Apan Desh | আপন দেশ

কুয়াশার চাদরে ঢাকা দেশ, জনজীবন বিপর্যস্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৯:৪৫, ৩ জানুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ১১:০৩, ৩ জানুয়ারি ২০২৫

কুয়াশার চাদরে ঢাকা দেশ, জনজীবন বিপর্যস্ত

ছবি : আপন দেশ

পৌষের মাঝামাঝি এসে শীতের তীব্রতা ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। শুরুতে উত্তরাঞ্চলে থাকলেও এখন রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু ও মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ। বৃহস্পতিবার (০২ জানুয়ারি) থেকে কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে পুরো দেশ। সাতক্ষীরা ও যশোরের কিছু কিছু এলাকা ছাড়া দেশের আর কোথাও সূর্যের দেখা মেলেনি। ফলে জনজীবনে নেমে এসেছে দূর্ভোগ।

আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, এ শৈত্যপ্রবাহ আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) সকাল ৬টায় জেলার তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, এরকম কুয়াশা আরও দুই-তিন দিন থাকবে। এ সময়ে ঠান্ডা এখনকার মতোই থাকবে। এরপর কুয়াশা কেটে গেলে রাতের তাপমাত্রা ক্রমেই কমে শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে। জানুয়ারির ৬ থেকে ৭ তারিখের পর রাতের তাপমাত্রা কমে ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে আসতে পারে।

তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত তীব্র শীত থাকবে। এরপর তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বাড়বে। তখন ধীরে ধীরে শীত কমতে পারে।

নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই যে শীত বাড়তে পারে, এর ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিল আবহাওয়া অধিদফতর। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, জানুয়ারিতে এক থেকে তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি এবং এক থেকে দুটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, বুধবার থেকে চুয়াডাঙ্গা ও পাবনার ঈশ্বরদীতে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। গতকাল চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এই সময়ে ঈশ্বরদীতে সর্বনিম্ন ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদফতর। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রির আশপাশে। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে, ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বড় এলাকাজুড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়; ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।

শুক্রবার অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে দুপুর পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নদী পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি ও দিনের তাপমাত্রা ১-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি শীতের অনুভূতি থাকতে পারে। পাঁচ দিন পর দেশের উত্তরাংশে হালকা বৃষ্টি বা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি এবং এ সময়ের শেষের দিকে তাপমাত্রা কমতে পারে।

এবার গোটা ডিসেম্বর মাসে শীতের কাঁপন টের পায়নি ঢাকাবাসী। জানুয়ারির প্রথম দিনেই ঝুপ করে নেমেছে শীত। গতকাল রাজধানীর রামপুরা, বনশ্রী, বাড্ডা, মালিবাগ, মগবাজার, রামপুরা, তেজগাঁও, কারওয়ান বাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শীত রীতিমতো কাবু করে ফেলেছে মানুষকে। তীব্র ঠান্ডার কাঁপুনিতে খেটে খাওয়া মানুষের জীবন-জীবিকা চরমভাবে ব্যাহত।

রংপুর বিভাগের পঞ্চগড়, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর এবং রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ, পাবনা, নাটোরসহ সব জেলাতেই জেঁকে বসেছে শীত। হিমেল হাওয়া ও কনকনে ঠান্ডায় বিপর্যস্ত জনজীবন। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকছে ৯ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে। রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ, পাবনা, নাটোরে তাপমাত্রার পারদ নেমেছে ১০ ডিগ্রির ঘরে।

বগুড়ায় শীতের তীব্রতা বাড়ছে। দিনের বেলায় মেঘ ঢেকে রাখায় সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। পরিবহন চালকরা জানান, কুয়াশার কারণে দুই হাত পর পর দেখা যায় না এ কারণে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

শীতের দাপট অব্যাহত রয়েছে পঞ্চগড়ে। দেশের সর্ব উত্তরের সীমান্তবর্তী এ জেলায় তাপমাত্রা হঠাৎ ৮ ডিগ্রিতে নেমেছে। ফলে কনকনে শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। তবে এ শীতের মধ্যে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষরা।

শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) সকাল ৬টায় জেলার তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ১৩ ডিসেম্বর এ জেলায় মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হিমেল হাওয়ার সঙ্গে হালকা কুয়াশার সঙ্গে হাড় কাঁপানো শীত অনুভূত হয়। এতে সকালে কাজে বের হওয়া নিম্ন এ দিনমজুর, কৃষি, পাথর ও চা শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষরা পড়েন চরম বিপাকে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তীব্র শীতে দেশের গ্রামগঞ্জে অনেকেই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অন্য রোগে আক্রান্তরা শীতের কারণে বেশি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। অনেকেই শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এভাবে প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়