Apan Desh | আপন দেশ

মাদরাসা অধিদফতরের ইসলামবিরোধী নির্দেশনায় তোলপাড়

নিজস্ব প্রতিবদেক

প্রকাশিত: ১৫:২৩, ১২ এপ্রিল ২০২৫

মাদরাসা অধিদফতরের ইসলামবিরোধী নির্দেশনায় তোলপাড়

ফাইল ছবি

বর্ষবরণ উদযাপনের অংশ হিসেবে দেশের সব মাদরাসায় দুই দিনব্যাপী বাংলা নববর্ষ উদযাপনের নির্দেশ দিয়েছে মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতার। এতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে দেখা দিয়েছে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ।

ইসলামবিরোধী এ নির্দেশনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। মাদরাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ইমানবিধ্বংসী উৎসব পালনের নির্দেশনা দেয়ায় মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালককের (ডিজি) অপসারণ দাবি করেছেন সচেতন মহল।

বুধবার (১০ এপ্রিল) মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতরের এক অফিস আদেশে বলা হয়েছে, চৈত্র সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ এবং আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর নববর্ষ উপলক্ষ্যে সব মাদরাসায় নিজস্ব ব্যবস্থাপনা উৎসবমুখর পরিবেশে ও সাড়ম্বরে এ উৎসব পালন করতে হবে। এ আদেশ দেয়ার পর তোলপাড় শুরু হয় মাদরাসা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে। ক্ষোভে ফুঁসছেন সংশ্লিষ্টরা।

ওই আদেশে আরও বলা হয়েছে, জাতীয় চৈত্র সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ এবং চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন উপলক্ষ্যে মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতরের আওতাধীন মাদরাসাসমূহে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎসবমুখর পরিবেশে ও সাড়ম্বরে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠান উদযাপনের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

বিষয়টি নিয়ে মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতরের প্রশাসন শাখার উপপরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে একটি নির্দেশনা জারি করে সব মাদরাসায় দুই দিনব্যাপী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চৈত্র সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ উদযাপন করতে বলা হয়েছে। সে আলোকে তিনটি সরকারি ও অন্যান্য বেসরকারি মাদরাসার প্রিন্সিপাল, সুপার ও এবতেদায়ি প্রধানদের চৈত্র সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ উদযাপনের নির্দেশনা দিয়ে আদেশ জারি করা হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, চৈত্র সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হয় মূলত হিন্দুয়ানী সংস্কৃতিতে। ইসলামের বড় পাপ শিরক মিশ্রিত এ উদযাপন থেকে দূরে থাকা প্রতিটি মুসলিমের জরুরি দায়িত্ব। বর্তমান বহুত্ববাদী সরকার ও এর সংস্কৃতি উপদেষ্টা এ বছর বর্ষবরণ জাতীয়ভাবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, মুসলিমদের ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাদরাসা ছাত্রদেরও এসব উৎসব সাড়ম্বরে পালনের নির্দেশ দিয়ে চরম ধৃষ্টতা দেখানো হয়েছে। যা কখনও মেনে নেবে না তৌহিদী জনতা।

মাদরাসা অধিদফতরের ডিজি বর্ষবরণের উৎসব পালনের নির্দেশ দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ উসকে দিয়েছেন। ইসলামবিরোধী এ নির্দেশনায় চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে তার দায়ভার কে গ্রহণ করবে?- এমন প্রশ্ন তুলেছেন নেটিজেনরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিগত শতাব্দীর শেষ দশকে ছায়ানটি চেতনার সাংস্কৃতিক কর্মীরা পহেলা বৈশাখের উৎসবে ‘বাঙালী’ সমাজে উদযাপিত হওয়া ১২ মাসে ১৩ পার্বনকে উৎযাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সন্দেহ নেই বাংলাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীগণ তাদের ১২ মাসে অনুষ্ঠিত ১৩ পূজাকে ঘিরে ১৩টি পার্বন বা উৎসব পালন করে থাকে। বাঙালী হিন্দুদের এ উৎসবকে ‘বাঙালী সংস্কৃতি’ বলে ব্যাপকভাবে উৎযাপনের ও প্রসারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে মুসলমানের ঘরে জন্ম গ্রহণকারী ও মুসলমান নাম ধারণকারী কিছু রবীন্দ্রপ্রেমী সংস্কৃতি কর্মী। অথচ এদেশের অধিবাসী ৯০ শতাংশ মুসলমানের যেসব উৎসবে সমগ্র বাংলাদেশ জেগে ওঠে সেই ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, মুহাররম, ঈদে মিলাদুন্নবী প্রভৃতি উৎসব উদযাপনে ব্যাপারে তারা থাকে সম্পূর্ণ নির্বিকার।

এ বছর এটিএন নিউজের কল্যাণে দেশবাসী গাজীপুরের একটি প্রত্যন্ত গ্রামের চৈত্র সংক্রান্তির অনুষ্ঠান সরাসরি দেখার সুযোগ পেয়েছেন। যারা দেখেছেন তাদের কাছে বিনীত প্রশ্ন, এই অনুষ্ঠান কি বাঙালী সংস্কৃতি বলে বাঙালী মুসলমানদের সমাজে উদযাপন যোগ্য? উল্লিখিত আলোচনায় নিঃশঙ্কভাবে প্রমাণিত হয়, এটি হিন্দুদের একটি বিশেষ ধর্মীয় উৎসব। উৎস, ইতিহাস ও পালন পদ্ধতি সবকিছু প্রমাণ করে এটি হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসব। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তা পালনে মুসলমানদের মনে কোনো দ্বিধা থাকতে পারে না। কিন্তু চৈত্র সংক্রান্তি বা চড়কপূজাকে ‘বাঙালী সংস্কৃতি’ বলে বাংলাদেশী মুসলমানদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

এবারে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের যে সমস্ত উৎসব মাদরাসায় ব্যাপকভাবে উদযাপন করা নির্দেশ দিয়েছে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড সেগুলো কী ও কিভাবে পালিত হয় তা কি কর্তৃপক্ষের জানা নেই? এমন গুরুতর প্রশ্ন তুলে মাদরাসা অধিদফতরের ডিজির অপসারণ দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

জৈষ্ঠ্য সাংবাদিক, গবেষক ও কলামিস্ট মেহেদী হাসান পলাশ লিখেছেন, সরকার ও মাদরাসা অধিদপ্তর চৈত্র সংক্রান্তি বিজু বৈসু সাংগ্রাই প্রভৃতি উৎসব পালনের নামে মাদরাসার মুসলিম ছাত্রদের দিয়ে শিব ও কালী পূজা, গঙ্গা পূজা, বুদ্ধ পূজা করাতে চাইছে? মাদরাসা মুসলিম ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মুসলিম ধর্ম মতে মূর্তিপূজা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ। অথচ মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর মাদরাসা ছাত্রদের দিয়ে উৎসবের নামে সেই পূজা পার্বণ উদযাপনের মধ্য দিয়ে মুসলিম ছাত্রদের শিরকের পথে ঠেলে দিল।এটাই কি বহুত্ববাদী দর্শন ও সাংস্কৃতিক রূপরেখা? বাঙালি সংস্কৃতির বরণ ডালায় তুলে সেগুলোকে মুসলিম সমাজের মধ্যে পরিবেশন কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

ইউসুফ আল মাহমুদ লিখেছেন, পহেলা বৈশাখ, চৈত্র সংক্রান্তি ও আরো অন্যান্য শিরকী উৎসব থেকে মুসলিমদের দূরে থাকা আবশ্যক। এ আদেশের মাধ্যমে বর্তমান ডিজি মুরতাদ হয়ে গেছে। অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

ক্ষোভ জানিয়ে আলাউদ্দিন সৌরভ লিখেছেন, হাসিনার আমল ও এখনকার মধ্যে পার্থক্য কোথায়! এ সব কিছুর সাথে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এ ধর্মনিরপেক্ষ ও বহুত্ববাদী ডিজির মাদ্রাসা শিক্ষা পরিচালনার কোন যোগ্যতা নাই। তাকে দ্রুত অপসারণ করা হোক।

শহিদুল ইসলাম লিখেছেন, চৈত্র সংক্রান্তি ও নব বর্ষে ইসলাম বিরোধী কার্যক্রম মাদ্রাসাসমূহে পালনে নির্দেশনা জারি করে মাদ্রাসা অধিদফতর কর্তৃপক্ষ বিগত অনৈসলামিক সরকারের সীমা অতিক্রম করেছে। ধিক্কার জানায় মাদ্রাসা অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষকে। এগুলো শিরক। বর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের ইমানী দায়িত্ব।

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়