Apan Desh | আপন দেশ

আ.লীগ-শরীক আসন ভাগাভাগি: আজ-কালের মধ্যে অপেক্ষা ফুরোবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩:২৮, ৫ ডিসেম্বর ২০২৩

আ.লীগ-শরীক আসন ভাগাভাগি: আজ-কালের মধ্যে অপেক্ষা ফুরোবে

ফাইল ছবি

অবশেষে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের আসন-সমঝোতার মাধ্যমেই ভোট করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সোমবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে জোটনেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে কোন কোন আসনে ছাড় দেবে ক্ষমতাসীন দল, সে ব্যাপারে জানানো হয়নি। সমঝোতার সুনির্দিষ্ট সময়ও বলা হয়নি। 

বৈঠকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের শরিক দলগুলোর আসন বণ্টনের জন্য চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা হলেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম। 

অবশ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে সমঝোতা অবশ্যই হবে। আজ অথবা কালকের মধ্যে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডি রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৪ দলের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির চেয়ে রাজনৈতিক আলোচনা গুরুত্ব পেয়েছে। প্রত্যেকে বর্তমান প্রেক্ষপটে নিউজদের ভিউজ, করণীয় জানিয়েছেন। দেশে-বিদেশে যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, সেই ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় ১৪ দল ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করে যাবে।

সোমবারের বৈঠকে অংশ নেয়া ১৪ দলীয় জোটের একাধিক নেতা জানান, জোটনেত্রীর সঙ্গে প্রায় চার ঘণ্টা মিটিং হয়েছে। ১৪ দলের সবাই সেখানে কথা বলেছেন। আসন দেয়ার ব্যাপারেও নেত্রী নিশ্চিত করেছেন। তার মানে, জোটের শরিক যে চারজন প্রধান আছেন, তারা নির্বাচন করবেন। বাকিদের ব্যাপারে গঠিত কমিটি কাজ করবে।

বৈঠকে অংশ নেয়া সূত্রগুলো বলছে, আসন নিয়ে সমঝোতা হলে শরিক দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবেন। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। তবে যেসব আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন, তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করানোর ব্যাপারে কোনো চেষ্টা চালাবে না আওয়ামী লীগ। জোটের শরিক দলের একজন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিষয়টি তোলেন। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি স্বতন্ত্র কাউকে বসে যেতে বলবেন না। কারণ, ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য তিনি ইতোমধ্যে স্বতন্ত্র দাঁড়াতে বলেছেন। ভোট উৎসবমুখর করার জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী দরকার আছে।

বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, শিগগিরই আসন বণ্টনের বিষয়ে সমঝোতা করে ফেলতে হবে। এরপরও কোথাও সমস্যা হলে তিনি দেখবেন। 

বৈঠকে উপস্থিত সূত্র জানায়, বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তৃতা করেন। এরপর শরিক দলের বেশ কয়েকজন নেতা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। এরপর খাবার টেবিলে আলোচনা হয়। 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে জানিয়েছেন, তিনি সংবিধানের বাধ্যবাধকতার বাইরে যেতে পারবেন না। দেশি-বিদেশি নানা চাপ, ষড়যন্ত্রের মধ্যে তিনি চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। নির্বাচন দেশে যথা সময়ে হবে। কেউ ঠেকাতে পারবে না।

আরও পড়ুন <> অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আবারো আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের

সূত্রগুলো জানায়, বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেছেন, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। কিন্তু তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। তিনি পিছপা হবেন না। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। দেশের জনগণের প্রতি তার আস্থা আছে।

বর্তমান সংসদে ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে প্রতিনিধিত্ব আছে ওয়ার্কার্স পার্টির তিনটি, জাসদের তিনটি এবং তরীকত ফেডারেশন ও জেপির একটি করে আসন। অর্থাৎ সব মিলিয়ে আটটি আসন রয়েছে তাদের। সব কটিতেই নৌকা প্রতীকে ভোট করে জয়ী হন শরিক দলের নেতারা। 

জোটের সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), জাতীয় পার্টি (জেপি), তরীকত ফেডারেশন ও সাম্যবাদী— এই দলগুলো সব মিলিয়ে ২৫টির মতো আসন তাদের অগ্রাধিকারের তালিকায় রেখেছে।

তবে আওয়ামী লীগ এবার ছয়-সাতটির বেশি আসন জোটের শরিকদের দিতে রাজি নয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শরিকদের বলেন, যেসব আসনে শরিকেরা ছাড় পাবে-এর বাইরেও শরিকদের প্রার্থী রাখতে হবে। তারা নিজ নিজ দলের প্রতীকে ভোট করবেন। এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়বে। 

এবার বেশ কিছু আসনে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারের ফেনী-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক নির্বাহী সদস্য আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী। বৈঠক শেষে শিরীন আখতারের আসন নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়। তবে সূত্র বলছে, এটি ছাড় না দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

একইভাবে তিনবারের সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন ঢাকা-৮ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেননি। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। রাশেদ খান মেনন বরিশালের দুটি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বর্তমানে এর একটি আসনে আওয়ামী লীগের এবং আরেকটিতে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রয়েছেন।

সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া চট্টগ্রাম-১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের মোশাররফ হোসেন নির্বাচন না করলে তাকে যেন জোটের প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু এই আসনে মোশাররফের ছেলে মাহাবুব উর রহমান মনোনয়ন পেয়েছেন। 

জাতীয় পার্টি জেপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলামের চাওয়া আসনেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী দিয়েছে। একমাত্র জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেয়নি।

২০০৮ সাল থেকে ১৪ দলীয় জোট একসঙ্গে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। জোটের নেতারা নৌকা প্রতীক নিয়েই নির্বাচন করে আসছেন।

আপন দেশ/আরএ

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়