
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস
সংস্কার দ্রুত হলে নির্বাচন হবে ডিসেম্বরে, আর সংস্কারের বেশি দরকার হলে আরও কয়েকমাস লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান। প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় সাক্ষাৎকারটি নেন বিবিসির সাংবাদিক সামিরা হুসেইন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রত্যাশা অনুযায়ি সংস্কার দ্রুত হলে নির্বাচন হবে ডিসেম্বরে, আর সংস্কারের বেশি দরকার হলে নির্বাচন হতে আরও কয়েকমাস লাগতে পারে।
চলতি বছরের শেষের দিকে নির্বাচন আয়োজন করা হলে ভারতে পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনা এবং তার দল সে নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তাও স্পষ্ট নয়। এবিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, তাদের (আওয়ামী লীগকে) সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা এটা (নির্বাচন) করতে চায় কিনা, আমি তাদের জন্য সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। নির্বাচনে কে অংশ নেবে, তা নির্বাচন কমিশন ঠিক করবে।
তিনি বলেন, শান্তি ও শৃঙ্খলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস এবং এরপর অর্থনীতি। (সাবেক সরকারের রেখে যাওয়া) এটি এক ছিন্নভিন্ন অর্থনীতি, বিধ্বস্ত অর্থনীতি। এটা এমন কিছু যেন ১৬ বছর ধরে কিছু ভয়ানক টর্নেডো হয়েছে এবং আমরা এখন টুকরোগুলো তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছি।”
বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ফেব্রুয়ারিতে শেখ হাসিনার এক ইউটিউব ভাষণের ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার বাড়িতে হামলা হয়। এমনকি শেখ হাসিনার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা এক পোস্টে আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে, অন্তর্বর্তী সরকার এ সহিংসতাকে ন্যায়সংগত বলে উপস্থাপন করছে। এ বিষয়ে বিবিসি ড. ইউনূসের কাছে জানতে চাইলে, তিনি তার সরকারের অবস্থানকেই সমর্থন করেন।
আরও পড়ুন<<>>আ.লীগ দেশকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে গেছে: প্রধান উপদেষ্টা
আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের সম্পত্তি নষ্ট করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আদালত আছে, আইন আছে, থানায় অভিযোগ করা যায়। আপনি কেবল বিবিসির প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ জানিয়ে বসে থাকবেন না, থানায় গিয়ে অভিযোগ করুন এবং দেখুন আইন কীভাবে কাজ করে।
বিবিসি জানিয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর ক্ষমতাচ্যু হওয়ার পর নতুন সরকারের দায়িত্ব নিতে বলা হলে তিনি “চমকে” গিয়েছিলেন বলে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন নেতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, আমার কোনও ধারণা ছিল না যে— আমি সরকারের নেতৃত্ব দেব। আমি এর আগে কখনও সরকারি কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করিনি এবং এরপরও পরিস্থিতি বুঝে ঠিকভাবে কাজ করতে হয়েছিল।
নোবেল পুরস্কার বিজয়ী এ অর্থনীতিবিদ বলেন, একবার এটি স্থির হয়ে গেলে আমরা অন্যান্য কিছু জিনিস সংগঠিত করতে শুরু করি। যার মধ্যে— আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করা এবং অর্থনীতি ঠিক করা দেশের জন্য অগ্রাধিকার ছিল।
বিবিসি বলছে, শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন এবং নিপীড়কের মতো বা নির্মম উপাযে বাংলাদেশ শাসন করেন। তার আওয়ামী লীগ সরকারের সদস্যরা নির্মমভাবে ভিন্নমতের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চালায়। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে হাসিনার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের হত্যা ও জেলে পাঠানোর ব্যাপক অভিযোগ ছিল।
তবে গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বৗাপক গণআন্দোলন ও বিদ্রোহ হাসিনাকে ক্ষমতা ছাড়তে ও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে। বিক্ষোভকারীদের আহবানে ড. ইউনূস নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দিতে বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।