
ফাইল ছবি
দরিদ্র ও অসহায় বিচারার্থীদের আস্থা বাড়ছে আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার (লিগ্যাল এইডে) প্রতি। এ সংস্থাটি থেকে গত ১৬ বছরে আইনি সহায়তা পেয়েছেন ১১ লাখ ৯৫ হাজার ৭৫ জন। আর ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়েছে ২৫২ কোটি ৫১ লাখ ৮১ টাকা। ৬৪ জেলায় লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে ২ লাখ ১২ হাজার ১৫১টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। দিন দিন যেন বেড়েই চলছে এর সেবা গ্রহণকারীর সংখ্যা।
২০০৯ সালে আর্থিকভাবে অসচ্ছল, অসমর্থ বিচারপ্রার্থী জনগণকে আইনি সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে সরকারি খরচে এ সেবা প্রদান করে আসছে জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থা। শুরুতে জেলা পর্যায়ে অসচ্ছল জনগোষ্ঠীর জন্য এ আইনি সেবা প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্ট, ঢাকা ও চট্রগ্রামে শ্রমিক আইনগত সহায়তা সেল, দেশের কারাগারগুলোতে এ সেবা চালু হয়। প্রতিবছর ২৮ এপ্রিল জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি উপলক্ষে সারা দেশে পালিত হচ্ছে নানা অনুষ্ঠান।
সাতক্ষীরার সাবেক জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার এবং বর্তমানে টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুল ইসলাম আপন দেশকে বলেন, অসহায় দরিদ্র মানুষের আইনগত অধিকার রক্ষার জন্য এবং তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরনে লিগ্যাল এইড খুবই চমৎকার ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে এর পরিধি দ্রুত বিস্তৃত করা উচিত। তাহলে অসহায় দরিদ্র এবং প্রান্তিক মানুষ সহজেই আইনী সেবা পাবে এবং তাদের আইনগত অধিকার নিশ্চিত হবে এবং বৈষম্য নিরসন হবে।
সুপ্রিম কোর্ট সিনিয়র আইনজীবী ও হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশের এর প্রেসিডেন্ট মনজিল মোরসেদ আপন দেশকে বলেন, দিন দিন বিনা টাকায় সরকারি সেবায় দরিদ্র ও অসহায় বিচারার্থীদের আস্থা বাড়ছে, তবে রাষ্ট্রের এ সংস্থাকে আরও কার্যকরী হওয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, লিগ্যাল এইডে আরো বিজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগ ও প্রচুর অর্থ বরাদ্ধের প্রয়োজন। এতে মামলা নিষ্পত্তি বাড়বে, একই সঙ্গে সমাজের অসহায় ও দরিদ্র মানুষ আরো বেশি উপকৃত হবে।
দরিদ্র ও অসহায় বিচারপ্রার্থীদের সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা দেয়ার লক্ষ্যে সরকার ২০০০ সালে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন প্রণয়ন করে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ সংস্থার অধীনে প্রত্যেক জেলায় জেলা ও দায়রা জজকে চেয়ারম্যান করে একটি করে জেলা কমিটি গঠন করা হয়। উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা লিগ্যাল এইড কমিটি এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন লিগ্যাল এইড কমিটি গঠন করা হয়। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টেও একটি লিগ্যাল এইড কমিটি রয়েছে। যার চেয়ারম্যান হচ্ছেন হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি। এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের শ্রম আদালতে দুটি শ্রমিক আইনগত সহায়তা সেলের মাধ্যমে আইনগত সহায়তা দেয়া হয়ে থাকে।
জাতীয় আইনগত সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত সরকারি খরচে আইনি সহায়তাপ্রাপ্ত উপকারভোগী সর্বমোট ১১ লাখ ৯৫ হাজার ৭৫ জন। দেশের ৬৪ জেলা লিগ্যাল এইড অফিস, সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিস, ঢাকা ও চট্টগ্রাম শ্রমিক আইনগত সহায়তা সেল, সরকারি আইনি সহায়তা জাতীয় হেল্পলাইন কলসেন্টারে এ সেবা প্রদান করা হয়।
সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে আইন সহায়তা পান ২৮ হাজার ৮৩৭ জন, মামলা নিষ্পত্তি ২২শ ৮৬টি। আইনি পরামশ নেন ২৫ হাজার ৫৮১ জন। ৬৪ জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে ৯ লাখ ৫০ হাজার ৮৩১ জন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম শ্রমিক আইনগত সহায়তা সেলের মাধ্যমে ২৯ হাজার ১৪৭ জন এবং জাতীয় হেল্পলাইন কলসেন্টারে ১ লাখ ৮৬ হাজার ২৬৮ জন রয়েছেন। আর ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়েছে ২৫২ কোটি ৫১ লাখ ৮১ টাকা। জেলা লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে ২৪৫ কোটি ৮৮ লাখ ৩৪ হাজার ৮৬৬ টাকা। আর ঢাকা ও চট্রগ্রামে শ্রমিক আইনগত সেলের মাধ্যমে আদায় ৬ কোটি ৬৩ লাখ ২৬ হাজার ২১৫ টাকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আদালতের নির্ধারিত প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে স্বল্পতম সময়ে বিরোধ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়াকে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) বলে। এটি বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে একটি সামগ্রিক ও বহুপাক্ষিক পর্যালোচনা যাতে উভয়পক্ষ লাভবান হয়ে থাকে। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) জন্য ১ লাখ ৬১ হাজার ৫৯২ টি মামলার উদ্যোগ নেয়া হয়, এর মধ্যে ১ লাখ ৪৬ হাজার ১২১ টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এতে উপকারভোগী ২ লাখ ৭৮ হাজার ৪৬৫ জন। এ কার্যক্রমে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা পেয়েছেন ১ লাখ ২৬ হাজার ৩৭২ জন কারাবন্দি।
সূত্রে মতে, আর্থিকভাবে অসচ্ছল ব্যক্তি যার বার্য়িক গড় আয় সুপ্রিম কোর্ট আইনগত সহায়তা প্রদানে ক্ষেত্রে ১ লাখ ৫০ হাজার এবং অন্যান্য আদালতের ক্ষেত্রে ১ লাখ টাকার উর্ধে নয়, আইনি সহায়তা দেয়া হয়। আর কর্মে অক্ষম, আংশিক কর্মক্ষম, কর্মহীন কোন ব্যক্তি, যেকোন শিশু, মানব পাচারের শিকার যেকোনো ব্যক্তি; শারীরিক, মানসিক এবং যৌন নির্যাতনের শিকার যেকোনো নারী ও শিশু, নিরাশ্রয় ব্যক্তি বা ভবঘুওে, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের যেকোনো ব্যক্তি, বয়স্ক ভাতা পাচ্ছে এমন যেকোনো ব্যক্তি, পারিবারিক সহিংসতার শিকার বা এরূপ ঝুঁকিতে আছেন এমন সংক্ষুদ্ধব্যক্তি; ভিজিডি কার্ডধারী দুঃস্থ মাতা, দুর্বত্ত দ্বারা এসিডদগ্ধ নারী বা শিশু, আদর্শগ্রামে গৃহ/ভূমি বরাদ্দ প্রাপক, অসচ্ছল বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা মহিলা এবং দুঃস্থ মহিলা, যেকোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, বিনা বিচারে আটককৃত অসচ্ছল ব্যক্তি, আ্ইনগত সহায়তা প্রদান আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সংস্থা কতৃর্ক চিহ্নিত ব্যক্তি; বিনা পয়সায় তথা সরকারী খরচে আইনী সহায়তা পাবেন।
এদিকে প্রতি বছরের মতো এবারও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করা হচ্ছে। ‘দ্বন্বে কোনো আনন্দ নাই, আপস করো ভাই, লিগ্যাল এইড আছে পাশে, কোন চিন্তা নাই’ এ স্লোগান সামনে রেখে পালিত হচ্ছে দিবসটি। দিনের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আলোচনা সভা, সেমিনার, প্রচারণামূলক সামগ্রী বিতরণ বা পোস্টারিং, সেরা প্যানেল আইনজীবী পুরস্কার। জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি, উপজেলা লিগ্যাল এইড কমিটি, চৌকি আদালত লিগ্যাল এইড বিশেষ কমিটি, ইউনিয়ন লিগ্যাল এইড কমিটি এসব অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন করছে।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।