শহীদ নূর হোসেন চত্বরে ছাত্র জনতা
আজ ১০ ডিসেম্বর। এদিনে স্বৈরাশাসক এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত আন্দোলনে সচিবালয় গেটের অদুরে গুলিতে শহীদ হন নুর হোসেন। এদিবসের কর্মসুচী পালনে ছাত্র জনতা শহীদ নূর হোসেন চত্বরে কর্মসুচী পালনে ঘোষণা দেয়। একই সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় আওয়ামীলীগ পাল্টা কর্মসূচী দেয় নুর হোসেন চত্বরে। এ খবরে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে আপামর ছাত্র-জনতা।
শত শত শিক্ষার্থী শহীদ নুর হোসেনের আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঠেকাতে রাতেই জিরো পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। তাতে সামিল হয়েছে সাধারণ মানুষও। আজ রোববার ১০ নভেম্বর গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের’জন্য বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছে আওয়ামী লীগ। সে কর্মসূচি রুখে দিতে রাত থেকেই জিরো পয়েন্টে জড়ো হচ্ছে ছাত্র-জনতা।
এবিষয়ে প্রবীণ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মেরুদ-হীন ও নিষ্ক্রিয় আওয়ামীলীগ এখন অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। এখন এ ধরনের কর্মসুচী ফাঁকা আওয়াজ ছাড়া কিছু নয়। শুধু তাই নয়, এ সকল কর্মসুচী হচ্ছে মানুষকে বিভ্রান্ত করা। পাশাপাশি সাধারন মানুষকে উসকে দেয়া। দেশের মানুষকে উসকে দিয়ে পরিস্থিতিকে অস্থীতিশীল করে তোলা। আইনের মাধ্যমে এদেরকে কঠোর হস্তে দমন করা উচিত।
এদিকে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত দল আওয়ামী লীগের জমায়েত হওয়ার ডাককে কেন্দ্র করে জিরো পয়েন্টে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। বৃদ্ধি করা হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ আজ এ কর্মসূচি প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসান এ প্রতিবেদককে বলেন, কেউ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিঘ্ন ঘটালে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমাদের পর্যাপ্ত ফোর্স থাকবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ। তাদের রাস্তায় নামতে দেয়া হবে না।
জানা গেছে, শনিবার আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজের এক পোস্টে রোববার (আজ) রাজধানীর জিরো পয়েন্টের নূর হোসেন চত্বরে নেতাকর্মীদের সমবেত হতে বলা হয়েছে। এ কর্মসূচির বিষয়ে ডিএমপি’র মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, রোববার ঢাকা শহরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সার্বিক নিরাপত্তার জন্য আমাদের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকবে। অতিরিক্ত কোনো ফোর্স থাকবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুধু জিরো পয়েন্ট না, ঢাকা শহরে আমাদের সবসময় যে নিরাপত্তা থাকে তা পর্যাপ্ত থাকবে। উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে শনিবার রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) শীর্ষ কর্মকর্তারা বৈঠক করেছেন। বৈঠকে ঢাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে গোয়েন্দা পুলিশের করনীয় নির্ধারণ করা হয়েছে।
বৈঠক শেষে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, রোববারের বিষয়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের নিয়ে মিটিং করেছি। আমরা সতর্ক অবস্থায় আছি। কোনো রকম নাশকতা বরদাশত করা হবে না। শান্তিপূর্ণ এলাকা থাকবে পুরো ঢাকা শহর।
অপরদিকে রাজধানীর গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে গণজমায়েত কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে’ রোববার দুপুর ১২টায় জিরো পয়েন্টে গণজমায়েত করার ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। শনিবার রাত ৮টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফেসবুক পেজে এ কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হয়। শনিবার আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্টার পোস্ট করা হয়। যাতে লেখা, ‘১০ নভেম্বর আসুন জিরো পয়েন্টে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’। পরে আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে অপর এক পোস্টে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে লেখা হয়, ‘স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায়, গণতন্ত্র ও সুবিচার প্রতিষ্ঠায় দলে দলে ঢাকায় আসুন।’ পোস্টে বিকেল ৩টায় কর্মসূচি শুরু হবে বলে জানানো হয়।
এদিকে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘোষণার পর পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ নিজের ভেরিফায়েড প্রোফাইলে করা পোস্টে রোববার গণজমায়েতের ডাক দিয়ে লিখেছেন, ‘পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে গণজমায়েত’।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচির ভেন্যুও জিরো পয়েন্ট। সেখানে দুপুর ১২টাতেই ছাত্র-জনতা জড়ো হওয়ার আহবান জানিয়েছে তারা। তাদের এ কর্মসূচি ঘোষণার পর রাতেই গুলিস্তানে ব্যাপক জনসমাগম লক্ষ্য করা গেছে। তাদের কারো কারো হাতে লাঠিসোঁটাও দেখা যায়। গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে সেখানে জড়ো হওয়া ব্যক্তিরা জানান, তারা আওয়ামী লীগের কর্মসূচি প্রতিহত করতে জিরো পয়েন্টে এসেছেন।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।