রফিক সুলায়মান
ইসরায়েলি ভাস্কর হেদভা সেরের ভাস্কর্য ‘শান্তি বৃক্ষ’ Tree of Peace নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। ইউনূস সেন্টারের ওয়েবসাইটে জানাচ্ছে যে নোবেল লরিয়েট ইউনূস সম্প্রতি আজারবাইজানের বাকুতে এক শান্তি সম্মেলনে এটি লাভ করেছেন! এখন জানা গেল কোনো ইউনেসকো প্রতিনিধি নন, স্বয়ং ভাস্কর হেদভা সের এটি অনানুষ্ঠানিকভাবে তুলে দিয়েছেন তার হাতে।
হেদভা সের ইউনেসকো’র একজন অনারারি দূত। তিনি Tree of Peace-এর উদ্ভাবক এবং ডিজাইনার। ইউনেসকো’র নানাবিধ পুরস্কারের মধ্যে Tree of Peace Award একটি। মূল ভাস্কর্যটি লুক্সেমবার্গ এবং আজারবাইজানে স্থাপিত হয়েছে ওপেন স্পেসে। ভাস্কর সের দেশে দেশে শান্তি, সুরক্ষা এবং ধর্মীয় সহনশীলতার বার্তা দিতে চান এই ভাস্কর্যের মাধ্যমে। থিমটি ইউনেসকো’র পছন্দ হয়েছে। তাদের পুরস্কারের মেমেন্টোতে এই ভাস্কর্যের রেপ্লিকা ব্যবহৃত আছে। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিকট অতীতে এই সম্মানজনক পুরস্কারটি লাভ করেছেন। তার হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছিলেন ইউনেসকো কর্তৃপক্ষ।
বিভিন্ন সাইট ঘেঁটে মজার আরেকটি মজার তথ্য পেলাম। মাত্র ২৩০০ ইউরোতে এই ভাস্কর্যের রেপ্লিকা বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে এই সাইটে https://museal.com/en/product/tree-of-peace/। যাদের দরকার লিংকে যেয়ে কিনতে পারেন।
আরও পড়ুন <> অম্ল-মধুর নির্বাচনী সংস্কৃতি
ভাস্কর হেদভা সের ইসরায়েলের একজন সিনিয়র ভাস্কর। বর্তমানে তার বয়স ৭৬। বিশ্বের একজন সুপরিচিত নাগরিককে তার একটি শিল্পকর্ম তিনি উপহার দিতেই পারেন। ইউনূস সেন্টারের উচিত হয়নি অসত্য তথ্য মিশিয়ে প্রীতি উপহারকে ‘ইউনেসকো পুরস্কার’ হিসেবে চালিয়ে দেওয়া। ভাস্কর সের কেন ইউনূসকে এই শান্তির প্রতীক দিতে গেলেন তা তিনি ভালো জানেন। ইসরায়েলের সময়টি ভালো যাচ্ছে না। হামাসের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে বন্ধু হারাচ্ছে দেশে দেশে। আমেরিকাও আগের মতো ইসরায়েলের পাশে নেই। বিভিন্ন দেশ ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করে দিচ্ছে। স্পেন, কলম্বিয়া, স্লোভেনিয়া, চিলি ইত্যাদি দেশ দাঁড়িয়েছে প্যালেস্টাইনের পাশে। রক্তপিপাসু বেনিয়ামিন নিতানিয়াহুর বিদায় ঘণ্টা বাজলো বলে।
মানুষ যত উপরে যায় ততই বিনয়ী হয়। সত্যবাদী হয়। মানবতাবাদী হয়। ইউনূস স্যারকে কোনোদিন শহীদ মিনারে কোনো বুদ্ধিজীবীর কফিনে ফুল দিতে দেখিনি। করোনার সময় কাউকে সাহায্য করতে দেখিনি। জাতির বিশেষ দিনে বিবৃতি দিতে দেখিনি। একজন আজব মানুষ তিনি। তার লাইফস্টাইলও আজব।
নোবেল পুরস্কার পেলেই কেউ একজন ধোয়া তুলসীপাতা হয়ে যাবেন এমন নয়। ভিয়েতনাম এবং দক্ষিণ আমেরিকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হেনরি কিসিঞ্জারও নোবেল পেয়েছিলেন। তিনি ১০০ বছর বেঁচেছেন। কিন্তু তার ফরেন পলিসির কারণে বিশ্বের অনেক শাসক এবং রাজনীতিবিদ ৫০-৬০ বছরও বাঁচেননি। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কোস্টারিকার অস্কার আরিয়াল সানচেজ নোবেল পেয়েছিলেন শান্তির জন্য। হয়তো এই নামটি এখন আর কারো মনেই নেই। সাহিত্যে প্রথম নোবেল পেয়েছিলেন সুলি প্রুধোম- অনেক সাহিত্যিক এই লেখকের নামই শোনেননি। আবার তার সাথে শান্তিতে নোবেল পেয়েছিলেন রেড ক্রসের প্রতিষ্ঠাতা আঁরি দুনাঁ, যার সৃষ্টি করা প্রতিষ্ঠান তিনবার নোবেল জয়ের কৃতিত্ব দেখিয়েছে। এমন বিরল সম্মান আর কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নেই।
কিন্তু কথা হলো ইসরায়েলের মতো ইউনূস স্যারের সময়টাও ভালো যাচ্ছে না। নিজের দেশবাসীর কাছে তার সুখ্যাতির কানাকড়িও অবশিষ্ট নেই। তিনি দরিদ্র মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করলেও জাতীয় দুর্যোগের সময় তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। শ্রমিকের টাকা মেরে দেওয়া এবং সরকারের রাজস্ব বিভাগকে বঞ্চিত করার ঘটনা নিয়ে দেশে তার বিচার চলছে।
এমন মুহূর্তে ভাস্কর হেদভা সেরের ভাস্কর্য ‘শান্তি বৃক্ষ’ লাভে নতুন করে সময় খারাপ যাবে ড. ইউনূসের; এমনটি অনুমিতই। দেখা যাক কতটা রহস্যময় হতে পারেন ইউনূস স্যার! শত অভিযোগ-অনুযোগ আমলে নিয়েও আশা করি তার বিবেক জাগ্রত হোক। বাংলাদেশ ও বাঙালিদের কল্যাণে আসুক তার মেধা-মনন-উদ্ভাবন। না হয় বিশ্বজয়ে লাভ কী? বাংলা ও বাংলার মানুষের মন জয় করুন ইউনূস স্যার।
লেখক : সংস্কৃতিবান ও শিল্প সমালোচক।
আপন দেশ/এমআর
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।