ফাইল ছবি
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। চলছে ২৭ দিন। অন্তঃত ১৫ রোগে আক্রান্ত তিনি।
গত কয়েকদিন ধরে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে। লিভার সিরোসিস থেকেই সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক জটিলতা বাড়ছে। লিভার সিরোসিসের কারণে শরীরে প্রোটিন কমে যাচ্ছে।পেটে পানি চলে আসছে। প্রতিনিয়ত তা অপসারণ করতে হচ্ছে। হাসপাতালের কেবিনে চলছে তাঁর চিকিৎসা।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের এক সদস্য এমন খবরই জানিয়েছেন আপন দেশকে। এই মুহূর্তে প্রয়োজন ছিল ম্যাডামকে বিদেশে নিয়ে তার লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করা। যেটা বাংলাদেশে সম্ভব নয়-জানান ওই চিকিৎসক।
তিনি আরও জানান, যথাযথ চিকিৎসা না হওয়ার কারণে ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। তার পায়ের বাতের ব্যথা বাড়ছে। হার্টের সমস্যা রয়েছে। মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছে। তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। খালেদা জিয়াকে কতোদিন হাসপাতালে থাকতে হবে- এ প্রশ্নের জবাবে মেডিকেল বোর্ডের ওই সদস্য জানান, এটা নির্ভর করছে তার সুস্থতার ওপর।
আরও পড়ুন<<>> খালেদা জিয়া হাসপাতালে ভর্তি
বিএনপি’র স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, যেভাবে আশা করেছিলাম ম্যাডামের শারীরিক অবস্থার সেভাবে উন্নতি হচ্ছে না। লিভার সিরোসিসের সমস্যার কারণে শরীরে অন্য প্যারামিটারের জটিলতাগুলো বাড়ছে। হার্ট-কিডনিতেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। মেডিকেল বোর্ড আগেই পরামর্শ দিয়েছিল- ম্যাডামকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করানোর জন্য। তখন সরকার অনুমতি দিলে আজকে এই সমস্যাটা হতো না। এখন মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ীই তার চিকিৎসা চলছে। তারা জানিয়েছে, সহসাই ম্যাডামকে বাসায় নেয়া সম্ভব হবে না। হাসপাতালে রেখেই চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।
এদিকে রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে দলীয় প্রধানকে দেখতে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। খালেদা জিয়ার শয্যার পাশে দীর্ঘ ৪০ মিনিট অবস্থান করেন তিনি। এসময় তিন বারের এই প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে। দেশে করোনা মহামারি শুরুর পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাঁকে সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে সাময়িক মুক্তি দেয়া হয়। সেই থেকে তিনি গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় অবস্থান করছেন। ৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, অস্টিও আর্থাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদণ্ড, ঘাড়, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
২০২১ সালের এপ্রিলে কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে কয়েকবার নানা অসুস্থতার কারণে তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। গত বছরের জুনে বুকে ব্যথা অনুভব করলে খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেয়া হয়। এরপর এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। চলতি বছরের ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে সময় হাসপাতালে পাঁচদিন চিকিৎসা শেষে তাঁকে বাসায় নেয়া হয়। সর্বশেষ গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় খালেদা জিয়াকে। এরপর থেকে ২৭ দিন ধরে হাসপাতালে রয়েছেন তিনি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে মোট ৩৭টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুই মামলায় তিনি কারা ভোগ করছেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ১০ বছর এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তাঁকে সাত বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আর নাইকো মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।