দেশ

রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারের মধুমতি মডেল টাউনের বাসিন্দারা নিজেদের বসতভিটা রক্ষার জন্য আবেদন জানিয়েছেন। যদি তাদের বসতভিটা রক্ষা না হয় তাহলে তারা পরিবারের সঙ্গে আত্মহুতির পথ বেছে নিতে বাধ্য হবেন। 

বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মধুমতি মডেল টাউন হাউজিং সোসাইটির সদস্যরা এসব কথা বলেন।

লিখিত বক্তব্যে প্লট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক সুজাউদ্দিন আহম্মদ বলেন, ২০০১ সালে রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারে মেট্রোমেকার্স নামে একটি আবাসন প্রতিষ্ঠান মধুমতি মডেল টাউন নামে একটি প্রকল্প তৈরি করে। সে প্রকল্পের বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়। প্রকল্পের অবস্থান ও নথিপত্র যাচাই করে তারা সেখানে প্লট কিনেন। যা নাল জমি হিসেবে ছিল। জমির সিএস, আরএস, এসএ খতিয়ানে এটি জলাশয় নয়। বরং নাল জমি হিসেবে চিহ্নিত।

তিনি আরও বলেন, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলো মাথা গোঁজার জন্য এখানে জমি ক্রয় করি। সরকারের সাব রেজিস্ট্রার জমি রেজিস্ট্রি করেন, এসিল্যান্ড জমি খারিজ করেন এবং ভূমি অফিস ভূমি উন্নয়ন কর গ্রহণ করে। এরপর ডেভেলপার কোম্পানি রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ নির্মাণ, বৈদ্যুতিক পোল বসানো ও পল্লী বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করেন। বর্তমানে পল্লী বিদ্যুৎ আবাসন থেকে মাসে ১৮-২০ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল আদায় করছে।

তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)-এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান মধুমতি মডেল টাউনকে বন্যা প্রবাহ এলাকা হিসেবে উল্লেখ করে উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন। আদালত প্রথমে প্লট মালিকদের পক্ষে রায় দেয়। মেট্রোমেকার্সকে রাজউক থেকে অনুমোদন নিতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু বেলা পরে আপীল করে এবং প্রভাব খাটিয়ে তাদের পক্ষে একটি রায় আদায় করে।

এ রায়ের মধ্যে বলা হয়, যদি মেট্রোমেকার্স ৬ মাসের মধ্যে মাটি সরিয়ে না নেয় তবে রাজউক তা সরিয়ে নেবে। পাশাপাশি রেজিস্ট্রেশন ব্যয়সহ জমাকৃত অর্থের দ্বিগুণ টাকা পরিশোধের কথা বলা হয়। অথচ একযুগ অতিবাহিত হলেও এখনো কোনও ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি। এতে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান উপদেষ্টা হয়ে তার প্রভাব বিস্তার করে রাজউককে দিয়ে আমাদেরকে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা মনে করি এ রায়ের ক্ষেত্রেও বৈষম্য হয়েছে। 

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, মধুমতি মডেল টাউনের পূর্বপাশে ৫০০ বিঘা জমিতে বিদ্যুতের পাওয়ার প্ল্যান্ট, পশ্চিমে বেসরকারি মালিকানাধীন যমুনা ন্যাচারাল পার্ক (প্রায় ৫০ একর), প্রকল্পের সামনে এক হাজার একর জমিতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ময়লার ভাগাড় রয়েছে। সেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য একটি চীনা প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এছাড়া মেট্রোরেলের ডিপো এবং অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা রয়েছে একই এলাকায়। কিন্তু বেলা বা অন্য কোনও পরিবেশবাদী সংগঠন এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ করেনি। শুধুমাত্র মধুমতি মডেল টাউন প্রকল্পের বিরুদ্ধে তাদের ক্রোধ এবং প্রতিহিংসা।

অথচ এ প্রকল্পের অনুমোদনের জন্য সরকারি বিভিন্ন দফতরের ৯টি ছাড়পত্রের মধ্যে ৮টি ছাড়পত্র গ্রহণ করা হয়েছে। ২০ হাজার মানুষের বসবাস এখানে। প্রকল্পে ১০ লাখের বেশি গাছ রয়েছে। একটি গাছ কাটলে বেলা আন্দোলন করে। তবে এ প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে ১০ লাখের বেশি গাছ কাটা যাবে। এটা কি পরিবেশের ওপর মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনবে বলে আমরা মনে করি। 

প্লট মালিকরা বলেন, আমরা বৈষম্যের শিকার হয়েছি। এ বৈষম্যের যথাযথ প্রতিকার চাই। 

উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে মেট্রোমেকার্স রায়ের মডিফিকেশন চেয়ে ১১ ডিসেম্বর চেম্বার জজ আদালতে একটি আবেদন করে। যার শুনানি ২৩ জানুয়ারিতে হবে। তারা সরকারের কাছে অনুরোধ করেন, যেন তাদের পরিবার নিয়ে নির্বিঘ্নে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ দেয়া হয়। অন্যথায় যদি তাদের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করা হয় তবে তারা আত্মহুতির মতো চরম সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হবেন না।

সাংবাদিক সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, প্লট মালিক সমিতির সভাপতি সৈয়দ মোশাররফ হোসেন, সহ-সভাপতি মো. আব্দুস সাত্তার, নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহবুবুল আলম খানসহ অনেকে।

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়