ফাইল ছবি
কিছুদিন আগেও তাঁরা ছিলেন বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। ছিলেনে দলের নীতিনির্ধারকও। দীর্ঘ একযুগের বেশি সময় ধরে তারা ছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকার প্রধান শেখ হাসিনার তীর্যক সমালোচক। চেয়েছেন পদত্যাগও। তাকে টেনে নামানোর মতো হুমকি দিয়েছেন।
চিত্র বদলে গেছে। তারাও ভোল ও দল পাল্টিয়েছেন। এখন তারাই শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এখন কেউ কেউ কিংস পার্টির কর্ণধার। আবার কেউ আছেন স্বতন্ত্র। তবে চাউর রয়েছে- তাদের প্রতি ক্ষমতাসীনদের নেক নজর রয়েছে। অন্যদিকে আলোচনা রয়েছে-‘চাপের’।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বিএনপি। তবে দলটির একাধিক হেভিওয়েট নেতা দল থেকে বের হয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। কেবল বিএনপির পদে থাকা নেতারা নন, অতীতে বহিষ্কার, পদচ্যুত অথবা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করা নেতারাও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এসব নেতা দল ছাড়লেও এতদিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।
নির্বাচন কমিশন থেকে পাওয়া তথ্যমতে, বিএনপি থেকে বহিষ্কার হওয়া তিনজন ভাইস চেয়ারম্যান, দু’জন উপদেষ্টা, দলের মধ্যম সারির কয়েক নেতা, সাবেক কয়েকজন সংসদ সদস্য এবং মাঠপর্যায়ের প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন নেতা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এদের মধ্যে কেউ বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন (বিএনএম), কেউ তৃণমূল বিএনপি আবার কেউ বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এমনকি একজন প্রভাবশালী নেতা আওয়ামী লীগ থেকেও নির্বাচন করছেন।
মনোনয়ন জমা দেয়ার শেষ দিনে এসে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক আইনপ্রতিমন্ত্রী মেজর (অব.) ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর চমক দেখিয়েছেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দলটির সঙ্গে যুক্ত প্রবীণ এই নেতা শেষ জীবনে এসে রাজনীতিতে ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে গেছেন। ঝালকাঠি-১ আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন তিনি। নৌকার প্রার্থিতা জমা দেয়ার আগে তিনি বিএনপির শীর্ষ নেতার সমালোচনা করে দল ত্যাগ করেন। বিএনপিও তাকে বহিষ্কার করেছে। এ আসন থেকে ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর ১৯৭৯, ১৯৯১, ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল থেকে ২০০৬ সালের ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত বিএনপি সরকারের আইন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী এই মুহূর্তে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন। তিনি সিলেট-৫ আসনে নির্বাচন করবেন। আর তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকার নির্বাচন করবেন নারায়ণগঞ্জ-১ আসন থেকে। দুদিন আগে তৈমুর আলম খন্দকারের একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। তাতে রয়েছে আসন বন্টন কেন্দ্রীক, পাওয়া না পাওয়ার ক্ষোভ।
বিএনপি থেকে বহিষ্কার হওয়া ভাইস চেয়ারম্যান প্রবীণ সাংবাদিক শওকত মাহমুদ নির্বাচন করবেন কুমিল্লা-৫ আসন থেকে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন মো. ইউনুস। সে বছর মনোনয়ন চেয়েও পাননি শওকত মাহমুদ।
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ একে একরামুজ্জামান স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তার নির্বাচনী আসন ব্রহ্মণবাড়িয়া-১। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পর তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিএনপি থেকে বেরিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে দলটির নির্বাহী সদস্য শাহ মো. আবু জাফর। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তার নির্বাচনী আসন ফরিদপুর-১। এ আসন থেকে ১৯৭৯ সালে আওয়ামী লীগের, ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির এবং ২০০৫ সালের উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আবু জাফর। এবার তিনি নোঙর প্রতীকে লড়বেন।
বিএনপি থেকে ছিটকে পড়া মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান (কিশোরগঞ্জ-২) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন। এ আসনে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
গাজীপুর মহানগর বিএনপি নেতা ও বাসন থানা বিএনপির সহসভাপতি জব্বার সরকার, সাবেক ছাত্রনেতা ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি মোজাফফর আহমেদ ও জাতীয়তবাদী আইনজীবী ফোরামের সহসভাপতি আব্দুল কাদির তালুকদার তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন।
দলে বড় কোনো পদ না থাকলেও বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বগুড়ার রাজনীতিতে পরিচিত মুখ সাবেক চারবারের সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মোল্লা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। তার নির্বাচনী আসন বগুড়া-৪। এ আসন থেকে ১৯৯৪ (উপনির্বাচন), ১৯৯৬ (১৫ ফ্রেব্রুয়ারি), ১৯৯৬ (জুন) এবং ২০০১ সালে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবার তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন। বিএনপির সংস্কারপন্থি সাবেক ১৩৪ এমপির মধ্যে তিনি অন্যতম।
এ ছাড়া কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য খন্দকার আহসান হাবিব (টাঙ্গাইল-৫) এবং দেলদুয়ার উপজেলা বিএনপির সদস্য খন্দকার ওয়াহিদ মুরাদ (টাঙ্গাইল-৬) স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
গাজীপুর- ১ আসনে জব্বার সরকার, ঠাকুরগাঁও- ২ আসনে মোজাফ্ফর আহমেদ এবং চাঁদপুর- ৪ থেকে আব্দুল কাদের তালুকদার পাটের আঁশ প্রতীকে লড়বেন। সরকার বাদল বগুড়া-৭ আসনে, দেলয়ার হোসেন খান দুল ময়মনসিংহ-৪ আসনে, ডা. আসমা শহীদ ফরিদপুর-২ আসনে, সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক নীলফামারী-৪ আসনে, মাওলানা মতিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে, বিউটি বেগম বগুড়া-২ আসনে, ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম ঝালকাঠি-২ আসনে, শাহ শহীদ সারোয়ার ময়মনসিংহ-২ আসনে এবং মো. শুকরান বগুড়া-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
দলের নেতাদের প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, বিএনপি দেশের বৃহৎ একটি রাজনৈতিক দল। এ দলে মনোনয়নপত্র পাওয়ার মতো নেতা আছে কমপক্ষে ৫ হাজার। গত নির্বাচনেও প্রায় ৩হাজার মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছিল। এখান থেকে জনবিচ্ছিন্ন এবং অপতৎপরতায় ল্পিত থাকা হাতেগুনা কয়েকজন বেরিয়ে গেলে তেমন কিছু হয় না।
তিনি বলেন, আজ তো গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরু বলেছেন, নির্বাচনে না গেলে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার মামলায় তাকে জেলে নেয়ার ভয় দেখানো হয়েছিল। সরকারের চাপে পড়ে যে কজন বেরিয়ে গেছেন, তাদের ছাড়াই দল ভালো মতো চলবে। সরকার বিএনপি ভাঙার যে প্রকল্প হাতে নিয়েছিল তাতো পারেনি। বিএনপি আগের চেয়ে অনেকগুনে শক্তিশালী।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।