Apan Desh | আপন দেশ

শেখ হাসিনার উস্কানিতে ধ্বংস ৩২ নম্বর বাড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৯:০৮, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ১৪:৪০, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

শেখ হাসিনার উস্কানিতে ধ্বংস ৩২ নম্বর বাড়ি

ছবি : আপন দেশ

ছাত্র জনতার বিপ্লবে গত ৫ জুলাই ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন শেখ হাসিনা। সেখান থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে চলেছেন ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী। অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য অনুশোচনা না করে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন তিনি। এতে ক্ষোভ-অসন্তোষ বাড়াচ্ছে জনমনে। সবশেষ মঙ্গলবার (০৫ ফেব্রয়ারি) রাতে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে থেকে জানানো হয়, ভারতে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ সভাপতি বুধবার রাতে ছাত্রদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখবেন। তারপর থেকেই উত্তাল বাংলাদেশের ছাত্র জনতা। 

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে বিদেশে বসে বিভিন্ন ধরনের উসকানি ও বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। ফোনকল করে দেশে-বিদেশে অবস্থান করা দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন। ভার্চুয়াল মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে দলীয় কর্মসূচিতে বক্তব্য দিচ্ছেন। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তার কথিত এসব ফোনালাপ ফাঁসও হয়েছে। যেখানে নেতা-কর্মীদের উসকে দেওয়ার পাশাপাশি জুলাই-আগস্টের আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে জিঘাংসা ছড়াতে দেখা যায় তাকে।

দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসন এবং ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে যে দমন-পীড়ন ও নির্যাতন এবং হত্যাকাণ্ড চালানো হয় তার জন্য এখন পর্যন্ত তিনি জাতির কাছে ক্ষমা চাননি। এমনকি এর জন্য তার মধ্যে কোনো অনুশোচনাও নেই, যার প্রকাশ তার বক্তব্য-বিবৃতিতেও বিন্দুমাত্র উঠে আসছে না। শুধু তাই নয়, কথাবার্তা বলার ক্ষেত্রেও তার মধ্যে কোনো সতর্কতা লক্ষ্য করা যায় না।

সে ক্ষোভেই রাজধানীর ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটি ভেঙে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ছয় মাসের মাথায় গতকাল বুধবার দ্বিতীয়বারের মতো জনরোষের মুখে পড়ে বাড়িটি। 

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার পর থেকেই ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাসার সামনে এসে জড়ো হতে শুরু করেন বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা। পরে রাত ৮টার দিকে বাড়িটিতে প্রবেশ করেন তারা। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড়ও বাড়তে থাকে। সে সময় বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালানোর পর আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। একই সঙ্গে প্রবেশ মুখে স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালটি সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলা হয়েছে। পরে রাত ১০টা ৫০ মিনিটে বাড়ির সামনে বুলডোজার আনা হয়। 

সরেজমিনে দেখা যায়, সারারাত তান্ডব চলা ৩২ নম্বর ও তার আশেপাশ শান্ত। ধ্বংসস্তূপে এক দুজন মানুষ উঠে ইট সরানোর কাজ করছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা সর্বশেষ অবস্থা দেখাতে লাইভ করছেন।

এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘আজ রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর অভিমুখে বুলডোজার মিছিল কর্মসূচি দিয়ে প্রচারণাও চালানো হয় বিভিন্ন আইডি থেকে। তবে শেখ হাসিনার ভাষণ শুরু হওয়ার আগেই সেখানে জড়ো হয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। রাত ৮টার দিকে বাড়িটিতে প্রবেশ করেন তারা। এ সময় স্লোগান দিতে দিতে সেখানে ভাঙচুর চালানো হয়। 

এরপর আগুন দেওয়া হয়। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনতার ভিড়ও বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে জনতা। লাঠিসোঁটা ও শাবল হাতে ভাঙচুরে যোগ দেন অনেকে। কেউ কেউ বাড়ির দেয়াল ভাঙার চেষ্টা করেন। জানালার গ্রিল, কাঠ, ফটকের অংশ ভেঙে নিয়ে যেতে দেখা যায় কাউকে কাউকে। এ সময় ‘আবু সাঈদ-মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘জনে জনে খবর দে, মুজিববাদের কবর দে’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘জনে জনে খবর দে, আওয়ামী লীগের কবর দে’, ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ এমন নানা স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে ৩২ নম্বর এলাকা।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘স্বৈরাচার শেখ হাসিনা আজকে (গতকাল) ছাত্রলীগের ব্যানারে জাতির সামনে ভাষণ দেবে। যে আমাদের ভাইদের গুলি করে দেশ থেকে পালিয়েছে, সে কী করে কর্মসূচি ঘোষণা করে। আমরা এ দেশে বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনার কোনো অস্তিত্ব রাখব না। যারা ছাত্র হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল, সেই ফ্যাসিবাদীদের কোনো চিহ্ন বাংলাদেশের মাটিতে রাখতে চাই না। অবিলম্বে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। নিষিদ্ধ সংগঠনের কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না।’

গতকাল রাত ১১টার দিকে বাড়িটির সামনে আনা হয় ক্রেন এবং রাত সোয়া ১১টার দিক থেকে বাড়িটি ভাঙার চেষ্টা শুরু হয়। এতে কাজ না হওয়ায় আনা হয় এক্সকাভেটর। রাত পৌনে ১২টার দিকে এক্সকাভেটর দিয়ে বাড়িটি ভাঙার কাজ শুরু হয়।

এদিকে এদিন শেখ হাসিনার ঢাকার রাজনৈতিক কার্যালয় ও বাসভবন সুধা সদনেও হামলার ঘটনা ঘটেছে। পরিচয় প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় থানা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, সুধা সদনেও হামলা হয়েছে। সেখান থেকে হামলা করে বিক্ষুব্ধ লোকজন চলে গেছে। তবে হামলায় কী ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেনি সূত্রটি।

এদিকে ভাঙচুর ও হামলার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এসএন নজরুল ইসলাম কয়েকটি সংবাদমাধ্যমকে অবশ্য বলেছেন, এ ধরনের কর্মসূচির সম্পর্কে তারা অবগত ছিলেন না। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাহিনীটির একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, বিক্ষুব্ধ মানুষের সামনে তাদের করার কিছুই ছিল না।

গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেয়া শেখ হাসিনার ‘অনলাইন ভাষণের পাল্টায়’ গতকাল ঢাকায় তার রাজনৈতিক কার্যালয় সুধা সদনেও হামলার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া খুলনার ‘শেখ বাড়ি’ ও কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবউল আলম হানিফের বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। 

সিলেটে ভেঙে দেওয়া হয়েছে ডিসি অফিসের সামনের শেখ মুজিবের ম্যুরাল। চট্টগ্রামে বিক্ষোভ মিছিলসহ একাধিক জায়গায় শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙচুর করেছে ছাত্র-জনতা।

খুলনায় ভাঙা হলো ‘শেখ বাড়ি’ : খুলনায় বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে ‘শেখ বাড়ি’। গতকাল রাতে নগরীর ২৩ শেরেবাংলা রোডে অবস্থিত শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ হেলালউদ্দিন, শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল, শেখ সোহেল ও শেখ রুবেলের বাড়ির সামনে ছাত্র-জনতা অবস্থান নিয়ে ভাঙচুর করে। পরে দুটি বুলডোজার দিয়ে প্রথমে বাড়ির প্রধান ফটক ও বাউন্ডারি দেয়াল গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর বাড়ির মধ্যে গাড়ির গ্যারেজ ভেঙে দেয়া হয়। এ সময় ছাত্র-জনতা স্লোগান দেয় ‘শেখ বাড়ির আস্তানা ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘স্বৈরাচারের আস্তানা জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও’, ফ্যাসিবাদের আস্তানা জ্বালিয়ে দাও গুঁড়িয়ে দাও, আওয়ামী লীগের আস্তানা এ বাংলায় রাখব না’।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে বিদেশে বসে বিভিন্ন ধরনের উসকানি ও বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। ফোনকল করে দেশে-বিদেশে অবস্থান করা দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন। ভার্চুয়াল মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে দলীয় কর্মসূচিতে বক্তব্য দিচ্ছেন। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তার কথিত এসব ফোনালাপ ফাঁসও হয়েছে। যেখানে নেতা-কর্মীদের উসকে দেওয়ার পাশাপাশি জুলাই-আগস্টের আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে জিঘাংসা ছড়াতে দেখা যায় তাকে।

দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসন এবং ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে যে দমন-পীড়ন ও নির্যাতন এবং হত্যাকাণ্ড চালানো হয় তার জন্য এখন পর্যন্ত তিনি জাতির কাছে ক্ষমা চাননি। এমনকি এর জন্য তার মধ্যে কোনো অনুশোচনাও নেই, যার প্রকাশ তার বক্তব্য-বিবৃতিতেও বিন্দুমাত্র উঠে আসছে না। শুধু তাই নয়, কথাবার্তা বলার ক্ষেত্রেও তার মধ্যে কোনো সতর্কতা লক্ষ্য করা যায় না।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়