Apan Desh | আপন দেশ

থার্টি ফার্স্টের আনন্দ যেন বিষাদ না হয়

এসএম শামীম

প্রকাশিত: ১৫:২৮, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

আপডেট: ১৮:৪২, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

থার্টি ফার্স্টের আনন্দ যেন বিষাদ না হয়

এসএম শামীম, সাংবাদিক ও লেখক। ছবি: আপন দেশ

থার্টি ফার্স্ট নাইট (ইংরেজি নববর্ষ) মানেই- আনন্দ, উদযাপন। পুরাতনকে বিদায় নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রতি বছরই পালিত হয় দিবসটি। ফানুস ওড়ানো আর আতশবাজিতে কেঁপে ওঠে রাতের আকাশ-বাতাস! এছাড়াও থাকে নানা আয়োজন।

প্রতি বছরই থার্টি ফার্স্টে আমরা উপভোগ করি রাতের আকাশে রঙিন আলোর খেলা। অন্যদিকে রাত না গড়াতেই পরিণত হয় বিষাদ। ফানুস ওড়ানো-আতশবাজিতে ঘটে অপ্রীতিকর ঘটনা।

একবারও কি ভেবেছিআমাদের উৎসবকত নিরীহ প্রাণের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়? ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনে ফানুসের আগুন আর পটকার বিকট শব্দ কতোটা প্রভাব ফেলে আমাদের চারপাশে? প্রকৃত অর্থে আনন্দ আমরা কি ভাবে দেখবো?

গত বছর নববর্ষের অনুষ্ঠান নিষেধ থাকলেও ফানুসে ভরপুর ছিল ঢাকার আকাশ। আতশবাজিতে কেঁপে উঠেছিল রাজধানী। ফানুসে বিভিন্ন এলাকায় অগ্নিকাণ্ড আর পটকার বিকট শব্দে অসুস্থ হয় অনেক শিশু-বয়স্ক। এমনকি শিশু মৃত্যুসহ মেট্রোরেলের বিদ্যুৎ লাইন ক্ষতিগ্রস্তের খবরও আসে গণমাধ্যমে। শুধু তাই নয়, পটকার বিকট শব্দ পাখিদের জন্য আরও বেশি ক্ষতিকর। আহত হওয়ার পাশাপশি হার্ট অ্যাটাকে মারা যায় অনেক পাখি।

আতশবাজি ও পটকা ফোটানোর কারণে শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণ হয়। অতিরিক্ত শব্দদূষণে হৃদরোগ, স্ট্রোক ও মানসিক চাপের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া ফানুস উড়ানোর ফলে অগ্নিকাণ্ড ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয়।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ি গত বছর থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনে রাজধানীর অন্তত ১০ স্থানে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এছাড়া ঢাকার বাইরে এর সংখ্যা ছিল প্রায় ১৯০। সব মিলিয়ে গেল বছর ২০০ স্থানে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ফলে একদিকে মানুষের জানমালের ক্ষতি, অন্যদিকে আগুন আতঙ্কে ম্লান হয় নববর্ষ উদযাপন।

সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়- এবছর থার্টি ফাস্ট নাইটে রাজধানীতে আতশবাজি নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিস্ফোরক দ্রব্য, আতশবাজি, পটকা ফোটানো বা ফানুস ওড়ানো বন্ধ কাজ করছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ফানুস আতশবাজি বিক্রি কিংবা ওড়ানো-ফোটানোতে ধরা পড়লে ব্যবস্থা নেবে তারা।

এছাড়াও পটকা ফোটানো-ফানুস উড়ানো বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এমন কাজ করলে জেলা-জরিমানার আওতায় আনার কথা জানানো হয়েছে। 

শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ অনুযায়ী এসব কর্মকাণ্ড দণ্ডনীয় অপরাধ। প্রথমবার আইন লঙ্ঘনে এক মাসের জেল বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। পুনরায় অপরাধ করলে ছয় মাসের জেল বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।

যদিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রয়েছে বিভিন্ন নামের পেজ। যেখানে ফানুস-পটকা হোম ডেলিভারিতে বিক্রি করছে তারা। তাই দোকানে না গিয়েও ফানুস-পটকা কিনতে পারছেন অনেকে। ফলে, থেকেই যাচ্ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা।

সর্বপুরি ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনে ফানুস-আতশবাজির পরিবর্তে ঘরোয়া কোনো অনুষ্ঠান করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে- আমাদের আনন্দ যেন অন্যের জীবনে বিষাদ না হয়। নতুন বছরের আনন্দ প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে উদযাপন করলে সবার জন্যই মঙ্গল।

আসুন, এবারের থার্টি ফাস্টে আমরা প্রতিজ্ঞা করিফানুস ওড়ানো বা আতশবাজি নয়, আনন্দ হবে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে। পৃথিবী শুধুই আমাদের নয়, সব প্রাণীর। সবারই রয়েছে বেঁচে থাকার অধিকার।

লেখক: সাংবাদিক।

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়