ফাইল ছবি
আজ বৃহস্পতিবার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (গাসিক) নির্বাচন। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ শেষে কেন্দ্রে কেন্দ্রে গণনার পর ফল ঘোষণা করা হবে। এরপর সব কেন্দ্রের ভোটের হিসাব যোগ করে রিটার্নিং কর্মকর্তা মেয়র ও কাউন্সিলর পদে চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করবেন। এবারের গাসিক নির্বাচনে সব কেন্দ্রে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ নির্বাচন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জন্য টেষ্ট পরীক্ষা। তাই আজ দৃষ্টি সবার গাজীপুরে। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট করতে ইসির নির্দেশে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপরতা জোরদার করেছে। নিরাপত্তার চাঁদরে ঢাকা হয়েছে সমগ্র সিটি করপোরেশন এলাকা। কেন্দ্রে কেন্দ্রে স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা। আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে বিশাল স্ক্রিনে ভোটের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে ইসি। এ পরিস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ ভোটের পরিবেশ প্রত্যাশা করছেন গাজীপুরের সর্বস্তরের মানুষ।
এদিকে রাজধানীর অদূরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ফল কি হয় তা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন দেশের সর্বস্তরের মানুষ। রাজনৈতিক দলসহ দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মহলও এ নির্বাচনের দিকে কড়া দৃষ্টি রেখেছে। নির্বাচনের কেমন পরিবেশে হয় তা পর্যবেক্ষণ করছেন ঢাকায় কর্মরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরাও। এ নির্বাচন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে এমন ভাবনা থেকেই সবাই আজকের নির্বাচনকে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে।
অভিজ্ঞ মহলের মতে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের জন্য গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রেস্টিজ ইস্যু। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন হলে, দল মনোনীত প্রার্থীরা বিজয়ী হলেই কেবল সরকারের ইমেজ উদ্ধারহেবেক। আর তা না হলে নানামুখী প্রশ্নের সম্মুখীন হবে সরকার ও আওয়ামী লীগ। তাই আওয়ামী লীগ চাচ্ছে যেন সুষ্ঠু ভোটে তারা বিজয়ী হতে পারে। আর রাজপথের বিরোধী বিরোধী দল এ নির্বাচনে অংশ না নিলেও তারা তলে তলে বিকল্প মেয়র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে।
এ জন্য বিএনপির বড় একটি অংশ আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খানের প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের পক্ষে কাজ করছে। এছাড়া বিএনপির আরেকটি অংশ দল সমর্থক স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহ নূর ইসলামের পক্ষে কাজ করছে। তবে শেষ মুহূর্তে দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশে এ দুজনের যে কোনো একজনকে ভোট দেয়ার নির্দেশ দিলে ভোটের হিসাব পাল্টে যেতে পারে। আর দলের পদধারী ২৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থীকে বহিষ্কার করলেও বিএনপির সাধারণ নেতাকর্মীরা তাদের পক্ষে কাজ করছেন।
এদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও সাবেক মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের অনুসারী আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী প্রথম দিকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ও দলের মহানগর সভাপতি আজমত উল্লা খানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও পরে মেয়র পদে জাহাঙ্গীর আলমের প্রার্থিতা বাতিল হওয়ার পর প্রথমে তার মায়ের পক্ষে অবস্থান করলেও একপর্যায়ে হাইকমান্ডের নির্দেশে মূল ধারায় ফিরে আসে।
তবে ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগের ভোটারদেরউপস্থিতি কম হলে এবং বিএনপি সমর্থিত ভোটাররা শেষ মুহূর্তে একাট্টা হয়ে কোনো প্রার্থীকে একচেটিয়া ভোট দিলে হিসাবটা পাল্টে যেতে পারে। অভিজ্ঞ মহল এমনটাই মনে করছেন। যে কারণে কে হচ্ছেন গাজীপুরের নগর পিতা তা দেখার জন্য ভোটের ফল পর্যন্ত অপেক্ষাই করতে হবে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের অনিয়ম প্রতিরোধে কেন্দ্রে কেন্দ্রে স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে একাধিক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। মোট ৪ হাজার ৪৩৫টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এই সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে বিশাল স্ক্রিনে ভোটের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ অন্য নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সাংবাদিকদেরও স্ক্রিনে ভোটের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ দেয়া হবে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ৪৮০টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৩৫১টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ তাই এই কেন্দ্রগুলোর প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আর ১২৯টি কেন্দ্র ঝুঁকিমুক্ত তাই এগুলোকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে ভোট কেন্দ্রে থাকা সিসি ক্যামেরায় কোনো অনিয়ম দেখতে পেলে গাইবান্ধা নির্বাচনের চেয়েও কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ইসি থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৫৭টি ওয়ার্ডে ২১ প্লাটুন বিজিবি টহল দেবে। ভোটের অনিয়ম প্রতিরোধে ৭৪ জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন। সঙ্গে থাকবেন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটও। সেখানে র্যাবের ৩০টি টিম এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে পুলিশের ১৯টি এবং মোবাইল টিম হিসেবে ৫৭টি টিম থাকবে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৭ ও সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন করে ফোর্স থাকবে। এভাবে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে থাকছে ত্রিস্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা বলয়। ইতোমধ্যেই নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে গোটা নির্বাচনী এলাকা।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন ভোটারের মধ্যে পুরুষ ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন এবং নারী ভোটার ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন।
এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ১৮ জন। ভোট গ্রহণের দায়িত্বে থাকবেন ৪৮০ জন প্রিসাইডিং অফিসার, তিন হাজার ৪৯৭ জন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, ছয় হাজার ৯৯৪ জন পোলিং অফিসারসহ ১০ হাজার ৯৭১ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা। এ নির্বাচনে ভোটাররা একজন মেয়র ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের জন্য ৫৭ জন কাউন্সিলর এবং ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের জন্য ১৯ জন নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত করবেন। সিটির ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ফয়সাল আহমেদ সরকার ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন।
গাসিক নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী ৮ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪৬ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মেয়র পদের প্রার্থীরা হলেন, নৌকা প্রতীকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. আজমত উল্লা খান, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির এমএম নিয়াজ উদ্দিন, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ, স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী টেবিল ঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন, হাতি প্রতীকে সরকার শাহনূর ইসলাম ও ঘোড়া প্রতীকে মো. হারুন-অর-রশীদ।
উৎসবমুখর পরিবেশে গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গাসিক) নির্বাচনের ভোট সম্পন্ন করতে আগেই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ নির্বাচন এখন ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ না নিলেও এতে কেমন ভোট হয় সেদিকে তীক্ষ্ন নজর রাখছে। কারণ, এ নির্বাচনের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে তাদের পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও এ নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণ করতে পারবে। এ ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলগুলোও এ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।