Apan Desh | আপন দেশ

ড. শিরীনকে পৃথিবীর ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ স্পিকার আখ্যা দিল জাপা এমপিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:৩৩, ২ নভেম্বর ২০২৩

ড. শিরীনকে পৃথিবীর ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ স্পিকার আখ্যা দিল জাপা এমপিরা

ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী

একাদশ জাতীয় সংসদের শেষ দিনে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন সংসদের প্রধান বিরোধীদল জাতীয় পার্টির এমপিরা। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী ড. শিরীন শারমিনকে বাংলাদেশের এবং পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্পিকার হিসেবে উল্লেখ করেন।

বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) চলতি একাদশ সংসদের শেষ কার্যদিবসে সংসদ পরিচালনায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন তারা।

একটি বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাপার অন্যরা স্পিকারের উদ্দেশ্যে বলেছেন, সংসদে অনেকের বিরুদ্ধে সমালোচনা করেছি এবং কঠোরভাবে সমালোচনা করেছি। আপনি সেসব শুনেছেন। কখনো উগ্রভষায় জবাব দেননি। আপনি আমাদের প্রতি অত্যন্ত স্নেহাশীল ছিলেন।

বক্তব্যের এক পর্যায়ে শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, স্পিকার শিরীন শারমিনের হাসি দেখলে মন ভালো হয়ে যায়। তিনি বলেন, আপনার হাসি খুব সুন্দর। আপনাকে যখন দেখতে যাই, আপনার হাসি দেখতে মন ভালো হয় যায়। তিনি আরও বলেন, তিনজনের হাসির কথা বলা হয়। মাধুরী দীক্ষিত, রেনুকা সাহানে এবং জুলিয়া রবার্ট। তারা যদি জজের সামনে হাসি দেন, তাহলে জজও তাদের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দিতে পারবেন না। চতুর্থ হিসেবে আপনি এখানে থাকবেন।

ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, আপনি অত্যন্ত ফেয়ারলি সংসদ চালিয়েছেন। বিরোধী দলের অনেকে অনেক কিছু বলেছে। আপনি এমনভাবে চালিয়েছেন যে সংসদ পরিচালনা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার কারো নেই বা সেই সুযোগও নেই। যখন বিএনপির বন্ধুদের সঙ্গে বসি তারাও কখনো আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে পারেনি। আপনি সেভাবে তাদের সময় দিছেন। আমাদের সময় দিয়েছেন', তিনি বলেন। শামীম হায়দার পাটোয়ারী আরও বলেন, সংসদে অনেকের বিরুদ্ধে সমালোচনা করেছি এবং কঠোরভাবে সমালোচনা করেছি। আপনি সেসব শুনেছেন। কখনো উগ্র ভষায় জবাব দেননি। আপনি আমাদের প্রতি অত্যন্ত স্নেহাশীল ছিলেন।

এ ছাড়াও এদিন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু, কাজী ফিরোজ রাশিদ, পীর ফজলুর রহমান, হাফিজউদ্দিন আহমেদও বিভিন্ন বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে স্পিকারের প্রশংসা করে বক্তব্য দেন।

বিলের ওপর আলোচনা কালে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম স্পিকারকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনার নেতৃত্বে আমরা এই ১০ বছর (দুই টার্ম) কাটালাম। এজন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনি জীবনে আরও এগিয়ে যান। আরও নেতৃত্ব দেন।

তিনি বলেন, আজকে আবহাওয়াটা এমন হয়েছে, যেন আজকেই শেষ।  আগেই বলেছি, আজকে বোধহয় শেষ হবে। আমরা কে কী কোথায় কীভাবে থাকি জানিন না। পরে তিনি ‘তবু মনে রেখো‘ কবিতা আবৃত্তি করে শোনান। 

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমি একটু অন্যভাবে বলতে চাই। একটু বিষাদের মতো। বলতে চাই, বিদায় দে মা আবার ঘুরে আসি। আবার ঘুরে আসি। স্পিকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনার সঙ্গে আমার একাধিক সম্পর্ক। একটি হচ্ছে এই সংসদে আপনি আমার স্পিকার। আরেকটা হচ্ছে, আপনি আমার এলাকার বউমা। আমার আগের স্পিকার ছিলেন আমার এলাকার জামাতা। দুই জন স্পিকারের শ্বশুর বাড়ি আমার এলাকায়। এটা অনেক বড় বিষয়।  আপনি আর আমি দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিভাগের স্টুডেন্ট। আমি টেনেটুনে পাস করা। আপনি ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট। অক্সফোর্ডের পিএইচডি করা। ঢাবির ছাত্র হিসেবে আমরা আপনাকে নিয়ে গর্ববোধ করি। আপনি সফল স্পিকার, আপনার জন্য দোয়া করি।

জাতীয় পার্টি সংসদে প্রকৃত বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করেছে দাবি বরে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। আমরাও সংসদে অপজিশন। আমি মনে করি, বিরোধী দলের এমপিরা আমরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছি। এমন কোনও বিল নেই, যেটা নিয়ে আলোচনা  করিনি। জনগণের স্বার্থে এমন কোনও ইস্যু নেই, যেটা নিয়ে কথা বলিনি। প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনাও আমরা করতে পেরেছি। কোনোরকম বাধা পায়নি। আমাদের ভূমিকাটি ছিল সন্তুষ্টির জায়গা।

একই দলের ডা. রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, আমরা জানি না ভবিষ্যতে কারা আসবেন। ইলেকশন হবে। জানি না কারা আয় (আসে)। আল্লাহ যাকে লিখে রাখছেন আরা আসবে। ক্ষমতা দেওয়ার মালিক আল্লাহ। সম্মান দেওয়ার মালিক আল্লাহ। এজন্য হতাশার কোনও কারণ নেই।

জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীসহ বর্ণাঢ্য ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসার সুযোগ পেয়েছি। শেষ দিনের শেষ কার্যদিবস। কথা বলার অবারিত সুযোগ করে দিয়েছিলেন। আমরা বার বার কথা বলেছি। মানুষের স্বার্থে কথা বলেছি। কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করার জন্য কথা বলিনি। কোনও মন্ত্রীর থেকে ব্যক্তিগত সুবিধা আদায়ের জন্য কথা বলিনি। যাইনি।

একই দলের রওশন আরা মান্নান বলেন, দুই বছর করোনার কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। তিন বছর আমরা তেমন কোনও কাজ করতে পারি। এ বিষয়টি যেন প্রধানমন্ত্রী স্মরণ রাখার অনুরোধ করেন। পরে দলটির আরেক সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, উনি পরোক্ষভাবে সংসদের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলতে চাচ্ছেন।

স্পিকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনি সুন্দরভাবে সংসদ চালিয়েছেন। বিদেশে সম্মেলনে গিয়েছি। সব কিছু মিলিয়ে আমরা এই সংসদে ছিলাম। আবার কবে, আসতে পারি কিনা জানি না। হয়তো দেখাৃ এত বড় যায়গায় আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ আসতে পারে না। হয়তো অন্য কোথাও দেখা হবে। আজকে আমাদের শেষ সংসদ। আবার আসতে পারবো কিনা জানি না। আমরা কোনও ভুলত্রুটি করলে ক্ষমা করবেন। আপনাকে কখনও ভুলতে পারবো না। সংসদ নেতা, বিরোধী দলীয় নেতা আমরা একসঙ্গে ছিলাম। আবার একসঙ্গে কবে হবো আল্লাহ জানেন।

রওশন আরা মান্নানের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, আমাদের সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নান বললেন, দুই-তিন বছর নষ্ট হয়ে গেছে। উনি পরোক্ষভাবে সংসদের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলতে চাচ্ছেন। আমি যেটা বুঝেছি। উনি পরোক্ষভাবে বলেছেন, আমি সোজা মানুষতো তাই সোজাভাবে বললাম। একটু বিবেচনা করে দেখতে পারেন।

২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করে একাদশ জাতীয় সংসদ। এ হিসাবে চলতি সংসদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২৯ জানুয়ারি। সংসদের মেয়াদ আরও তিন মাসের মতো থাকলেও অধিবেশন আর বসছে না। সংবিধান অনুযায়ী ৬০ দিনের মধ্যে সংসদের অধিবেশন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে, সংসদ নির্বাচনের স্বার্থে মেয়াদের শেষ ৯০ দিনের মধ্যে এই বিধানটি সংবিধানেই শিথিল করা হয়েছে। গত ১ নভেম্বর থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৯০ দিনের কাউন্টডাউন্ট শুরু হয়েছে।

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়