ফাইল ছবি
বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার আলোচনা ফের শুরু হয়েছে। ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর মুজিবনগর সরকার একবার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছিল। দ্বিতীয় দফায় নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ নামের সংগঠনটি। সরকারের নির্বাহী আদেশে। আজ বুধবাই। এমনটি জানিয়েছে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এর আগে সংগঠনটির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।
২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ বলে ঘোষণা করেছিল হাইকোর্ট। বাংলাদেশের গণপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন না থাকলে কোন রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না।
হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলও খারিজ হয়ে যায় ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর। জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন না থাকলেও রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা নিষিদ্ধ ছিল না।
সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে মানবতা-বিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে তদন্ত সংস্থা ২০১৪ সালের মার্চ মাসে ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্র-পক্ষের প্রধান কৌঁসুলির কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর তৎকালীন প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে প্রধান করে সাত সদস্যদের একটি প্রসিকিউশন দলও গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু আইন সংশোধন না হওয়ায় তা ১০ বছর পার হলেও সে বিচার এখনো শুরু হয়নি।
২০১৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ হবে কি না সেটি জানতে আদালতের রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তখন তিনি আশা প্রকাশ করেছিলেন, রায় শিগগির হবে।
তাদের নিষিদ্ধ করবার জন্য ইতোমধ্যে কোর্টে একটি মামলা রয়ে গেছে। সে মামলার রায়টা যতক্ষণ পর্যন্ত না হবে, সেখানে বোধ হয় আমরা কোন কিছু করতে পারি না। আমি আশা করি কোর্টের রায় খুব শীঘ্র হয়ে যায়, তাহলে জামাত তারা দল হিসেবে নিষিদ্ধ হবে।- সংসদে বলেছিলেন শেখ হাসিনা।
তবে প্রধানমন্ত্রী কোন মামলার কথা বুঝিয়েছেন সেটি তিনি পরিষ্কার করে বলেননি। প্রকৃতপক্ষে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার জন্য আলাদা কোন মামলা হয়নি।
২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, জামায়াতে ইসলামীর বিচার করার জন্য উপযুক্ত আইন থাকতে হবে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট ১৯৭৩ সংশোধন করা হচ্ছে। এটা মন্ত্রীপরিষদের অনুমোনের জন্য অপেক্ষমাণ- বলেন আইনমন্ত্রী
এরপর ২০২৩ সালের ১১ জুন আনিসুল হক ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে আবারো একই উত্তর দেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, জামাতকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচার করার জন্য যে আইন সংশোধন করার কথা আমি আগে বলেছি সে প্রক্রিয়া কিন্তু চলমান। সংশোধনের জন্য আইনটা ক্যাবিনেটে কিছুদিনে মধ্যে যাবে।
এর আগে ২০১৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বিবিসি বাংলার এক অনুষ্ঠানে তৎকালীন আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছিলেন, জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরে ১৯৭২ সালের সংবিধানর ৩৮ ধারা অনুযায়ী রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয় সে হিসাবে জামায়াতে ইসলামীর কর্মকাণ্ডও নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল।
পরবর্তীতে ১৯৭৬ সালে সংবিধানের ৩৮ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। এরপর প্রথমে ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ হিসাবে আরো কয়েকটি দলের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী আবার কর্মকাণ্ড শুরু করে। তবে ১৯৭৯ সাল থেকে নিজেদের নামেই কর্মতৎপরতা শুরু করে।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।