আপন দেশ। ফাইল ছবি
সরকার পতনে বিএনপির আন্দোলন দৃশ্যত ব্যর্থ। নেতাদের ভাষ্য, রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছে রাজপথে ব্যর্থ হয়েছে। তবে দেশের মানুষ সঙ্গে আছে। সে বিশ্লেষণে না-ই বা গেলাম। মাঠে হেরে এবার ঘরেও দন্তহীন বাঘ বনে যাচ্ছে দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটি। দীর্ঘ বৈঠক করে তারা শীর্ষ নেতার কাছে আর্জি দিয়েছেন। দাবি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। তাকে বহিষ্কার করতে হবে।
বিএনপির সর্বোচ্চ এ ফোরামের সিদ্ধান্তকে থোরাই কেয়ার করছেন না খোকন। তিনি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব। নির্বাচিত হয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি হিসেবে। তার ভাষ্য, যা করেছি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশেই করেছি। তিনি মনোনয়ন দিয়েছেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি, বিজয়ী হয়েছি। এরপর যা করার তা-ই করছি। তার বাইরে কোথায়, কে কী বৈঠক করল, সিদ্ধান্ত নিল তা দেখার সময় আমার নেই।
বিএনপির মধ্য সারির নেতারা বলছেন, মাহবুব উদ্দিন খোকনের গোড়া অনেক শক্ত। তাকে ধাক্কা দিলেই নড়ে যাবে না, পড়েও যাবে না। জিয়া পরিবারের বিশ্বস্ত ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। ওই পরিবারের বিরুদ্ধে ১/১১ থেকে শুরু করে হালের অর্ধশত মামলা আইনজীবী তিনি।
বাড়ি নোয়াখালী। ছিলেন জাতীয় পার্টির নেতা। বিএনপিতে এসে একাধিকবার সংসদ সদস্য হয়েছেন। তার পেশা-রাজনীতির গুরু প্রয়াত ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। ১/১১-এর পর দেখেছি দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়াও খোকনের জন্য গুলশান কার্যালয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতেন।
যুগ্ম মহাসচিব পদধারী এক নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, বলতে গেলে জিয়া পরিবারের সদস্য মাহবুব উদ্দিন খোকন। আদালত অঙ্গনে তার জনপ্রিয়তা অনেক। যে কারিশমাতেই হোক বারবার নির্বাচিত হয়েছেন। তাকে দলের ‘বিষবিহীন ঢোরা সাপ’-এর মতো ব্যর্থ নেতাদের আর্জিতে বহিস্কার করবে এটা আপাতত আমি বিশ্বাস করি না। কিন্তু এ কথা যদি আমি অন দ্য রেকর্ডে বলি তাহলে নয়া পল্টনের চিঠি চলে আসবে...।
সুপ্রিম কোর্ট বারে দায়িত্বগ্রহণ নিয়েই নাটকীয়তা। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ মেয়াদের নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নীল প্যানেল থেকে নির্বাচন করেছিলেন মাহবুব উদ্দিন খোকন।
এবারের নির্বাচনও ছিল গেলোবারের মতো আলোচিত-সমালোচিত। ফলাফল ঘোষণা ঘিরে মারামারি থেকে শুরু করে কারচুপির অভিযোগও ছিল। মারামারির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী জাতীয়তাবাদী ফোরামের রুহুল কুদ্দুস কাজলকে কারাগারেও যেতে হয়।
বিতর্কের মধ্যেই ঘোষিত ফলাফলে মাহবুব উদ্দিন খোকন সভাপতি এবং সদস্যপদে তিনজন নির্বাচিত হয় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের প্যানেল থেকে। শুরু থেকেই ফোরাম, নির্বাচনের সমালোচনা করে আসছিল। ফলাফল বাতিল করে পুনঃনির্বাচনের দাবিও জানিয়েছে তারা। এমনকি সভাপতি নির্বাচিত হয়ে মাহবুব উদ্দিন খোকনও পুনরায় নির্বাচন দাবি করেছিলেন। তাই সভাপতির দায়িত্বগ্রহণে বিরত থাকতে ফোরামের নির্দেশনা অমান্য করে সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ তোলা হয় বারের নির্বাচিত এ সভাপতির বিরুদ্ধে।
শনিবার (৬ এপ্রিল) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ফোরামের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে ফোরামের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের অভিযোগ আনা হয় খোকনের বিরুদ্ধে।
প্রাথমিকভাবে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সংগঠন থেকে খোকনকে বহিষ্কারের বিষয়টি আলোচনা হয়। দলীয়ভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আর্জি জানানোর সিদ্ধান্তও নেয়া হয়।
আরও পড়ুন>> বিএনপি বাঙালি সংস্কৃতিকে সহ্য করতে পারে না: ওবায়দুল কাদের
এর আগে, গত ২৭ মার্চ জাতীয়তাবাদী ফোরাম সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী ও মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল চিঠি দিয়েছিল ব্যারিস্টার খোকনসহ ৪ জনকে। দায়িত্বগ্রহণ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ ছিল তাদের। কিন্তু বৃহস্পতিবার বারের সদস্য পদে বিজয়ী বাকি ৩ আইনজীবী দায়িত্বগ্রহণ না করলেও খোকন সভাপতির দায়িত্ব নেয়।
ব্যারিস্টার খোকন বলেন, ২১ এপ্রিল কমিটির প্রথম সভা। এরপর সংবাদ সম্মেলন করে আমি আমার অবস্থান স্পষ্ট করব।
এদিকে তৃণমূল নেতাদের মতে, খোকনের মতো দলের অনেকেই শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে সাংগঠনিক সাজাভোগ করছেন। কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে মনিরুল হক সাক্কু বিএনপি থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার হয়েছেন। এমন অনেক দৃষ্টান্ত আছে। এবার খোকনকে সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী ফোরাম বৈঠক করে দোষী সাভ্যস্ত করেছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে সুপারিশ করেছেন সে সুপারিশ যদি কার্যকর না হয় তাহলে স্থায়ী কমিটির প্রতি নেতাকর্মীদের কোনো আস্থা বা ভরসাই থাকবে না।
আপন দেশ/এবি/এসএমএ
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।