সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন মাহী বি চৌধুরী। ছবি: আপন দেশ
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের সঙ্গে বিকল্পধারার নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো বলে জানিয়েছেন বিকল্পধারার মুখপাত্র মাহী বি. চৌধুরী। তিনি বলেন, নির্ভীক সত্যানুসন্ধানে আমাদের উপলব্ধি হয়েছে যে, এ সিদ্ধান্তে দলের আদর্শকে দুর্বল করেছে। আমার এবং বিকল্পধারার ভাবমূর্তির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। পরিবর্তন প্রত্যাশী সমর্থকদের হতাশ করেছে।
তিনি বলেন, বিশেষ করে আমার এ পদক্ষেপকে সুবিধাবাদী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করেছেন যার ফলে আমার নেতৃত্বের প্রতি আস্থা এবং দলের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে । এ ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায় দলের মুখপাত্র হিসেবে আমি স্বীকার করে নিচ্ছি। উপলব্ধি ও আত্মসমালোচনার মাধ্যমে এ ভুল থেকে বেরিয়ে এসে বিকল্পধারার আদর্শকে সমুন্নত করতে না পারলে আমি মনে করি বর্তমান প্রজন্মের কাছে বিকল্পধারা তার প্রাসঙ্গিকতা হারাবে।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর)সকালে বি. চৌধুরীর বারিধারার বাসভবন মায়া-বিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ সব কথা বলেন মহাজোটের শরিক সাবেক এমপি মাহী বি. চৌধুরী।
বিকল্পধারার মুখপাত্র মাহী বি. চৌধুরী বলেছেন, একটি বৈষম্যমুক্ত, জন আকাঙ্খার বাংলাদেশ গঠনে রাষ্ট্র সংস্কারের দায়িত্ব নেয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা করতে বিকল্পধারা বদ্ধপরিকর। কোন চাপ বা ষড়যন্ত্রের কাছে পরাজিত বা নতি স্বীকার করে এ সরকারের ব্যর্থ হওয়ার কোন সুযোগ নেই। ছাত্র-জনতার পবিত্র রক্তের বিনিময়ে গঠিত এ সরকার ব্যর্থ হলে আমরা ইতিহাসের কাছে চিরস্থায়ীভাবে দায়বদ্ধ থাকবো এবং বাংলাদেশ আবারও দীর্ঘ সময়ের জন্য অন্ধকারে পথ হারাবে।
সাবেক এমপি মাহী বলেন, বিকল্পধারার প্রতিষ্ঠালগ্ন ২০০৪ সাল থেকে ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত, এ ১৪ বছর দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ বিকল্পধারার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সাহসী ভূমিকার কথা মাথায় রেখে ২০১৮ সালে নির্বাচন পরবর্তী খুব স্বল্পতম সময়ের মধ্যে আমরা উপলব্ধি করতে সক্ষম হই যে, আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে কোন আদর্শিক যোগাযোগ স্থাপন করা, একসঙ্গে পথচলা আমাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।
মাহী বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর ওই সরকারের পুরো মেয়াদে শাসক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিকল্পধারার আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক কোন বৈঠক হয়নি। সরকারি বা প্রধানমন্ত্রীর কোন অনুষ্ঠানে বিকল্পধারার কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিও ছিল না। তথাপি সরকারবিরোধী দৃঢ় অবস্থানে না যেতে পারার ব্যর্থতা আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি এবং আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি, ক্ষমা চাইছি।
বিকল্পধারার মুখপাত্র বলেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ ছিল আমাদের ২০১৮ সালের ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর সংশোধনের প্রথম পদক্ষেপ। বিকল্পধারা বাংলাদেশ ছিল ২০২৪-এ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী একমাত্র দল, যারা শাসকদল তথা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা বা সমঝোতার চেষ্টা করেনি। নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিজয় অর্জনের উদ্দেশ্যে ছিল না, উদ্দেশ্য ছিল বিকল্পধারা বাংলাদেশ এর স্বকীয় রাজনীতি ও নিজ আদর্শে ফিরে আসা। যে কারণে ২০১৮ সালের একতরফা প্রহসনমূলক নির্বাচনে অসম্মানজনক বিজয়ের চাইতে ২০২৪ সালের পরাজয় আমাদের কাছে অধিকতর সম্মানজনক ছিল।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব এবং পরে বিকল্পধারার প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ.কিউ.এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ২০২৪ সালের ৫ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। এ কথা উল্লেখ করে মাহী বলেন, চলতি বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর বি. চৌধুরী দলের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান এবং আমাকে (মাহী) ডেকে বিকল্পধারার নেতাকর্মীদের প্রতি তার অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ী ৯দফা নির্দেশনা প্রদান করেন। এর ভিত্তিতে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি, দলের প্রেসিডিয়াম, জেলা কমিটিসহ সকল অঙ্গ সংগঠনের কমিটিসমূহ বিলুপ্ত করা হয়। দলের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান-এর নেতৃত্বে গঠন করা হয় বিকল্পধারার অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় কমিটি।
মাহী বলেন, ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদের হৃদয়বিদারক মৃত্যু সমস্ত বিবেকবান নাগরিকের মধ্যে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ক্ষোভের সঞ্চার করে। উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক বি. চৌধুরীর নির্দেশে আমরা কলেজের সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং ইন্টার্নি ডাক্তারদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনকারীদের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াই । ১৭ জুলাই উত্তরা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ছাত্রলীগের নৃশংসতায় আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের দরজা খুলে দেয়া হয়েছিল। বিনামূল্যে দেয়া হয়, আইসিইউ সাপোর্ট ও অস্ত্রোপচারসহ সকল সুবিধা। পরে গুরুতর আহতদের মধ্যে তিনজন মারা যান।
তিনি বলেন, ২৯ জুলাই আমার বাবা অধ্যাপক বি. চৌধুরী চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে থেকে মেজর আব্দুল মান্নান ও আমার উপস্থিতিতে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার সকল দাবি মেনে নিতে সরকারের প্রতি জোরালো দাবি এবং পাশাপাশি সর্বস্তরের জনসাধারণকে ছাত্রদের পাশে এসে দাঁড়ানোর উদাত্ত আহবান জানিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি প্রদান করেন।
মৃত্যুর আগে বি. চৌধুরী প্রণীত ৯ দফার মধ্যে রয়েছে: প্রতি ২০ বছর অন্তর গঠনতন্ত্রে ব্যাপক সংশোধনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বিকল্পধারার দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হবে। বিকল্পধারা হবে সিঙ্গেল ইউনিট পার্টি। ব্যক্তিতান্ত্রিক নেতৃত্বের ঊর্ধ্বে উঠে বিকল্পধারায় সমন্বিত ও যৌথ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।