Apan Desh | আপন দেশ

‘রাজধানীর ৯৫ স্ট্যান্ডে দৈনিক দুই কোটি টাকা চাঁদা নিচ্ছে বিএনপি-পুলিশ’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:০২, ১১ মার্চ ২০২৫

আপডেট: ২০:১৬, ১১ মার্চ ২০২৫

‘রাজধানীর ৯৫ স্ট্যান্ডে দৈনিক দুই কোটি টাকা চাঁদা নিচ্ছে বিএনপি-পুলিশ’

ফাইল ছবি

রাজধানীতে ৫৩টি পরিবহন টার্মিনাল ও স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি হচ্ছে। টাকার অঙ্কে প্রতিদিন দুই কোটি টাকার বেশি। আগে টোকেনের মাধ্যমে এ চাদাবাজি করতো পতিত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। আর ৫ আগস্টের পর ওই চাঁদা উত্তোলন করছে রাজনৈতিক দল বিএনপি, পুলিশসহ সমিতির নেতাকর্মীরা।

সমিতির নেতারা আবার তাদের নামিয় চাঁদার অংশ ডোনেশনের নামে দিচ্ছেন নবগঠিত রাজনৈতক সংগঠনে। উত্তোলিত টাকা যাচ্ছে বিভিন্ন ব্যক্তির পাশাপাশি সমিতির নামেও। গোয়েন্দার এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। দুদকের তদন্তেও উঠে এসেছে নেতাদের নাম। গোয়েন্দাদের ভাষ্যমতে, সরকার পরিবর্তনের পর রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় বিভিন্ন পরিবহন টার্মিনাল ও স্ট্যান্ডে প্রতি মাসে সাড়ে ৬৬ কোটি টাকার বেশি চাঁদাবাজি চলছে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, বিএনপিতে চাঁদাবাজদের কোনো জায়গা নেই। কেউ যদি এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়ায়, তার দায় বিএনপি নেবে না। এদিকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। দলীয় সূত্রের দাবি, চাঁদাবাজি কথাটি তারা উল্লেখ করছে না। একই কারণে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। এছাড়াও বিএনপি জমানায় যারা সড়ক ও স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণ করতেন তারা এখন সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। সাধারণ চালক ও যানবাহন মালিকরা বলছেন, চাঁদাবাজি বরং বেড়েছে। শুধু গ্রহিতা ও গ্রহণের ধরণ বদল হয়েছে। 

আরও পড়ুন<<>> জামালপুর জনস্বাস্থ্যের এলিট দুর্নীতিবাজ ‘সুলতাননামা‘

পুলিশ সদর দফতর সূত্র বলছে, চাঁদাবাজি বাড়ার তথ্য জানার পর তা যাচাই করছে তারা। সে সঙ্গে দেশের সব টার্মিনাল ও স্ট্যান্ডের পাশাপাশি মার্কেটেও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে পোশাক ও সাদা পোশাকে কাজ করছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। 

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) একাধিকসূত্র বলছে, ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীর বিভিন্ন টার্মিনালকেন্দ্রিক প্রতিদিন কোটি টাকার বেশি চাঁদাবাজির তথ্য পেয়েছে তারা। আবার দেশের পরিবহন খাতে মাফিয়াদের লাগামহীন চাঁদাবাজির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার তথ্য দুদকের তদন্তেও উঠে এসেছে। পরিবহন সাম্রাজ্য থেকে চাঁদাবাজির অবৈধ টাকা পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে বিদেশে পলাতক মাফিয়াদের কাছে। বিদেশে পলাতক থাকা কিছু শীর্ষ সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে এ ধরনের তথ্য পেয়ে তদন্ত অব্যাহত রেখেছে তারা।

টার্মিনালে চলমান চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) নজরুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় টার্মিনালকেন্দ্রিক চাঁদাবাজির তথ্য পেয়ে যাচাই চলছে।

পুলিশ বলছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তির নামের পাশাপাশি সমিতির নামেও চাঁদাবাজির তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কিছু অসাধু ব্যক্তির বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ও তদন্তে গুরুত্ব পাচ্ছে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীতে ৫৩টি পরিবহন টার্মিনাল ও স্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন দুই কোটি টাকার বেশি চাঁদাবাজি হচ্ছে। সে হিসাবে প্রতি মাসে সাড়ে ৬৬ কোটি টাকার বেশি চাঁদাবাজি হয়। আগে সাবেক সরকারের লোকজন চাঁদাবাজিতে জড়িত ছিল। এ জন্য টোকেন, রসিদ ও স্টিকার ব্যবহার করত তারা। হাত বদলের পর এখন নানা কৌশলে চাঁদাবাজি চলছে। এখন ধরা পড়ার ঝুঁকি এড়াতে চাঁদাবাজরা নৈশপ্রহরী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও লাইনম্যানের বেতন পরিষদের নামে অভিনব পদ্ধতিতে চাঁদাবাজি করছে। চাঁদার টাকার লেনদেন হচ্ছে নগদ ও বিকাশ ব্যবহার করে।

দীঘদিন ধরে টার্মিনালের পর কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন মার্কেট ও ফুটপাতকেন্দ্রিকও চাঁদাবাজি চলছে। এত কিছুর পরও কার্যত চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। মহাখালীসহ আশপাশের সড়কগুলোতেও চাঁদাবাজি চলছে। গাবতলী ও তেজগাঁও টার্মিনালকেন্দ্রিকও চাঁদাবাজি চলছে।

আরও পড়ুন<<>> বেনামি প্রতিষ্ঠানের আড়ালে মোরশেদ আলমের শত শত কোটি টাকা পাচার 

সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সূত্র বলছে, গত ১১ ফেব্রুয়ারি জনপথ অধিদফতরে এ ধরণের একটি প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগের শাসনামলে চাঁদাবাজির একটি ব্যবস্থা কায়েম করেছিলেন দলটির নেতাকর্মীরা। সে সময় একটা টোকেন ব্যবহার করে চাঁদাবাজি করতেন তারা। সেটির চিহ্ন রয়ে যেত কাগজে। সরকার পতনের পর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা এ ব্যবস্থা দখলে নেন। তাদের সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও চাঁদাবাজি করছেন।

বর্তমানে রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকায় বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, পিকআপ, হিউম্যান হলার (লেগুনা) এবং অটোরিকশাসহ ৯৫ ধরনের টার্মিনাল এবং স্ট্যান্ড রয়েছে জানিয়ে গোয়েন্দা সূত্র বলছে, এর মধ্যে রাজধানীতেই রয়েছে ৬৬টি টার্মিনাল ও স্ট্যান্ড। আন্ত:জেলা বাসস্ট্যান্ড এবং ৩৭টি লেগুনা স্ট্যান্ড রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে সাতটি স্থানীয় বাসস্ট্যান্ড, পাঁচটি পিকআপ স্ট্যান্ড, চারটি স্থানীয় ও চারটি অটোরিকশা স্ট্যান্ড, তিনটি আন্ত জেলা বাস টার্মিনাল, তিনটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড, দুটি ট্রাক স্ট্যান্ড এবং একটি মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড।

ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দৈনিক দুই কোটি ২১ লাখ টাকার চাঁদাবাজির মধ্যে এক কোটি ১৭ লাখ টাকা চাঁদাবাজি হয় পরিবহন মালিক সমিতির নামে। সংস্থার পক্ষ থেকে এমন ১১ ধরণের পেমেন্টের প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দূরপাল্লার ও মাঝারি পাল্লার বাস, ট্রাক, পিকআপ এবং কাভার্ড ভ্যান, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, হিউম্যান হলার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা এমনকি রিকশা থেকেও দুর্বৃত্তরা চাঁদাবাজি করছে।

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়