Apan Desh | আপন দেশ

ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কে নতুন যুগের সূচনা 

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৯:২৪, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫

ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কে নতুন যুগের সূচনা 

ফাইল ছবি

ছাত্র-জনতার বিপ্লবে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারকেও শুরু থেকেই সমর্থন দিয়ে আসছে চীন। বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যমান সুসম্পর্ক বজায় রাখার ব্যাপারেই আগ্রহী বেইজিং। সে লক্ষ্যে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সোমবার (২০ জানুয়ারি) বেইজিং যাচ্ছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। এ সফরের মধ্যে দিয়ে ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বেইজিং সফরের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের নতুন প্রেক্ষাপটে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার এবারের চীন সফর বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসায়িক, বাণিজ্যিক, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক নানা কারণে চীন বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বাড়াতে এই সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি আশা করি।

চীন বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগীও। বিশেষ করে পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে চীন আর্থিক ও প্রকৌশলগত সহযোগিতা দিয়ে আসছে বাংলাদেশকে। পাশাপাশি বিদ্যুৎকেন্দ্র, সড়ক, সেতুসহ বাংলাদেশের বড় বড় অবকাঠামো প্রকল্পে বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ রয়েছে চীনের।

এ ছাড়া সামরিক দিক থেকেও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের দশকের পর দশক ধরে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিরাজ করছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সমরাস্ত্র ও যুদ্ধ সরঞ্জামের বেশিরভাগই আসে চীন থেকে। প্রতিরক্ষা খাতবিষয়ক আন্তর্জাতিক থিঙ্কট্যাঙ্ক সুইডেনের স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশের আমদানি করা সমরাস্ত্রের ৭২ শতাংশই সরবরাহ করে চীন। 

বাংলাদেশের নৌবাহিনীর বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বেইজিং। যার উদাহরণ চট্টগ্রামে নির্মিত বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র সাবমেরিন ঘাঁটি ‘বিএনএস শেখ হাসিনা’, যেখানে ছয়টি সাবমেরিনের পাশাপাশি আটটি যুদ্ধজাহাজ অবস্থান করতে পারে। এ ছাড়া বাংলাদেশের সামরিক ইতিহাসে প্রথমবারের মতো যুক্ত হওয়া দুটি সাবমেরিনের সরবরাহকারীও চীন।

ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কের  ৫০ বছর উদযাপন : বাংলাদেশকে ১৯৭৫ সালের ৩১ আগস্ট স্বীকৃতি দেয় চীন । সে  অনুযায়ী চলতি বছর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করা হবে। এ লক্ষ্যে উভয়পক্ষই নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের কর্মসূচি নিয়েছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার চীন সফরের সময়ে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে।

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীন অনেক আগে থেকেই মধ্যস্থতা করে আসছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সঙ্গে চীন দূতিয়ালি করলেও এখনো পর্যন্ত কোনো সমাধান হয়নি। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার এ সফরে রোহিঙ্গা ইস্যু প্রাধান্য পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাণিজ্যের ভারসাম্য: চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। বিশ্বের মধ্যে চীন থেকেই সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে থাকে বাংলাদেশ। চীন থেকে বাংলাদেশ প্রতি বছর গড়ে দুই হাজার ৪০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে থাকে। বিপরীতে চীনে বাংলাদেশ রপ্তানি করে থাকে মাত্র ৬৭ কোটি ডলারের পণ্য।  

চীনা বাজারে বাংলাদেশ ৯৮ শতাংশ শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে। এরপরও চীনে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি বাড়ছে না। সে কারণে বাণিজ্য ভারসাম্যও রক্ষা করা যাচ্ছে না। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার চীন সফরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ভারসাম্য বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা উঠবে।

চীনা ঋণের সুদ হার: বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে চীন বিনিয়োগ করেছে। বিশেষ করে অবকাঠামো খাতে। বিভিন্ন প্রকল্পে সুদহার বিভিন্ন রকম। এই হার কমাতে চায় বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা চীন সফরে আলোচনায় সুদহার কমানোর বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে।  

এ নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন বলেন, আমাদের অনেক প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগ আছে। বিনিয়োগ মূলত ঋণ আকারে। তার মধ্যে কিছু প্রকল্প চলমান। এ ছাড়া আরও অর্থনৈতিক আলোচনা আছে- যেমন আমরা ঋণের শর্তাদি নিয়ে কথা বলব। এর মধ্যে রয়েছে সুদহার কমানো বা ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো।

নদী ব্যবস্থাপনা সমঝোতা সই: বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে নদী ও পানি ব্যবস্থাপনা সমঝোতা স্মারক রয়েছে। সে সমঝোতা স্মারকের মেয়াদ এরইমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সফরে এ সমঝোতা স্মারক নবায়ন করা হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের তিস্তা প্রকল্পে সহায়তা দিতে আগ্রহী চীন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সফরে বিষয়টি আলোচনায় উঠতে পারে।

আগামী ২০ থেকে ২৪ জানুয়ারি চীন সফর করবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। সফরকালে ২১ জানুয়ারি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং আইয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে করবেন । একইসঙ্গে বেইজিং ছাড়াও সাংহাই সফর করবেন উপদেষ্টা।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়