ছবি : সংগৃহীত
'রাজনীতির সদরে-অন্দরে' শিরোনামে আমার বইটি প্রকাশনার কাজ এগিয়ে চলেছে। হয়তো আলোর মুখ দেখতে আর খুব বেশি সময় লাগবেনা। তবে আগেই বলেছি, বেরুবার আগে আমি আমার এ বইটি নিয়ে সম্ভাব্য পাঠকদের উদ্দেশে মাঝে মধ্যে কিছু লিখতে থাকবো।
এই বইয়ে আমি টুকরো টুকরো নানা ঘটনা গল্পের মতো করে বলবার চেষ্টা করেছি। সে গল্পগুলো নিয়েই কিছু অল্পকথা বলবো আজ।
এ জগতে মানুষের জীবনের পথ খুব দীর্ঘ নয়। কিন্তু বিচিত্র তার গতি, হরেক রকম তার অভিজ্ঞতা ও স্মৃতি। এ স্বল্পদৈর্ঘ্য জীবনে আমার স্মৃতিও তো কতো বর্ণাঢ্য অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ। সাংবাদিকতা, রাজনীতি, সংস্কৃতি ও সাহিত্যের অঙ্গনের সদরে-অন্দরে পেশা ও নেশার বশে আমাকে করতে হয়েছে পদচারণা। বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও সেলিব্রিটিদের অনেকের নিবিড় সান্নিধ্য লাভের দুর্লভ সুযোগ এ জীবনে পেয়েছি। তাদের নিয়ে কতো ঘটনা ও রটনা আমি জানি। পেশাগত কাজে ব্যবহার করতে পেরেছি তার সামান্যই। সে-সবের এক ক্ষুদ্র ভগ্নাংশই প্রকাশিত হয়েছে। আড়ালের অনেক কিছু সহ তার বেশির ভাগই জমে আছে আমার স্মৃতির ব্যাংকে।
একসময় মনে হলো স্মৃতি হাতড়ে এর অনেক কিছুই তো তুলে আনতে পারি পাদপ্রদীপের আলোয়। সেই ভাবনা থেকেই আমার ফেসবুক প্রোফাইলে 'অ্যানেকডোট' হিসেবে কিছু খণ্ডচিত্র লেখা শুরু করে দিই।
লিখতে গিয়ে দেখলাম অনেক কিছুই বেরিয়ে আসছে। পাঠকের প্রতিক্রিয়া ও সাড়াও উৎসাহ যোগালো এন্তার। তাই অনেকগুলো লেখা লিখে ফেললাম ধারাবাহিকভাবে। সেই লেখাগুলো নিয়েই মূলতঃ এ বই।
লেখাগুলো চলমান থাকতেই সুহৃদ-প্রকাশক সাঈদ বারীর ক্রমাগত তাগিদ আসতে থাকলো, "লেখা হুট করে থামাবেন না। সব মিলিয়ে বই করে ফেলুন।" ভালোবাসামেশা এ তাগিদ উপেক্ষা করা গেলো না কোনোক্রমেই। তবে প্রাসঙ্গিক ভেবে ফেসবুকের ওই অ্যানেকডোটসগুলোর সঙ্গে অন্য সময়ে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত একই ধাঁচের আরো কয়েকটি লেখাও জুড়ে দিয়েছি।
আমার এ লেখাগুলো প্রকৃতই অ্যানেকডোট। ইতিহাসের উপাদান বা উপকরণ হয়তো হতে পারে; তবে এ লেখাগুলো মোটেও কিন্তু ইতিহাস নয়। ইতিহাসের পেছনে থাকতে হয় গবেষণা ও প্রামাণ্যতা। আমার লেখায় তা নেই। কাজেই স্মৃতি ও শ্রুতিনির্ভর এ লেখাগুলোকে কেউ নির্ভরযোগ্য ও প্রামাণ্য বলে ধরে নেবেন না। কারণ স্মৃতি ও শ্রুতি দুই-ই অনেক সময় প্রতারণা করে, সৃষ্টি করে বিভ্রমের।
পুরোপুরি স্মৃতিকথা বা জীবনকাহিনীও নয় আমার এ লেখাগুলো; আবার নয় গল্পও। তবে অ্যানেকডোট তো বলতে হয় গল্পের ঢংয়েই। আমি তাই বিবরণগুলো গল্পের মতো করেই দেয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু গল্প তো কাল্পনিক কিংবা কল্পনার রঙ মেশানো। আমার অ্যানেকডোটগুলো কাল্পনিক কিংবা কল্পনার রঙে রাঙানো নয় মোটেও। এগুলো পুরোই বাস্তব এবং নিরেট সত্য।
অ্যানেকডোটের সার্বজনীন ও সর্বজনগ্রাহ্য কোনো সংজ্ঞা বা কাঠামো নেই। তবে তাৎপর্যপূর্ণ কোনো ঘটনা কিংবা বিশিষ্ট কোনো ব্যক্তিত্বের জীবনের চমকপ্রদ দিকের মজাদার বিবরণকেই সচরাচর অ্যানেকডোট বলে ধরা হয়। অ্যানেকডোট কোনো কিছুরই পূর্ণ নয়, খণ্ডচিত্র বলে এগুলো আকারে নাতিদীর্ঘ হওয়াই বাঞ্ছনীয়। আমার দু'-একটি লেখা একটু দীর্ঘ হয়ে গেছে। তবে তাতে অসিদ্ধ কিছু হয়েছে বলে আমার মনে হয় না। অনেক বড়ো ক্যানভাসে ঘটা কোনো ঘটনা কিংবা কোনো ব্যক্তির বর্ণালী জীবনের সুবিস্তৃত পটভূমি গুটিয়ে ছোটো করে আনারও একটা মাত্রা ও সীমা থাকে। যখন আরো বেশি কাটছাঁট করতে গেলে অঙ্গহানি বা বিকৃতির আশংকা দেখা দেয়, তখন বর্ণনাকে আরেকটু লতিয়ে ওঠার সুযোগ দিতেই হয়। তাতে হলোই বা একটু দীর্ঘ - মহাভারত তো অশুদ্ধ হয়ে যায়নি কিংবা হয়নি মাত্রাছাড়া প্রলম্বিত।
এই অ্যানেকডোটগুলো মিলিয়ে বই করবার সময় রাজনীতিকেই শিরোনাম করেছি। কারণ রাজনীতি, রাজনীতি সংশ্লিষ্ট ঘটনাবলী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাই মূলতঃ কাঠামো ও অবয়ব গড়ে তুলেছে আমার গল্পগুলোর। এর মাঝে এসে গেছে সাহিত্য, সংষ্কৃতি, ও সাংবাদিকতা অঙ্গনের কিছু ঘটনা। অন্য অঙ্গনের সেলিব্রিটিদের আনাগোনাও আছে আমার দু'-একটি লেখায়। এতে করে কেউ প্রশ্ন করতেও পারেন রাজনীতির সদরে-অন্দরে ওরা কারা আগন্তুক? আমার কৈফিয়ত হচ্ছে, এই আধুনিককালে আলোচিত ও সচেতন কোনো ব্যক্তিই কি রাজনীতি-বিযুক্ত? বিশেষ করে আমার গল্পগুলোয় এ ভূখণ্ডের রাজনৈতিক ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ যে সময়কাল প্রতিফলিত হয়েছে, সে সময়ে আমাদের দেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি সাংবাদিকতার অঙ্গনে প্রায় সকল ব্যক্তিত্ব এবং উল্লেখযোগ্য ঘটনারই রাজনৈতিক সংশ্লেষ অনস্বীকার্য। আর তাই রাজনীতির সদর-অন্দরে তারা কেউ অপাংক্তেয় ছিলেন না এবং তাদের সমকালীন ঘটনাবলীকেও রাজনীতির সঙ্গে মলাটবন্দী করলে খুব বেশি দোষ করা হবে না বলেই মনে হয়েছে আমার।
আমি নিজে একজন সামান্য লেখক-সাংবাদিক। দলীয় রাজনীতির পদ-পদবীর বাইরে থাকলেও আমার নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাসগত একটা অবস্থান রয়েছে এবং সেটা বেশ শক্ত। আমি একটা সময়ে দলীয় না হলেও রাজনৈতিক দায়িত্বও পালন করেছি। সে কারণে আমার একটা রাজনৈতিক বলয়ভুক্ত পরিচয়ও গড়ে উঠেছে। এমন বিশ্বাস ও পরিচয় ধারণ করে রাজনৈতিক ঘটনা ও রাজনীতিবিদদের নিয়ে লিখতে গেলে নির্মোহ ও পক্ষপাতমুক্ত থাকা বেশ কঠিন। কিন্তু আমি আমার গল্পগুলোয় পুরোপুরি নির্মোহ বা পক্ষপাতহীন না হলেও সত্যনিষ্ঠ থাকার শতভাগ চেষ্টা করেছি। সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি রাজনৈতিক কোনো লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নিয়ে না লিখবার। আমি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ যতদূর সম্ভব এড়িয়ে ঘটনা বলে গেছি। পাঠককে সুযোগ ও স্বাধীনতা দিয়েছি তার নিজের মতো করে সিদ্ধান্তে পৌঁছার। আমার সে চেষ্টা কতটা সফল হয়েছে সেটা বলতে পারবেন পাঠকেরাই।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।