সংবাদ সম্মেলনে উজরা জেয়া -ছবি: পিআইডি
সফররত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক মতবিরোধ নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। আজ (১৩ জুলাই) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে মধ্যহ্নভোজ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলছেন তিনি।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ ছাড়াও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
নির্বাচনের আগে বড় দুই দলের মধ্যে সংলাপের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সবাই সংলাপ চাই। তবে এই প্রক্রিয়ায় আমরা সরাসরি যুক্ত নই।
বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত মে মাসে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এই ভিসা নীতি ঘোষণার পর উজরা জেয়া দেশটির জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা হিসেবে প্রথম বাংলাদেশ সফর করছেন। তিনি চার দিনের সফরে মঙ্গলবার (১১ জুলাই) সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছান। পরদিন বুধবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে এসে আজ সকাল থেকেই একের পর এক মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি।
বৈশ্বিক মানবাধিকার নীতির অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায় বলে উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, শক্তিশালী ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি নির্বাচন এবং সুশাসনে ব্যাপকসংখ্যক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণের ওপর বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। একটি অংশগ্রহণমূলক এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সহযোগিতা থাকবে, যেখানে সব নাগরিকের বিকাশ হবে।
নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের অঙ্গীকারের বিষয়ে তাঁর মনোভাব জানতে চাইলে উজরা জেয়া বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি অন্য মন্ত্রীদের কাছ থেকে জোরালো প্রত্যয়ের কথা শুনেছি। পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গেও অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ব্যাপারে আলোচনা করেছি।’
উজরা জেয়া বলেন, গতকাল (১২ জুলাই) দুই রাজনৈতিক দল যে র্যালি করেছে সেটা আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি। সেখানে কোনো সংহিসতার ঘটনা ঘটেনি। এটা একটা ভালো অনুশীলন এবং আমরা এর পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই। বাংলাদেশে কখন নির্বাচন হবে সেটা বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নেবে। সংলাপের বিষয়ে বলব, এ বিষয়ে আমাদের প্রত্যক্ষ কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না।
নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র আরও কঠোর ব্যবস্থা নেবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্বের স্বীকৃতি দিতে আমি এখানে এসেছি। যুক্তরাষ্ট্র এই সম্পর্ককে আরও নিবিড় করতে চায়। অবাধ ও মুক্ত ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগর প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে আমাদের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।
উজরা জেয়া বলেন, পাঁচ দশক ধরে দুই দেশের চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে, তাতে আমি সন্তুষ্ট।
যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও নিবিড় করতে চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামী ৫০ বছর এবং তার পরের দিকে আমরা তাকিয়ে আছি। জলবায়ু পরিবর্তন, উন্নয়ন সহায়তা, অর্থনৈতিক, মানবিক সহায়তা এবং নিরাপত্তা খাতে আমাদের যে সহযোগিতা, তা সম্পর্কের শক্তিমত্তা এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে তুলে ধরে।
উজরা জেয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় আমি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলেছি। সাংবাদিকরা যাতে অবাধে এবং কোনোরকম ভয়ভীতি এবং নিপীড়নের শিকার না হয়ে কাজ করতে পারেন, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
গণতন্ত্রে নাগরিক সমাজ গুরুত্বপূর্ণ যে ভূমিকা পালন করে, সেটা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি। তিনি বলেন, মানবাধিকার এবং মৌলিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের বিষয়ে, বিশেষ করে মতপ্রকাশের এবং সমাবেশের স্বাধীনতা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
আপন দেশ/এমএমজেড
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।