বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান
আজ বুধবার, ২০ নভেম্বর। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্মদিন। ১৯৬৭ সালের এ দিনে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবা জিয়াউর রহমান ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং মা খালেদা জিয়া তিনবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী।
মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সময়ে মাত্র চার বছর বয়সে মা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বন্দিত্ব বরণ করতে হয় তারেক রহমানকে। পিতা জিয়াউর রহমান তখন মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের এক অকুতোভয় বীর যোদ্ধা।
সেনাকর্মকর্তা থেকে সিপাহী জনতার বিপ্লব জিয়াউর রহমানকে দেশের রাষ্ট্রপতির আসনে নিয়ে এলেও তাদের জীবন ছিল সাদামাটা। ঢাকার বিএএফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজ দিয়ে শুরু করা শিক্ষা জীবনে ৮০র দশকে তারেক রহমান ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পিতার মৃত্যুর পর মা বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতির মাঠে যখন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের উত্তাল নেতৃত্বে, তখন সে আন্দোলনে যোগ দেন তারেক রহমানও।
তারেক রহমান ২২ বছর বয়সে ১৯৮৮ সালে বগুড়ার গাবতলী থানা বিএনপির সদস্য হন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠনে যোগ দেয়ার আগেই রাজনীতিতে অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। ৯১ সালের নির্বাচনে মা বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচনি প্রচারণায় অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে তৃণমূলে বিএনপিকে শক্তিশালী করায় মনোযোগ দেন তারেক রহমান।
তারেক রহমান ১৯৯৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান, সাবেক যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রী রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের মেয়ে ডা. জুবাইদা রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের একমাত্র মেয়ে জায়মা রহমান সম্প্রতি লন্ডনের কুইনমেরি ইউনিভার্সিটি থেকে আইন শাস্ত্রে ল’ ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটি তারেক রহমানকে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মনোনীত করে ২০০২ সালে। এর পরই দেশব্যাপী দলের মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে ব্যাপক গণসংযোগ শুরু করেন।
মূল সংগঠনসহ যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে তৃণমূল সভা আয়োজন করা হয়। মূলত এ জনসংযোগ কার্যক্রমের ফলে দলের নেতাকর্মীর তরুণ অংশটির মাঝে তারেক রহমান শুধু দলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধানমন্ত্রীর সন্তানের পরিচিতি থেকে বেরিয়ে এসে বিএনপির একজন দক্ষ সংগঠক ও সক্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময়ে তাকে কারাগারে যেতে হয়, নির্যাতনের শিকার হতে হয়। এক পর্যায়ে চিকিৎসার জন্য তিনি লন্ডনে যান। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে তিনি দল পরিচালনায় সম্পৃক্ত হন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে উচ্চ আদালতের এক আদেশে তাঁর বক্তব্য-বিবৃতি প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে যুক্তরাজ্য থেকেই দায়িত্ব পালন করছেন তারেক রহমান। সেখান থেকে সব সময় ভার্চুয়ালি দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন, নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের গত প্রায় ১৬ বছর বিএনপির বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা-মামলা, খুন-গুম-নির্যাতন সত্ত্বে তারেক রহমানের রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও প্রজ্ঞার কারণে দল ছিল ঐক্যবদ্ধ।
৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের উৎখাতের পর তিনি জাতীয় ঐক্য গঠনের প্রয়াস চালাচ্ছেন। বিভিন্ন বক্তব্যে তিনি ঐক্যের বার্তা দিচ্ছেন, পেশিশক্তির উত্থানের পরিবর্তে জনমানুষের পক্ষে কাজ করে জনসমর্থন সৃষ্টির বার্তা দিচ্ছেন। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বিএনপির পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে তিনি বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের প্রতি নৈতিক রাজনৈতিক চর্চার জন্য কঠোর বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন। তার এ উদ্যোগ ভবিষ্যতে রাজনৈতিক পরিবেশের গুণগত পরিবর্তনের গোড়াপত্তন করবে বলে মনে করেন নেতারা।
তারেক রহমানের জন্মদিন এ বছর উদ্যাপন না করতে দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপি। গত সোমবার দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০ নভেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্মদিন। দেশব্যাপী বিএনপি ও এর অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের সব ইউনিটের নেতাকর্মীদের বিশেষভাবে জানানো যাচ্ছে যে, এ দিন তারেক রহমানের জন্মদিন নিয়ে কোনো অনুষ্ঠান হবে না।
তারেক রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে কেউ অনুষ্ঠানের আয়োজন করলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানিয়ে দেয়া হয় ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।