
আয়নাঘর পরিদর্শনে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস
বাংলাদেশের বহুল আলোচিত একটি শব্দ ‘আয়নাঘর’। ছাত্র জনতার বিপ্লবে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে এ ঘরে বছরের পর বছর মানুষকে আটকে রেখে ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর নির্যাতন করার অভিযোগ রয়েছে। সে আয়নাঘর পরিদর্শন করলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার সঙ্গে ছিলেন দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও ভুক্তভোগীদের পরিবার।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আয়নাঘর পরিদর্শনে যান প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টার জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সেখানে পাশাপাশি থাকা প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফরের (ডিজিএফআই) যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ সেল এবং র্যাব-২ এর সিপিসি-৩ এর ভেতরের সেলগুলো পরিদর্শন করেছেন তিনি।
পরিদর্শন শেষে ড. মুহাম্মদ ইউনুস বলেন, সর্বক্ষেত্রে আইয়ামে জাহেলিয়াত প্রতিষ্ঠা করে গেছে আ.লীগ সরকার। যারা এমন অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের সবার বিচার করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আয়নাঘরের বর্ণনা যিদি দিতে হয় তাহলে বলতে হয়, বীভৎস দৃশ্য। মানুষের মনুষ্যত্ববোধ যে আছে, তা জানতে বহু গভীরে যেতে হয়। যতটাই শুনি অবিশ্বাস্য মনে হয়- এটা কি আমাদের জগত, আমাদের সমাজ। আয়নাঘরে যারা নিগৃহীত হয়েছে, নির্যাতনের শিকার হয়েছে, তারা আমাদের সঙ্গে আছে।
তিনি আরও বলেন, বিনা কারণে রাস্তা থেকে তুলে এনে কতগুলো সাক্ষী হাজির করে তাদের সন্ত্রাসী জঙ্গি বানানো হত। এরকম টর্চারসেল সারা বাংলাদেশে আছে। শুনতেছি, আয়নাঘরের ভার্সন সারা বাংলাদেশে আছে। কেউ বলছে, ৭০০ কেউ বলছে ৮০০; এখনও সংখ্যা নিরূপণ করা যায়নি।
আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বিরোধী মতের বহু মানুষকে তুলে নিয়ে বিচার বহির্ভূতভাবে অজ্ঞাত স্থানে আটক রাখার অভিযোগ ওঠে, সেসব বন্দিশালার প্রতীকী নাম রাখা হয়েছে 'আয়নাঘর'।
তুলে নেয়া সেসব মানুষদের কেউ কেউ বহু দিন পর পরিবারের কাছে ফিরে বীভৎস নির্যাতনের বিবরণ দিলেও অনেকের খোঁজ এখনো মেলেনি। বিভিন্ন বাহিনীর আওতাধীন এমন আয়নাঘরের সন্ধান পাওয়ার কথা বলেছে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত 'গুম তদন্ত কমিশন'।
এর আগে, গত ৬ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়— দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমসহ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আয়নাঘর পরিদর্শনে যাবেন।
শেখ হাসিনার শাসনকালে ২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬০৫ জনকে গোপনে বন্দি করে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। আরেক তথ্যে বলা হয়, ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে ৩৪৪ জন ব্যক্তি গুমের শিকার হয়। তাদের মধ্যে ৪০ জন ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ৬৬ জনকে সরকারি হেফাজতে গ্রেফতার অবস্থায় পাওয়া গেছে।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।