বক্তব্য রাখছেন জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের
লক্ষ্মীপুর: জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগ স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ চালাচ্ছে। এমন বাস্তবতায় মানুষের কথা বলার অধিকার, সমালোচনার অধিকার এবং গণমাধ্যমের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ভোটাধিকার নিশ্চিত হলেই সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের দল হলে তাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে কেউ জিতবে, কেউ হারবে... এটাই স্বাভাবিক।
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, জনগণের জন্য সত্যিকারের উন্নয়ন করলে আপনাদের ভয়ের কী আছে ? সবাই মিলে একটি নির্বাচনী পদ্ধতি তৈরি করা জরুরি।, যারা মাধ্যমে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। যাতে মানুষের সব অধিকার নিশ্চিত হয়। জাতীয় পার্টির ওপর অনেক বিপদ আসবে। রাজনীতিতে টিকতে হলে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। সিংহের মত একদিন বেঁচে থাকা বিড়ালের মত হাজার বছর বেঁচে থাকার চেয়ে উত্তম।
শনিবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে লক্ষ্মীপুর টাউনহল মাঠে জেলা জাপা আয়োজিত সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
জাপা প্রধান বলেন, আমাদের সংবিধান বারবার ভাঙাচুর করা হয়েছে। এখন সংবিধান অনুযায়ী শতভাগ ক্ষমতা সরকারের হাতে। এই সংবিধানে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সংবিধানে সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয় না। তাই জনগণ মোটেও উপকৃত হয় না। জবাবদিহিতামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো অকার্যকর করা হয়েছে। এখন একজনের হাতে সব ক্ষমতা কিন্তু জবাবদিহি নেই। জনগণের সমালোচনা, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ এর অধিকার থাকলে সরকার জানতে পারে, জনগণের জন্য কিছু কাজ করার সুযোগ থাকে। জনগন ভোটের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন করতে পারলেও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়।
তিনি বলেন, বিভিন্ন আইন করে এখন মানুষের কথা বলার অধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মতামত দিয়ে অনেকেই বিপদে পড়েছেন। আবার, সাধারণ মানুষের ধারণা ইলেকশনের নামে সিলেকশন হচ্ছে। ভোট নিয়ে মানুষের মধ্যে দ্বিধা আছে। সাধারণ মানুষ মনে করে ভোট দিলেও সরকার পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। অনেকে বলেন আমরা ভোট দিতে পারি না, ভোট কেন্দ্র দখল করে রাখা হয়। ভোটের অধিকার থেকে মানুষ বঞ্চিত করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আওয়মী লীগ ভোট কেন্দ্রে ও ফলাফল ঘোষণার জায়গায় দলীয় লোকজন বসিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা করায়ত্ব করেছে। জবাবদিহিতা না থাকায় সরকার জনগণের ভাষা বুঝতে পারে না, অজান্তেই অনেক কাজ করে ফেলে যাতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশাল পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনী দিয়ে মানুষের অধিকার ও জীবনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করেছে। ভোটের অধিকার না থাকলে দেশের প্রতি মানুষের মালিকানা থাকেনা। বাক স্বাধীনতা না থাকণে মানুষের রাজনৈতিক অধিকার থাকে না।
জি এম কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নাকি বলেছেন আগামী নির্বাচন মুক্তিযুদ্ধের পর আরেকটি যুদ্ধ। আগামী নির্বাচন নাকি হবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ও বিপক্ষে। আসলেই আগামী নির্বাচন হবেমুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ও বিক্ষে। আমরা বিশ্বাস করি আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি নয়। আওয়ামী লীগ বৈষম্য এবং দেশের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি করেছে। এই বৈষম্য দূর করতে অনেক বছর লাগবে। কেউ পাঁচ হাজার টাকা আয় করতে পারছে না, আর কেউ পাঁচশ কোটি টাকা আয় করছে।
তিনি বলেন, ২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী ৩ হাজার ৬৭৯টি সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর। এরমধ্যে ১ হাজার ৫৫৯টি বাড়ি-ঘর লুট করা হয়েছে। ১ হাজার ৬৭৮টি মন্দির ও মূর্তি ভাঙচুর করা হয়েছে। হামলায় অন্তত ১১ জন খুন হয়েছে। এই হামলায় জড়িত সবাই আওয়ামী লীগের।
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শক্তিশালী দল হলেই হবে না, রাজনীতিতে সফল হতে হলে জনগণর পক্ষে রাজনীতি করতে হবে। এমন কর্মসূচি দিতে হবে জনগণ যেন স্বেচ্ছায় আমাদের রাজনীতিতে অংশ নেয়। জাতীয় পার্টির রাজনীতি নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি আছে। দীর্ঘদিন আমাদের রাজনীতি নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছে, ষড়যন্ত্র এখনো আছে। কোনো দলের বি-টিম হয়ে কিছু সংখ্যক লোক সুবিধা পেতে পারে। এতে জনগণের মধ্যে অবস্থান তৈরি হয় না। দেশের মানুষের মনের কথা বলে রাজনীতি করলেই, মানুষ তা গ্রহণ করবে। ত্যাগ স্বীকারের জন্য জাতীয় পার্টি নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত থাকতে হবে। জাতীয় পার্টিকে কয়েকবার ভাঙা হয়েছে, আবারো ষড়যন্ত্র হতে পারে। মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা ঠিক থাকলে, উপরের নেতারা কে কী করলো তা দেশবাসী দেখবে না। সঠিক রাজনীতি নিয়ে এগিয়ে যেতে পারলে আমরা সফল হব।
তিনি বলেন, ব্রিটিশ আমলে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে, তা শুধু আওয়ামী লীগ করেনি। আওয়ামী লীগের অনেক অবদান আছে, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন দল ও মতের মানুষ অংশ নিয়েছে। সাধারণ মানুষ দলমত নির্বিশেষে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। আবার, ১১টি সেক্টরে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তারা কেউই আওয়ামী লীগ করতো না। বীর শ্রেষ্ঠদের তালিকা দেখলে দেখা যাবে তারা কেউই আওয়ামী লীগ ছিল না। কৃষক-শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ সাবাই জীবন বাজী রেখে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছেন। তাই কোন দল যদি মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা যুদ্ধের এককদাবীদার হন, তা অবশ্যই ভুল।
জেলা জাপা আহ্বায়ক ও দলীয় চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মোহাম্মাদ উল্লাহর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব ও চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান মাহমুদের সঞ্চালনায় সম্মেলনেেআরও বক্তব্য রাখেন- জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, মহাসচিব বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, কো- চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি,আলহাজ্ব শফিকুল ইসলাম সেন্টু,ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি,লে. জে. (অব.)মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এমপি, অ্যাড. মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, এমরান হোসেন মিয়া, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মোহাম্মদ নোমান , ভাইস চেয়ারম্যান আহসান আদেলুর রহমান এমপি, যুগ্ম মহাসচিব মো. বেলাল হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা বোরহান উদ্দিন মিঠু, মোতাহার হোসেন চৌধুরী রাশেদ,।
স্থানীয় নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- একেএম জাহাঙ্গীর আলম, সৈয়দ জিয়াউল হুদা আপলু, আলমগীর হোসেন, নোমান, মনু, বাহার।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন-চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম মিলন, যুগ্ম মহাসচিব- ফখরুল আহসান শাহজাদা, দফতর সম্পাদক এমএ রাজ্জাক খান, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জহিরুল ইসলাম মিন্টু, মো. গোলাম মোস্তফা, প্রাদেশিক বিষয়ক সম্পাদক খোরশেদ আলম খুশু, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইন্জিনিয়ার এলআহআন উদ্দিন, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক আজাহারুল ইসলাম সরকার, কেন্দ্রীয় নেতা শেখ শিপন, জাতীয় ওলামা পার্টির আহ্বায়ক ড. এরফান বিন তোরাব আলী প্রমুখ।
আপন দেশ/এমএমজেড
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।