Apan Desh | আপন দেশ

ঈদের আনন্দ ছড়িয়েই সুখ তাদের!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:০৫, ২২ এপ্রিল ২০২৩

আপডেট: ১২:৪৭, ২৩ এপ্রিল ২০২৩

ঈদের আনন্দ ছড়িয়েই সুখ তাদের!

ছবি : সংগৃহীত

ঈদ মানেই আনন্দ। কিন্তু দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি না পেলে কি এই আনন্দ মেলে? সামগ্রিক ঈদ আনন্দ সমাজে ছড়িয়ে দিতে ঈদের সময়টিতে কাজ করতে হয় অনেককে। এর মাঝে আছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। আরও আছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। মনে হয় সবচেয়ে বেশি আছে গণমাধ্যমকর্মীরা। হয়তোবা তার চেয়ে বেশি আছেন জরুরি সেবার মানুষরা। তাদের নিজ ঈদ আনন্দ বাদ দিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হয়। হয়তোবা চেতনে-অবচেতনে এমন দায়িত্ব পালনেই তারা খুঁজে নেন সুখ।

অনেক সময় দেখা যায়, এসব শাখার মানুষজন এক ঈদে ছুটি পেলে আরেক ঈদে পান না। না হয় এক ধর্মের উৎসবে অন্য ধর্মের মানুষজন সহবত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বোপরি খুবই সহানুভূতিশীল ও ছাড়ের মনোভাব নিয়ে এমন প্রতিষ্ঠানগুলির সবাইকে কাজ করতে হয়।

আজ শনিবার (২২ এপ্রিল) সরেজমিন রাজধানীর একাধিক হাসপাতাল, পুলিশের দায়িত্ব পালনস্থল ও মিডিয়া হাউসগুলো ঘুরে দেখা যায় কর্মব্যস্ততা।

বাবুবাজার ব্রিজে দায়িত্বরত ট্রাফিক কনস্টেবল রতন কুমার দাস বলেন, ‘ঈদে ঢাকার অন্যান্য রাস্তা ফাঁকা থাকলেও বাবুবাজারের এ দিকটায় ভালোই চাপ থাকে। মূলত ঈদের দিন যেন কেউ আইন ভেঙে শৃঙ্খলা নষ্ট করতে না পারে, সে জন্য দায়িত্বে থাকতে হয়। এ ছাড়া আমি সনাতন ধর্মাবলম্বী হওয়ায় ঈদের দিন ডিউটি করছি। সামনে পূজায় ছুটি পেলে গ্রামে যাব। এই যে সবাই মিলেমিশে কাজ করছি এটা মূলত কষ্টের নয়, বরং এর মাধ্যমেই গড়ে ওঠে সম্প্রীতির বন্ধন।’

জাতীয় ঈদগাহের সামনে দায়িত্বে থাকা পুলিশ সার্জেন্ট রাজীব হোসেন বলেন, ‘আমার বাড়ি বরিশাল। বাবা-মা সেখানেই থাকেন। মা-বাবার সঙ্গে ঈদ করতে পারছি না বলে একটু তো মন খারাপ হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু দায়িত্ব আরও বড় বিষয়। আমাদের জন্য যদি রাজধানীবাসী নিশ্চিন্তে ঈদ করতে পারেন, এটিই সবচেয়ে বড় পাওয়া।’

বারডেম হাসপাতালে দায়িত্বরত মেডিসিন অফিসার ডা. শুভ্র বণিক বলেন, ‘রোগ-ব্যাধি তো আর উৎসব-পার্বণ মানে না। তবে মুসলিম ভাইয়েরা যেন ঈদে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য রোস্টারে ডিউটি ভাগ করে নিই আমরা। আবার আমাদের যখন কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান আসে; তখন তারা ডিউটি ভাগ করে নেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সকালের নামাজ শেষে হাসপাতালে মুসলমান ডাক্তাররাও ডিউটি দেন। বিশেষ করে জরুরি বিভাগে সবসময়ই ডাক্তার থাকেন।’

ওই হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক মাহজাবীন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা যখন ডাক্তার হওয়ার ব্রত নিয়েছি, তখন থেকেই মানবতার সেবায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে এক রকমের বদ্ধপরিকর। সবার জন্য ঈদ অবসর ও পারিবারিক মুহূর্ত হলেও বেডে থাকা রোগীদের কথা বা জরুরি বিভাগের বিষয়টি আমাদের মাথায় রাখতে হয়।’

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল নিউরো সার্জারি বিভাগ ইনডোর মেডিক্যাল অফিসার ডা. শুভ্র সাহা বলেন, ঈদের সকাল থেকে ডিউটিতে আছি। সকাল থেকে রাত আসছেন তাদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

পপুলার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ইন্টার্ন ডা. স্বপ্নীল কে বিশ্বাস বলেন, আমাদের কলিগ তারা ছুটিতে আছেন, তাদের জন্য চিকিৎসা সেবা যেন ব্যহত না হয় সেজন্য আমরা দায়িত্ব পালন করছি। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করছি।

স্যার সলিমুল্লাহ্ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ইন্টার্ন ডা. সজিব কুমার সাহা বলেন, ‘পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে ডিউটি করছি। ঈদের কারণে চিকিৎসা সেবা দেয়ার যেন কোনো কমতি না থাকে সে জন্য ডাক্তার নার্সসহ সবাই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। ঈদ সবার ভালো কাটুক এই প্রত্যাশা করি।’

দৈনিক আজকালের খবরের অনলাইনে কাজ করেন সাহিদুজ্জামান হিমেল। পত্রিকার ছুটি থাকলেও তাকে হোম অফিস করতে হয়। তিনি বলেন, সংবাদকর্মী হলে ঈদ বা এমন ধরনের বৃহৎ উৎসবে কাজ করতেই হয়। এটি কষ্টকর ঠেকলেও মেনে নিয়েছি। ভিন্ন ভাবনায় ভালোও লাগে। নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। আমার মতো সংবাদকর্মীদের কাজে সমাজের উপকার কিংবা সবার ঈদ আনন্দ যদি বজায় থাকে তবে কাজ করেও সুখ পাওয়া যায়। তিনি বলেন, নিজের দায়িত্বকেও কোনো অবস্থায়ই একজন সাংবাদিক হেলাফেলা করতে পারেন না। সবকিছু ছাপিয়ে সঠিক খবর সঠিক সময়ে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়াই আমাদের ব্রত।

বেসরকারি গ্লোবাল টেলিভিশনের সাংবাদিক আপন অপু বলেন, ‘জনগণের কাছে সঠিক সংবাদ পৌঁছে দিতে আমরা ঈদের মধ্যেও কাজ করে যাচ্ছি। অফিস শেষে যতটুকুই সময় পাবো পরবর্তী সময়ে বাসায় গিয়ে পরিবারকে সময় দেবো।’

একই টিভির বার্তা সম্পাদক মাহতাব শফি বলেন, ‘সকালে পরিবারকে সময় দিয়ে তারপর ঈদের নামাজ পড়েছি। পরে অফিসে এসে কাজ করছি। অফিস শেষে যতটুকু সময় পাবো পরিবারের সঙ্গে কাটাবো। এভাবেই কাটে আমাদের ঈদের দিনগুলো।’

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘জরুরি সেবা হিসেবে আমাদের কোনো ছুটি নেই। সবসময় তৎপর থাকতে হয়। তারপরও ডিউটির সময় বাদে যতটুকু সময় পাওয়া যায়, তাতেই আমাদের পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পাই। সাম্প্রতিক সময় আগুনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণে আমরা আরও বেশি সচেতন রয়েছি।’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার অপারেশন্স বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘ফাঁকা বাসা নিরাপত্তা সড়কে নিরাপত্তা বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণ চুরি-ছিনতাই প্রতিরোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঈদের মধ্যেও কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা কাজের মধ্যেই আনন্দ খুঁজে পাই। জনগণের সহায়তা দিতে আমরা ঈদেও প্রস্তুত রয়েছি।’

আপন দেশ/আরএ

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়