Apan Desh | আপন দেশ

পোশাক খাতের অধিকাংশ ট্রেড ইউনিয়নই নামমাত্র কাগজে 

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২০:১০, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ২০:১৫, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

পোশাক খাতের অধিকাংশ ট্রেড ইউনিয়নই নামমাত্র কাগজে 

ছবি: আপন দেশ

দেশের তালিকাভুক্ত ট্রেড ইউনিয়নের মধ্যে অধিকাংশ ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃত্ব হচ্ছে কাগুজে ইউনিয়ন। বর্তমানে ৬ হাজার ৭৩৯টি তালিকাভুক্ত ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে পোশাক খাতে রয়েছে ৩ হাজার ৮৩৯টি। এর অধিকাংশ ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য সংখ্যার সঠিক কোনো হিসাব নেই। গড়ে তিন থেকে পাঁচশ সদস্য থাকলেও অধিকাংশ সদস্যরাই নিয়মিত চাঁদা পরিশোধ করে না। এমন অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেসব প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা জানেই না তাদের প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন কার্যকর রয়েছে। নিয়মিত নিরীক্ষা ও অডিট রিপোর্ট জমা দেয় খুব কম সংখ্যক ট্রেড ইউনিয়ন।

বৃহষ্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাজধানীর পুরানা পল্টনে এশিয়া হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টসে পোশাক খাতে ‘বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে শিল্প সম্পর্ক, সামাজিক সংলাপ এবং ত্রিপক্ষীয়তা: সম্ভাবনা, বাধা এবং উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক সেমিনারে এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়। শ্রম অধিকার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক জাকির হোসেন এ তথ্য প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, তৈরি পোশাক শিল্প জাতীয় অর্থনীতির একটি প্রধান চালিকা শক্তি। জিডিপিতে এ শিল্পের অবদান ১০ শতাংশের বেশি। মোট রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে এ শিল্প থেকে। পোশাক শিল্প লাখ লাখ শ্রমিকের চাকরির ব্যবস্থা করেছে। আনুষ্ঠানিক শিল্পখাত সমূহের মধ্যে নারীদের কর্মসংস্থান পোশাক শিল্পে সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্ব বাজারে দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রফতানি কারক দেশ। স্বভাবতই, বৈশ্বিক তৈরি পোশাক শিল্প সরবরাহ চেইনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল পর্যায়ের স্টেকহোল্ডারদের বাংলাদেশে তৈরি পোশাক উৎপাদন ও সরবরাহ প্রক্রিয়ায় সার্বক্ষণিক নজরদারি  রয়েছে।

অধ্যাপক জাকির বলেন, ২০২৬ সালের নভেম্বরে জাতিসংঘের উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্ভুক্ত হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত দেশসমূহে পোশাক রফতানিতে জিএসপি প্লাস সুবিধা অর্জনের জন্য ২৭টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদ বাস্তবায়নের বাধ্যবাদকতা রয়েছে। এজন্য তৈরি পোশাক উৎপাদন ও সরবরাহ প্রক্রিয়ার সকল স্তরে পরিকল্পিত, নিয়ন্ত্রিত, অংশগ্রহণমূলক এবং পূর্নাঙ্গ সিদ্ধান্ত গ্রহণ অপরিহার্য। তাছাড়া টেকসই উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং শোভন কাজ তৈরির মত জাতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের অগ্রাধিকার রয়েছে।

আরওপড়ুন<<>>একাত্তরের জন্য পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতে বলল বাংলাদেশ

এসব কিছুর জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন একটি মজবুত, টেকসই এবং স্থায়িত্বশীল তৈরি পোশাক শিল্প। যার অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে সুষ্ঠু এবং স্বাভাবিক শিল্প সম্পর্ক এবং সু-প্রতিষ্ঠিত, অংশগ্রহণমূলক দ্বিপাক্ষিক ও ত্রিপাক্ষিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ কাঠামো ও ব্যবস্থা। যার মূলে রয়েছে, বাধাহীনভাবে সংগঠন করার এবং সংগঠিত করার অধিকার। যৌথ দর কষাকষির অবাধ অনুশীলন এবং সু-প্রতিষ্ঠিত সামাজিক সংলাপ কাঠামো ও প্রক্রিয়া।

গবেষণা প্রতিবেদনে তিনি বলেন, বাস্তবতা যদিও ভিন্ন। তৈরি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিল্প সম্পর্ক কখনই খুব একটা সুসংহত এবং কার্যকর ছিল না। সংগঠন করার এবং সংগঠিত করার অধিকার বা ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের স্বাধীনতা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। সীমিত সংখ্যক কারখানায় ট্র্রেড ইউনিয়ন কার্যকর আছে। নির্বাচিত সভাপতি, সম্পাদক ও সদস্যদের চাকরিচ্যুত, বরখাস্ত বা ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত করা নিয়মিত ঘটনা। নারীদের অংশগ্রহণ এবং নারী নের্তৃত্ব নারী-শ্রমিকের অনুপাতে উল্লেখযোগ্যভাবে কম।

অধ্যাপক জাকির বলেন, তাজরিন কারখানায় অগ্নিকাণ্ড এবং রানা প্লাজা কারখানা ধসের পর রাতারাতি কারখানাভিত্তিক ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধন বৃদ্ধি পেলেও, সামগ্রিক কার্যক্রম আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। ত্রিপক্ষীয় সামাজিক সংলাপের বেশ কিছু উদ্যোগ চালু থাকলেও তাদের কার্যকারিতা ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। শক্তিশালী ত্রিপক্ষীয় সামাজিক সংলাপের অনুপস্থিতে, সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় মালিকপক্ষের স্বার্থ সংরক্ষণ প্রাধান্য পাচ্ছে। এমতাবস্থায়, টেকসই এবং স্থায়িত্বশীল তৈরি পোশাক শিল্পের বিপরীতে, একটি অস্থিতিশীল এবং বিবাদপূর্ণ শিল্প ইমেজ ক্রমান্বয়ে দৃশ্যমান হচ্ছে, যা কোনভাবেই কাম্য নয়। তাছাড়া তৈরি পোশাক শিল্পে সুষ্ঠু শিল্প সম্পর্কের বিপরীতে আইনগত সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে কর্মক্ষেত্রে ডিজিটাইজেশন, অটোমেশন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, এবং সবুজ কারখানায় রাপান্তর হওয়ার মতো বিষয়সমূহ নিয়মিত ঘটছে। ট্রেড ইউনিয়নসমূহের মধ্যে এসব বিষয়ে সঠিক নের্তৃত্ব দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলসের উদ্যোগে সেমিনারে সকল জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নেন। তারা বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে প্রচলিত শিল্প সম্পর্কের একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ এবং সুষ্ঠ ও যুগপোযোগী শিল্প সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জ, সুযোগসমূহ চিহ্নিত করা জরুরি ছিল। এ গবেষণা প্রতিবেদনের মাধ্যমে তা ফুটে উঠেছে। আগামী দিনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃত্বকে আরও জবাবদিহির আওতায় এনে কার্যকর করার উদ্যোগ নিতে হবে।

আপন দেশ/এমএস  

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়