Apan Desh | আপন দেশ

মেধার স্বাক্ষর রেখে এগোচ্ছে নারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ৮ মার্চ ২০২৫

মেধার স্বাক্ষর রেখে এগোচ্ছে নারীরা

প্রতীকী ছবি

বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের এ  কথা আজও সত্য,বরং সময়ের সাথে এর প্রাসঙ্গিকতা আরও বেড়েছে।

শত বাধা বিপত্তি পেড়িয়ে নারীরা এখন ঘড়ে-বাইরে পুরুষের সাথে সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষাঙ্গন থেকে কর্মক্ষেত্র, রাজনীতি থেকে বিজ্ঞান, মহাকাশ গবেষণা থেকে শুরু করে কর্পোরেট নেতৃত্ব, আধুনিক শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম - সব জায়গাতেই নারী তার মেধা ও শ্রম দিয়ে নিজের অবস্থান তৈরি করে নিচ্ছে। নিপুণ হাতে সংসার সামলানোর পাশাপাশি বিভিন্ন পেশায় সাফল্য অর্জন করছে। কিন্তু এই সংগ্রামের পথ কি একেবারেই সহজ? না। এখনো নারীরা প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছেন- পুরুষের পাশাপাশি নিজেদের প্রাপ্য মর্যাদা, অধিকার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। 

বাংলাদেশে নারীশিক্ষার হাড় বেড়েছে, কর্মসংস্থানেও তাদের অংশগ্রহণ  উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যানের ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, চিকিৎসা, আইন, কৃষি শিক্ষাসহ দেশের পেশাগত শিক্ষায় যত শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে তার মধ্যে ৬১ শতাংশ বেশি নারী। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে নারী শিক্ষার হারও বেশি। নারী আজ শুধু শিক্ষিকা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, উদ্যোক্তা গার্মেন্টস কর্মী হয়েই সমাজের মূলধারায় অবদান রাখছেন না বরং এর মধ্যে কেউ কেউ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরেছে দেশের পতাকা।   

গত বছরের টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে বিশ্ব দরবারে দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা সাবিনা খাতুন, ঋতুপর্ণা চাকমা ও মনিকা চাকমারা। এ বছর তারা একুশে পদক জিতেছে। 

এছাড়াও বাংলাদেশের নারীরা আজ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির শীর্ষস্থানে পৌঁছেছেন। বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরী আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছেন ভ্যাকসিন গবেষণায়। মার্কিন সাময়িকী টাইমস-এর করা বিশ্বের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় এ বছর স্থান পান বাংলাদেশের স্থপতি মেরিনা তাবাসুম তার নকশা করা সুন্দর স্থাপত্যের জন্য। এছাড়াও ২০২০ সালে  ব্রিটিশ সাময়িকী প্রসপেক্ট এর ৫০ চিন্তাবিদের মধ্যে শীর্ষ ১০ জনে স্থান করে নিয়েছিলেন তিনি।

সাবরিনা রশিদ সেওঁতি ২০২৩ সালের ১১ আগস্ট  টরন্টোতে আইডব্লিউএ ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াটার কংগ্রেস’ ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সম্মানজনক ‘ইউথ লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ পান। তিনি তার তিন বন্ধুকে নিয়ে বিভিন্ন পানি সমস্যার সমাধানের জন্য ‘টেট্রা’ নামের একটি স্টার্ট-আপ শুরু করেন। বর্তমানে কানাডায় পানিসম্পদ প্রকৌশলী হিসেবে বিভিন্ন পানি, সেতু, বন্যাবিষয়ক প্রজেক্টে কনসালট্যান্ট হিসেবেও কাজ করছেন। বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও নতুন উদ্ভাবনের পাশাপাশি সংস্কৃতিক্ষেত্রে নিজেদের দক্ষতার প্রমাণ দিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গৌরবময় স্থান করে নিয়েছে নারীরা। 

গ্রামীণ অর্থনীতিতেও নারীদের অবদান অপরিসীম। গার্মেন্টস খাত থেকে শুরু করে কৃষিকাজ, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা কার্যক্রম সব জায়গাতেই নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের কল্যাণে অনেক নারী ঘরে বসেই অনলাইনে ব্যবসা চালাচ্ছেন, হয়ে উঠছেন স্বাবলম্বী।  

নারী যেন এক দশভুজা দুর্গা। নিপুণ হাতে একদিকে সংসার সামলাচ্ছে, সন্তান প্রতিপালন করছে অন্যদিকে দক্ষতার সঙ্গে চাকরি বা ব্যবসা করে অর্থ উপার্জন করছে।  কিন্তু নারীর এ এগিয়ে যাওয়ার পথে আজও প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এখনও নারীরা সমান কাজ করে পুরুষদের তুলনায় বেতন কম পায়। রাস্তাঘাট, গণ-পরিবহন থেকে কর্মক্ষেত্রে সব জায়গাতেই নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সোশ্যাল মিডিয়া খুললেই দেখা যায়- নারী নির্যাতন, শিশু ধর্ষকের মতো জঘন্য অপরাধ বেড়েই চলছে। 

কর্মক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, সামাজিক ট্যাবু, পারিবারিক দায়িত্ব সব মিলিয়ে নারীর জীবন এক বহুমুখী সংগ্রামের গল্প। এত প্রতিকূলতাও সত্ত্বেও নারীরা আজ থেমে নেই, তারা এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছর ৮ মার্চ- আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন করা হয়। কিন্তু নারী দিবস শুধু উদযাপনের দিন নয় বরং নতুন করে প্রতিশ্রুতি নেবার দিন - প্রতিটা স্তরে নারীর অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়