ছবি: আপন দেশ
সরকার পতনের একদফা দাবিতে আগামী ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত ফের লাগাতার কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। ৯ অক্টোবর খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর দাবিতে ঢাকাসহ সারা দেশে জেলা ও মহানগরে সমাবেশ ও মিছিল, ১২ অক্টোবর সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে ঢাকায় ছাত্র কনভেনশন। ১৪ অক্টোবর ঢাকাসহ সারা দেশে জেলা ও মহানগরে অনশন, ১৬ অক্টোবর ঢাকায় যুব সমাবেশ এবং ১৮ অক্টোবর ঢাকায় জনসমাবেশ।
বৃহস্পতিবার ( ৫ অক্টোবর) রাতে চট্টগ্রামে রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ঢাকার জনসমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সেই কর্মসূচিই হবে শেষ কর্মসূচি।
বিএনপি মহাসচিব সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, দুর্গাপূজার মধ্যে শুভবুদ্ধির উদয় হোক। পদত্যাগ করুন, নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। অন্যথায় সেই ক্ষমতা জনগণই দখল করবে। আর যদি অন্যায়ভাবে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, হামলা, গায়েবি মামলা করা হয় দেশের মানুষ প্রতিরোধ করবে। সেই প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে বিজয় আসবে।
তিনি ১৮ অক্টোবরের মধ্যে সরকারকে ক্ষমতা ছাড়ার আলটিমেটাম দিয়ে বলেন, না হয় জনতাই সেই ক্ষমতা দখল করবে।
এর আগে সকালে কুমিল্লায় রোডমার্চের উদ্বোধনী সমাবেশে মির্জা ফখরুল প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, আমেরিকা থেকে ঘুরে এসেছেন খালি হাতে। বহু চেষ্টা করেছেন ভিসানীতি বাতিলের। তারা (আমেরিকা) শোনেনি। বাংলাদেশের মানুষও শোনে না আপনার কথা। এ অবস্থায় আপনি পদত্যাগ করুন। একটি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন। আমরা ভোট দিতে চাই। এবার আমাদের ভোট আমরা দেব। ভোট চুরি আর করতে দেওয়া হবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সরকারের দেহটা আছে, কিন্তু প্রাণ নেই। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে তারা এখন পাগল হয়ে গেছে। এদের হাতে আর সময় নেই। অল্প সময়ের মধ্যেই বিদায় নিতে হবে। পতন সামনে দেখে পাগলের মতো আবোল-তাবোল বলছে। ভোট চোর এ সরকারের কোনো রক্ষা নেই।
প্রথম ধাপের টানা কর্মসূচি কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রোডমার্চ দিয়ে শেষ হয়। যা ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছিল। এদিন কুমিল্লা থেকে বাস, মাইক্রোবাস, পিকআপ, মোটরসাইকেলের বিশাল বহর নিয়ে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চ শুরু হয়। মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে ১৫৫ কিলোমিটারের দীর্ঘ এ রোডমার্চে ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন।
বিএনপির রোডমার্চ ঘিরে চট্টগ্রামে নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা গেছে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা। দুপুর থেকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে নগরী ও চট্টগ্রাম জেলা, কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে নেতাকর্মী মিছিল-স্লোগান সহকারে সমাবেশে যোগ দেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রোডমার্চ সিটি গেট এলাকায় প্রবেশ করলে নগর বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের পক্ষে স্বাগত জানানো হয়। নগরীর কাজীর দেউড়িতে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের মধ্য দিয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ কর্মসূচি শেষ হয়।
সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, একটা কথাই মানুষ শুনতে চায়, শেখ হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী) কবে যাবে। খালেদা জিয়াকে হত্যার ষড়যন্ত্র আপনার মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছে। পুলিশ বাহিনীকে উদ্দেশে করে তিনি বলেন, আর অযথা অন্যায় হুকুমের মধ্যে দিয়ে হত্যা, অত্যাচার, গায়েবি মামলা দেবেন না।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ নামের দলটা এখন আর রাজনৈতিক দল নেই। পুলিশ, র্যাব, প্রশাসন মিলে একটি রেজিমেন্ট তৈরি হয়েছে। পক্ষান্তরে বিএনপির রাজনীতি দেশের জনগণকে নিয়ে। সারা বিশ্বের কাছে এই সরকার ভোটচোর হিসাবে খ্যাতি পেয়েছে।
নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন- ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, বরকতউল্লা বুলু, মো. শাহাজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, ছাত্রদলের রাশেদ ইকবাল খানসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।