
ফাইল ছবি
রাষ্ট্র নিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন আটক হয়েছিলেন গত ৬ ফেব্রুয়ারি। পরদিন ছাড়াও পেয়েছেন। মাস গড়ানোর পর ফের সরকারকে কোচা দিলেন এ অভিনেত্রী। লিখেছেন ভাতরীয় গণমাধ্যম আননন্দ বাজারে। এমন দমবন্ধ করা, সব কিছু অবরুদ্ধ করা পহেলা বৈশাখ দেখিনি, কখনও দেখব বলে আশাও করিনি বলে মন্তব্য করেছেন কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের দ্বিতীয় স্ত্রী, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের শাশুড়ী ও অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন।
আনন্দবাজার অনলাইনে বৈশাখ নিয়ে শাওন লেখেন, ‘আসলে ছোটবেলার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে রমনা বটমূল, ছায়ানটের গান। ছোটবেলায় সব সময় যেতাম সেখানে। ছায়ানটের গান দিয়ে শুরু হত দিন। সকলে মিলে রাস্তায় বেরাতাম রং-বেরঙের মুখোশ কিনতাম, যে দিকে তাকাতাম সেদিকেই লাল-সাদা। মনে হত গোটা বাংলাদেশটা ঝলমল করছে। তেমন একটা ঝলমলে শহরে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপনটা এমন হয়ে যাবে, সেটা ভাবিনি।’
অভিনেত্রী লেখেন, ‘এ বারের পহেলা বৈশাখ অন্য বারের তুলনায় একেবারেই আলাদা। প্রতি বছর আমার দেশে যে ভাবে এই উৎসবটা পালিত হত, সে ভাবে আর হবে না, খুবই অপ্রত্যাশিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে বাংলা নববর্ষে ঢাকায় যে শোভাযাত্রা বার হয়, সেটারও নাম বদল হয়েছে। ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র সঙ্গেই পরিচিত আমরা। যদিও এ বছর সেটা ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ বলেই পরিচত হবে। তবে নাম বদলের নেপথ্যে যে রাজনীতির ভূমিকা আছে, তা আঁচ করতে পারি। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে নামবদল হলেই যে আনন্দ নষ্ট হবে, সেটা কিন্তু মনে করতাম না। কিন্তু যখনই দেখলাম, প্রতি বছর আমাদের যে শোভাযাত্রা হয় সেটা চারুকলা বিভাগের ছাত্রেরা আয়োজন করে। কিন্তু এবার ব্যাপারটা ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এর মধ্যে সরকারের হস্তক্ষেপ দেখতে পাচ্ছি। আসলে সংস্কৃতি কিংবা ঐতিহ্য উদ্যাপনে সরকারের হস্তক্ষেপ আমরা আশা করি না। সরকারের এই হস্তক্ষেপের কারণে প্রতি বার যে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ হয়, সেটা এবার হবে না বলেই আমার ধারণা। আমি প্রতি বছর সশরীরে শোভযাত্রায় থাকতে না পারলেও অন্তত টেলিভিশনের পর্দায়, কিংবা সমাজমাধ্যমে সবটা দেখতাম। জানি না, এবার তেমন কিছু হবে কি না! তবে এ বছর উদ্যাপন স্বতঃস্ফূর্ত না হলে বিষয়টা একজন বাঙালি হিসেবে ও শিল্পী হিসেবে দুঃখজনক। আমি নিজে শিল্পী। কিন্তু বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের শিল্পী জগৎ ও সংস্কৃতিমনস্কদের নিয়ে নিজেই কেমন সন্দিহান হয়ে গিয়েছি।’
শাওন লেখেন, ‘সংস্কৃতি জগতের বহু নামীদামি মানুষকেই দেখলাম এই পটপরিবর্তনের সঙ্গে নিজেরাও বদলে গিয়েছেন। একটা কথা উল্লেখ করতে হয়, সম্প্রতি আমাদের এখানে মহিলা সমিতিতে ‘শেষের কবিতা’ নাটকটি মঞ্চস্থ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শুনলাম, জনতার প্রতিবাদের মুখে নাকি সেটা করা সম্ভব হয়নি। একদল মানুষ যেখানে নাটক মঞ্চায়ন রুখতে তৎপর, সে ক্ষেত্রে আমার প্রশ্ন- আমাদের সাংস্কৃতিক জগতের অনেকেই আছেন যারা বর্তমান সরকারের সঙ্গে যুক্ত, তারা কেন কিছু দেখছেন না? তারা কি দেখেও না দেখার ভান করছেন? আসলে সব থেকে মনখারাপের জায়গা হল, একজন শিল্পী হয়ে অন্য শিল্পীর জন্য একাত্ম হতে আর দেখছি না। হয়তো বলতে দেওয়া হচ্ছে না। আসলে বলতে গেলে মুখ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। তাই আজকাল আমিও খুব বেশি কিছু বলি না।’
তিনি আরও লেখেন, ‘চারপাশে নাম বদল নিয়ে এখন নানা কথা শুনছি। তবে এর বীজটা মনে হয় আগে থেকেই রোপণ করা হয়ে গিয়েছিল। আসলে এখন নামের মধ্যেও ধর্ম খুঁজে বের করা হচ্ছে। ‘আনন্দ’ শব্দটার মধ্যেও চাইলে অনেক কিছু খুঁজতে পারেন। আমার ধারণা, একটা বিশেষ শ্রেণিকে তুষ্ট করতেই এই নাম বদল। কারণ তারা ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামটা পছন্দ করে না। তাঁরা অনেক দিন ধরেই চাইছিলেন, এই বদলটা হোক। রাজনৈতিক পটভূমি বদলালে কিছু না কিছু রদবদল হয়ই। কিন্তু আমরা যা ভেবেছিলাম, তার থেকে অনেক বেশি পরিবর্তন হয়েছে।’
তিনি লেখেন, ‘অনেকেই হয়তো পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একটা বিভাজন লক্ষ করতে পারবেন। আগে এখানে বাঙালি সত্তা প্রবল পরিমাণে ছিল, কিন্তু এখন অবশ্য একটা বিভাজন খুবই স্পষ্ট।’
অভিনেত্রী লেখেন, ‘যদিও এত কিছুর মধ্যে আমি নিজের পরিবার ও কিছু প্রিয় মানুষকে নিয়ে উৎসব উদ্যাপন করব। সবটাই বাড়িতে। যে কোনো উৎসবের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে থাকে। তবে ইলিশ-পান্তা খাবার পক্ষপাতী নই সে ভাবে। বরং অনেক ধরনের ভর্তা ও দেশীয় মাছ খেতে ভালবাসি। আসলে এই দিনটাতে ঘরটাকেও সে ভাবে সাজাব। নিজের ও ঘরের মধ্যে সেই দেশীয় সাজকেই অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি।’
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।