
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’
বাংলা নববর্ষ বরণে পয়লা বৈশাখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজনে প্রতি বছর শোভাযাত্রা বের করা হয়। যার নাম এ বছর ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা থেকে বদলে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ করা হয়। এরপর থেকে পক্ষে বিপক্ষে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। কারণ ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা' নামে ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত।
তাই ‘মঙ্গল শোভাযাত্রার’ নাম পরিবর্তন করে 'বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা' রাখায় ইউনেস্কোর স্বীকৃতি ধরে রাখতে নতুন করে আবেদন ও অনুমোদনের প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
ইউনেস্কোর বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) বিবিসি বাংলার এক খবরে বলা হয়েছে, অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ‘জীবন্ত প্রকৃতি এবং গতিশীলতাকে’ বিবেচনায় নিয়ে এ ধরনের (নাম) পরিবর্তনের স্পষ্ট প্রক্রিয়া রাখা হয়েছে।
বিবিসি বাংলার প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কো বলেছে, এর জন্য ‘ইনট্যাঞ্জিবল কালচারাল হেরিটেজ কমিটি' বা অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য কমিটির অনুমোদন প্রয়োজন হবে। ওই কমিটি ২৪টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত।
গত ১১ এপ্রিল বাংলা বর্ষবরণের অন্যতম আয়োজন ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র নাম পাল্টে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ করার সিদ্ধান্ত জানায় শোভাযাত্রার আয়োজক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নাম পরিবর্তন নিয়ে সমালোচনা ও নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি দেন অনেকে।
২০১৬ সালে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা অন পহেলা বৈশাখ’ শিরোনামে অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কোর তালিকাভুক্ত হয়েছিল আয়োজনটি। ফলে প্রশ্ন ওঠে, এ নাম পরিবর্তনে ইউনেস্কোর স্বীকৃতির কী হবে?
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে জাতিসংঘের সংস্থাটিকে ই-মেইল করা হয়। জবাবে ইউনেস্কো জানিয়েছে, অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ক্ষেত্রে ‘জীবন্ত ঐতিহ্য এবং তার গতিশীলতাকে’ বিবেচনায় নিয়ে এ ধরনের (নাম) পরিবর্তনের স্পষ্ট প্রক্রিয়া রাখা হয়েছে।
আরও বলা হয়েছে, এর জন্য ‘ইনট্যাঞ্জিবল কালচারাল হেরিটেজ কমিটি’ বা অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য কমিটির অনুমোদন প্রয়োজন হবে। ওই কমিটি ২৪টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত। এখনো পর্যন্ত, এটির (মঙ্গল শোভাযাত্রা) নাম পরিবর্তনের জন্য কোনো আনুষ্ঠানিক আবেদন করা হয়নি, বলেছেন ইউনেস্কোর মুখপাত্র।
ইউনেস্কো বক্তব্যের সঙ্গে সুরক্ষা বিষয়ক একটি বার্তাও জুড়ে দেয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ যে, অপরিমেয় সাংস্কৃতি ঐতিহ্যের সুরক্ষার জন্য ইউনেস্কোর সনদে, নির্দিষ্টভাবে এথিক্যাল প্রিন্সিপালস্ বা নৈতিক অবস্থান সংক্রান্ত নীতিমালায় জোর দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী এ ধরনের জীবন্ত ঐতিহ্য ও এর গতিশীলতার প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রাখতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায় ও অংশীজনদের যে কোন পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি, সম্ভাব্য ও নির্দিষ্ট প্রভাব সম্পর্কে সতর্কতার সঙ্গে মূল্যায়ন করতে হবে যেন ঐতিহ্য বা সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়ের কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, যোগ করা হয়েছে ওই বার্তায়।
তবে, বাংলাদেশের মঙ্গল শোভাযাত্রার নামের সাম্পতিক পরিবর্তন এ ধরনের কোনো নীতিগত অবস্থানের পক্ষে বা বিপক্ষে গেছে কি না, সে ব্যাপারে ইউনেস্কো কোনো মন্তব্য করেনি।
‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামে খ্যাতি পেলেও সাড়ে তিন দশক আগে ১৯৮৯ সালে যাত্রা শুরুর সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের আয়োজনটির নাম ছিল ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।