ছবি সংগৃহীত
স্বাস্থ্য অধিদফতরে বেশ কিছুদিন ধরে স্থবিরতা চলছে। তা নিরসনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. রোবেদ আমিনের অপসারণসহ ৭ দফা দাবি জানিয়েছে বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। দাবিগুলো মানা না হলে আগামীতে আন্দোলন বিস্তৃত করা হবে বলে হুঁশিয়ার দেন সংগঠনটির নেতারা।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের মহাসচিব ডা. মো. আবদুস সালাম। এ সময় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. রোবেদ আমিনের পেশাগত অসঙ্গতি ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরা হয়।
ড্যাব সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশীদ বলেন, মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রাজনীতি বন্ধ করার পক্ষে নই। যারা রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে চায় তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। মাথাব্যথা হলে তো মাথা কেটে ফেলা যায় না। রাজনীতি নিষিদ্ধের বিপক্ষে আমরা। তবে আমরা কলুষিত রাজনীতি কখনোই চাই না। অন্তর্বতী সরকারকে আমরা সহায়তা করতে প্রস্তুত। সেজন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টার পদত্যাগ আমরা চাই না। যদি কেউ স্বৈরাচারের পক্ষে অবস্থান নেন আমরা তার বিরুদ্ধে। আশা করি সরকার আমাদের দাবিগুলো মেনে নেবে। স্বাস্থ্য খাতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নিশ্চিত করবে।
স্বাস্থ্যখাতে স্থবিরতা ও সংকট নিরসনে ড্যাবের উত্থাপিত ৭ দাবি হলো-
১। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক পদের অযোগ্য দুর্নীতিবাজ ফ্যাসিবাদের দোসর ডা. রোবেদ আমিনসহ অন্যান্য সুবিধাপ্রাপ্ত ও ফ্যাসিবাদের দোসর যাদের স্বাস্থ্য অধিদফতরে ও অন্যান্য স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের নিয়োগ আদেশ বাতিল করতে হবে।
২। আহত ছাত্র-জনতাকে যারা চিকিৎসা দিতে অস্বীকার করেছেন (বিএসএমএমইউ থেকে শুরু করে সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান), তাদের তালিকা প্রণয়ন করে বিএমডিসি এর রেজিস্ট্রেশন বাতিল করতে হবে। শান্তি সমাবেশে যোগদানকারী ও ফ্যাসিবাদের দোসর সকল চিকিৎসক ও কর্মকর্তা/কর্মচারীকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণ করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
৩। অতি দ্রুত বৈষম্যের শিকার সকল চিকিৎসক ও কর্মচারীদের ভূতাপেক্ষভাবে পদোন্নতি দিয়ে বৈষম্য দূর করতে হবে। বর্তমানে পদোন্নতিযোগ্য প্রত্যেককেই দ্রুততার সঙ্গে পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলেই বঞ্চিত, দক্ষ, যোগ্য কর্মকর্তাদের পদায়ন করে স্বাস্থ্য প্রশাসন ঢেলে সাজানো সম্ভব হবে। যা অতি জরুরি।
৪। মেডিকেল কলেজসহ প্রতিটি হাসপাতাল দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এ সকল প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিমুক্ত করতে যোগ্য ও বৈষম্যের শিকার শিক্ষক ও চিকিৎসকদের যথোপযুক্ত পদে পদায়িত করতে হবে। বিগত দীর্ঘ ১৬ বছর সময়ে স্বাস্থ্য খাতে যত দুর্নীতি হয়েছে। তার শ্বেতপত্র প্রকাশ ও দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
৫। মেডিকেল কলেজ, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইনস্টিটিউট সমূহ, নার্সিং কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অতিদ্রুত স্বৈরাচারের দোসরদের সরিয়ে বৈষম্যের শিকার চিকিৎসকদের পদায়ন করতে হবে।
৬। প্রতিবাদকারী যেসব চিকিৎসকদের হয়রানিমূলক বদলি করা হয়েছে, সে বদলি আদেশ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। ভবিষ্যতে বৈষম্যের শিকার চিকিৎসকদের কোনোভাবেই হয়রানিমূলক বদলি না করার দাবি জানাচ্ছি।
৭। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ও চিকিৎসাসেবার গুণগতমান উন্নয়ন করতে হবে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কাঠামো শক্তিশালীকরণের জন্য গঠিত বিশেষজ্ঞ প্যানেল কমিটি অতি দ্রুত বাতিল করতে হবে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশকারী চিকিৎসক সমাজের প্রতিনিধিত্ব রেখে কমিটি পুনঃগঠনের জোর দাবি জানাচ্ছি।
ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশীদের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ড্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ডা. এম এ সেলিম, সহ-সভাপতি ডা. সিরাজুল ইসলাম, ডা. মোস্তাক রহিম স্বপন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ডা. মো. মেহেদী হাসান, যুগ্ম মহাসচিব ডা. পারভেজ রেজা কাকন প্রমুখ।
আপন দেশ/কেএইচ
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।