Apan Desh | আপন দেশ

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের ঢল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০:৩১, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের ঢল

ছবি : আপন দেশ

মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে ভাষা শহীদদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকে স্মরণ করে জাতি গভীর শ্রদ্ধায় স্বরণ করছে শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ভোর থেকেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ঢল নেমেছে সর্বস্তরের মানুষের।

বিভিন্ন সংগঠন থেকে শুরু করে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ছুটে আসছেন শহীদ মিনারে। ফুল হাতে নিয়ে শোকের আবেশে সাদা-কালো পোশাকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত হচ্ছেন। বাবা-মায়ের সঙ্গে ছোট শিশুরাও ফুল হাতে নিয়ে এসেছে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে।

একুশের প্রথম প্রহরে ১২টা ২ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শহীদ মিনারে ফুল দেন। ফুল দেয়া শেষে ১২টা ৩ মিনিটে তিনি শহীদ মিনার ত্যাগ করেন। এর পর ১২টা ১২মিনিটে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রধান উপদেষ্টা ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।

এরপর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও অন্যান্য বিচারকবৃন্দ। প্রধান বিচারপতির পর একসঙ্গে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাবৃন্দ। তারা শহীদ বেদী ত্যাগ করলে বাংলাদেশে নিয়োজিত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক মিশনের সদস্যরা ফুলেল শ্রদ্ধা জানান।

একসঙ্গে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন তিন বাহিনী প্রধান। এরপর প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ, এম, এম, নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে অন্যান্য কমিশনারবৃন্দ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর ফুলেল শ্রদ্ধা জানান, আইজিপি, ডিএমপি কমিশনার, আনসার মহাপরিচালক, ডিজিএফআই মহাপরিচালক, বিজিবি মহাপরিচালক, র‌্যাব মহাপরিচালক, এনএসআই মহাপরিচালক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি ড. নিয়াজ আহমদ খানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও অমর একুশে উদযাপন কমিটির সদস্যরা শহীদ বেদীতে ফুল দেন। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ওই এলাকা ত্যাগ করলে সর্বস্তরের জনগণের জন্য শহীদ মিনার খুলে দেয়া হয়। এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও সাধারণ মানুষ পুষ্পার্ঘ অর্পণের মাধ্যমে ভাষা শহীদদের স্মরণ করেন।

গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় ঢল নামে সাধারণ মানুষের। পলাশী থেকে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ও জগন্নাথ হল হয়ে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এসে পৌঁছায় জনতার মিছিল। শ্রদ্ধা জানানো শেষে সব স্তরে বাংলা ভাষা প্রচলন না হওয়া, পাশাপাশি মাতৃভাষা চর্চায় নতুন প্রজন্মের অনীহা ও অনাগ্রহে হতাশা প্রকাশ করেন প্রবীণরা। তবে মায়ের ভাষা চর্চা আর মর্যাদা রক্ষায় আরও সচেতন হওয়ার প্রত্যয় তরুণদের কণ্ঠে।
 
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, শুধু আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবেই আছে কিন্তু বাংলাকে যেভাবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতা করার দরকার ছিল, বাংলাদেশ সরকার এখনো সেটি করতে পারেনি। রাষ্ট্রীয় চর্চার ক্ষেত্রে বাংলাকে মর্যাদা দিতে হবে।
 
শ্রদ্ধা জানায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। ছাত্রনেতারা অভিযোগ করেন, ফ্যাসিবাদী শাসনামলে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর অধিকার থেকেও বঞ্চিত হয়েছে অনেক ছাত্রসংগঠন। তারা বলেন, রাষ্ট্রের অবহেলায় বাংলা ভাষা এখনও অনেক পিছিয়ে।
 
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের নিয়ে পুস্পস্তবক অর্পণ করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। শ্রদ্ধা জানায় নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণ অধিকার পরিষদ। ‌বিভিন্ন দলের নেতারা বলেন, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থান একই সূত্রে গাঁথা।  
 
জাতীয় নাগরিক কমিটি মুখ্য সংগঠক বলেন, ৪৭ থেকে ৫২, ৭১ থেকে ২৪ একই সূত্রে গাঁথা। এ বাংলাদেশে ২৪- এর অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে ধারণ করে ৫২, ৭১ দ্বারা উজ্জীবিত হয়ে আগামীর বাংলাদেশ তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে গড়বে।
 
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, আগে শহীদ মিনারে ফ্যাসিস্টদের একটি পরিবেশ ছিল। অন্য কোনো ছাত্রসংগঠন শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পারতো না। আজ সব ছাত্র সংগঠন সুশৃঙ্খলভাবে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে।
 
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ২০২৪- এর ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন তাৎপর্য ও নতুন ডাক নিয়ে হাজির হয়েছে এবারের একুশ।
 
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, একুশের মূল চেতনা ছিল মাতৃভাষার অধিকার সবার অধিকার, প্রত্যেকের যার যার নিজের মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ’৫২- এর পথ ধরেই ’৭১ হয়েছে, ৭১- এর আকাঙ্ক্ষা ধরেই ’৯০ এবং ’২৪- এর রক্তস্নাত অভ্যুত্থান তৈরি হয়েছে এবং বাংলাদেশে নতুন গতিমুখ তৈরি হয়েছে। 

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও গত কয়েক বছর ধরে এ দিবসটি পালিত হচ্ছে।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়