Apan Desh | আপন দেশ

শিল্পী বিপাশা গুহঠাকুরতা: জন্মদিনে স্মরণ

লায়েকা বশীর

প্রকাশিত: ১১:৩৫, ১৬ আগস্ট ২০২৩

আপডেট: ১২:৫০, ১৬ আগস্ট ২০২৩

শিল্পী বিপাশা গুহঠাকুরতা: জন্মদিনে স্মরণ

লায়েকা বশীর, ফাইল ছবি

বিপাশা গুহঠাকুরতা দিদির সঙ্গে আমার পরিচয় হয় সম্ভবত ১৯৯৯ বা ২০০০ সালে। প্রিয় বন্ধু বিদিশার বড়দি তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি ও ছায়ানটে নজরুলসঙ্গীত শিখি। বিদিশা পরিচয় করিয়ে দিল দিদির সঙ্গে। তিনিও নজরুলের গানের সাধনায় রত। একদিন কলাবাগানে তার বাসায় আমার একটা গান শুনতে চাইলেন; শোনালাম। গান শেষে বললেন, ‘তুমি আমাদের সঙ্গে বসতে পারো। সুধীন কাকা’র (নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপিকার সুধীন দাশ) সঙ্গে আমরা প্রতি মঙ্গলবার বসি। তুমি আমাদের সাথে বসবে?’

এর উত্তর কখনোই ‘না’ হতে পারে না। সেই শুরু। সুধীন কাকার মতো বিশাল মাপের মানুষের সংস্পর্শ পাওয়া যে কত বড় ভাগ্যের ব্যাপার, আমার ধারণা, তখনো তা বুঝিনি। দিদির কাছে আমার এই ঋণ কী করে শোধ করি? 

বিপাশা দি’র বাসায় আয়োজিত সুধীন কাকার সেই মঙ্গলবারের ক্লাসে ছিলেন সুরাইয়া আপা, টুকু আপা, রক্সি আপা, রিমা আপা এবং বিপাশা দি। সর্বশেষ যুক্ত হয়েছিলাম সর্বকনিষ্ঠ এই আমি। সবার ছোট হওয়ার কারণেই হয়তো আমি সবচেয়ে বেশি আদর পেতাম (আমার তো সেরকমই মনে হতো)। বিশেষ করে সুধীন কাকা আমার সঙ্গে একদম অন্যরকম ভাষায়, বেশ প্রশ্রয়ের সুরে কথা বলতেন। এতে প্রায়শ বেশ লজ্জাতেই পড়তে হতো আমাকে। তবে প্রত্যেকের প্রতিই ছিল তার বিশেষ খেয়াল। আপাদমস্তক তিনি ছিলেন এক বিপুল স্নেহের আধার! এই ক্লাসে বিপাশাদি গানের ফাঁকে আপ্যায়নের ব্যবস্থা রাখতেন। নানারকম মুখরোচক নাস্তা আসত ঘরে। আমরা তখন গান শেখায় একটু বিরতি দিয়ে সেগুলোর সৎকার করতাম। সুধীন কাকা বিশেষ খেতে চাইতেন না, খেতেনও না। তার হজমের সমস্যা ছিল।

গানে আর আড্ডায় এই ক্লাস শেষ করতে রাত হয়ে যেত। তখন দিলীপদা (বিপাশা দির স্বামী) আর বিপাশাদি মিলে গাড়ি করে সুধীন কাকাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে বের হতেন। সেই গাড়িতে এই ক্ষুদ্র আমিও স্থান পেতাম। আমি আমার বাড়ির কাছাকাছি কোথাও নেমে যেতাম।

বলা হয়নি, বিপাশা দি-দীপদা-পিউ এই তিনের গৃহটি ছিল দেখবার মতো। এতো পরিপাটি, রুচিশীল গৃহ আমি বিশেষ দেখিনি। সেই গৃহের প্রতিটি কোণে ছিল বিপাশা দির যত্নের ছোঁয়া। অন্যদের সঙ্গে আমিও ছিলাম তার মুগ্ধ ভক্ত দর্শক। গুণমুগ্ধ যেমন ছিলাম, তার রূপমুগ্ধও ছিলাম আমি। সেইসঙ্গে ছিলাম তার গানে মুগ্ধ। সুমিষ্ট, সুকোমল, দরদী কণ্ঠের অধিকারী ছিলেন বিপাশাদি। মনে পড়ে, তার সিডির গান শুনে আমার মা খুব প্রশংসা করেছিলেন।

বিপাশা গুহঠাকুরতা, ফাইল ছবি

আজকের এই স্মৃতিচারণ সংক্ষিপ্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা বেড়েই চলছে। আজ আর বেশি লিখব না, যদিও বহু কথা জমে আছে, সেগুলো এখানে স্থান পাওয়ারে জন্য যেন তেড়ে আসছে।

কিন্তু আজ আমার মন ভালো নেই, কারণ গত ২৯ এপ্রিল ২০২২ রাতে বিপাশা দি কথা নেই, বার্তা নেই কোথায় যেন চিরতরে চলে গেছেন। আজ ১৬ আগস্ট দিদির জন্মদিন। চলে যাওয়ার পর এটি দিদির দ্বিতীয় জন্মদিন। তিনি বেঁচে থাকবেন তার গাওয়া জাতীয় কবির গানে। তার প্রতিষ্ঠিত সংগঠন ‘প্রসঙ্গ নজরুল-সঙ্গীত’ এবং হাজারো ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ীর অন্তরে একজন সুন্দর মনের মানুষ ও শিল্পী হিসেবে তিনি বেঁচে থাকবেন। জন্মদিনে গভীর শ্রদ্ধায় বিপাশা দিদিকে স্মরণ করছি।

লায়েকা বশীর : সঙ্গীতশিল্পী, কথাশিল্পী এবং ভাষা আন্দোলন গবেষক বশীর আলহেলালের কন্যা।

আপন দেশ/আরএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়