Apan Desh | আপন দেশ

ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসনে মুসলিম নিপীড়নের মাত্রা চরমে

মারুফ বিল্লাহ

প্রকাশিত: ১৬:৫৯, ২৩ মার্চ ২০২৫

আপডেট: ২০:২২, ২৩ মার্চ ২০২৫

ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসনে মুসলিম নিপীড়নের মাত্রা চরমে

প্রতীকী ছবি

ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসনব্যবস্থায় মুসলমানদের ওপর নিপীড়ন ও বৈষম্যের মাত্রা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে সংখ্যালঘু মুসলমানরা ক্রমাগত হুমকি, অত্যাচার ও নাগরিক অধিকার খর্বের মুখে পড়ছেন। মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি রাষ্ট্রীয় বৈষম্য ও সহিংসতা দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

ভারতের সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে। তবে নরেন্দ্র মোদির ভারত বর্তমানে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। মোদির শাসনে মুসলমানরা ক্রমেই দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে উঠছে। মোদির শাসনে মুসলিমরা ক্রমাগত হয়রানি ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। সরকারের আনুগত্য প্রকাশ করেন না করলে বাড়ছে দুর্ভোগ।

ভারতে সংখ্যালঘু নিপীড়ন নতুন কিছু নয়। তবে ২০১৪ সালের পর থেকে এটি নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। বিশেষ করে ২০১৫ সালের মোহাম্মদ আখলাক হত্যার ঘটনা নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছিল।

২০১৫ সালে মোহাম্মদ আখলাকে দাদরিতে গরুর মাংস রাখার মিথ্যা অভিযোগ তুলে একদল উগ্রবাদী তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। ২০১৭ সালে মোহাম্মদ আফরাজুলকে ‘লাভ জিহাদ’এর অভিযোগ তুলে রাজস্থানে এক মুসলিম শ্রমিককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ভিডিও ধারণ করা হয়। ঘাতককে বানানো হয় নায়ক।

২০১৮ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় মাওলানা ইমদাদুল রশিদির কিশোর সন্তান নিহত হয়। অথচ প্রশাসন কার্যত নীরব থাকে। ২০২১ সালে জামাল মোমিনের মাথায় টুপি ও দাড়ি থাকার কারণে দিল্লির একটি ট্রেনে তাকে মারধর করা হয়। এ সময় পাকিস্তানে চলে যেতেও বলা হয়।

এ ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন নয়। বরং একটি সুপরিকল্পিত সন্ত্রাসের অংশ। যার উদ্দেশ্য মুসলমানদের মধ্যে ভয় ছড়িয়ে দেয়া। তাদের নাগরিক অধিকার খর্ব করা। তাদের ভারতের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা।

গেরুয়া পতাকা একসময় ভারতের আধ্যাত্মিকতার প্রতীক ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির প্রতীক হয়ে উঠেছে। মসজিদ, মুসলিমদের দোকান-বাড়িঘর, এমনকি আদালতের ভবনেও উগ্রপন্থীরা এ পতাকা উড়িয়ে আধিপত্যের বার্তা দিচ্ছে।

২০২২ সালে কর্ণাটকের কলেজে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরার অধিকার খর্ব করা হয়। অথচ একই সময়ে গেরুয়া উত্তরীয় পরা হিন্দু শিক্ষার্থীদের উগ্র স্লোগান দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়।

ভারতে মুসলমানদের বারবার প্রমাণ করতে বলা হয় যে তারা দেশপ্রেমিক। তারা পাকিস্তানের সমর্থক নয়। অথচ সংখ্যাগরিষ্ঠদের কখনোই দেশপ্রেমের পরীক্ষা দিতে হয় না।

আরও পড়ুন>>>ঈদের আনন্দে মাতবে বিশ্ব মুসলিম

সংখ্যালঘুরাই কেন সম্প্রীতির দায় বইবে? কেন মুসলিমদের সবসময় হোলি ও দিওয়ালিতে অংশ নিতে বলা হয়। অথচ মসজিদে ঈদ উদযাপনকে সন্দেহের চোখে দেখা হয়?

সম্প্রতি বিজেপি নেতা সুভেন্দু অধিকারী ঘোষণা দিয়েছেন যে তিনি মুসলমানদের ভোট চান না। এটি কেবল রাজনৈতিক বক্তব্য নয়। বরং বিজেপির দীর্ঘমেয়াদি কৌশলেরই অংশ।

ভারতের রাজনীতিতে এখন মুসলমানদের ভোটকে অপ্রাসঙ্গিক করে তোলার চেষ্টা চলছে। মোদি সরকার মুসলমানদের যেকোনো রাজনৈতিক প্রভাব খর্ব করতে পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিচ্ছে। স্মরণ করা যেতে পারে শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের কথা। তিনিও একসময় বলেছিলেন যে তিনি তামিলদের ভোট চান না। কিন্তু কী হয়েছিল? জনগণ তার প্রাসাদে ঢুকে পড়েছিল। তিনি দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন।

ইতিহাস বলে অত্যাচারী শাসনব্যবস্থা কখনো চিরস্থায়ী হয় না। একসময় ব্রিটিশদেরও মনে হয়েছিল যে ভারত কখনো স্বাধীন হবে না। একসময় মনে করা হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবৈষম্যব্যবস্থা চিরস্থায়ী। কিন্তু পরিবর্তন এসেছে।  একটি কথা নিশ্চিত পরিবর্তন সবসময় হঠাৎ করেই আসে। যখন মানুষ ভয় জয় করে তখনই ইতিহাস নতুন পথ তৈরি করে।

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়