Apan Desh | আপন দেশ

মোনাফেকি ইস্যুতে বিএনপিকে পাল্টা প্রশ্ন জামায়াতের

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩:১২, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

আপডেট: ২৩:২৭, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

মোনাফেকি ইস্যুতে বিএনপিকে পাল্টা প্রশ্ন জামায়াতের

রিজভী আহমেদে ও রফিকুল ইসলাম খান

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদের বক্তব্যের পাল্টা ছুড়েছেন জাতায়াতের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। তিনি প্রশ্ন করেছেন, ২০১৮ সালে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন বিএনপির মোনাফেকি কিনা?

তিনি বলেন, রিজভী অবশ্যই অবগত আছেন ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত জোটকে এড়িয়ে ভিন্নমতের লোকদের সঙ্গে জোট করে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যে ঐক্য করা হয়েছিল, তা কি জাতির সঙ্গে মোনাফেকি নয়? জনগণ এ রাজনৈতিক ছন্দপতনের ইতিহাস ভুলে যায়নি।

রোববার (২৯ ডিসেম্বর) রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে রফিকুল ইসলাম খান এসব কথা বলেন। এদিন রুহুল কবির রিজভী এক অনুষ্ঠানে বলেন, ৫ আগস্টের পর একটি রাজনৈতিক দলের আত্মসাৎ দেখেছে জনগণ। কারা পায়ের রগ কাটে জনগণ তাদের চেনে। ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে একাত্তরের বিরোধিতাকারী জামায়াত।

২০১৮ সালে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে আসম আব্দুর রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্না নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য, কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়। ওই বছরের ১৩ অক্টোবর ৭ দাবি ও ১১ লক্ষ্য নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে ফ্রন্টটি। নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে ওই বছরের পর থেকে ঐক্যফ্রন্ট সক্রিয় হয়নি।

মূলত ওই সময় থেকেই জামায়াতকে বাদ দিয়ে ডান, বাম, মধ্যমপন্থি-প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের সূত্রপাত করে বিএনপি। এ রেশ ধরে বিগত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি বিএনপিসহ যুগপতে অংশ নেয়া অন্তত ৬৩টি রাজনৈতিক দল।

রোববার বিএনপি নেতা জামায়াতের উদ্দেশে বলেন, ইসলাম নিয়ে রাজনীতি করেন। ইসলাম মানে তো বারবার মোনাফেকি করা না। জনগণের প্রতি অঙ্গীকার থেকে বিএনপি কখনও পিছিয়ে আসেনি। ১৯৭১ সাল থেকে ৫ আগস্ট (২০২৪) পর্যন্ত গণতন্ত্রের প্রশ্নে বিএনপি কখনও মাথানত করেনি।

প্রতিক্রিয়ায় বিবৃতিতে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, জামায়াত ‘ইসলাম’ নিয়ে রাজনীতি করে না। ইসলামি আদর্শের ভিত্তিতে রাজনীতি করে জামায়াত। জামায়াতে ইসলামী কখনও মোনাফেকি করেনি।

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, রুহুল কবির রিজভী জামায়াতে ইসলামীর দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, ৫ আগস্টের পর একটি রাজনৈতিক দলের আত্মসাৎ দেখেছে জনগণ, কারা পায়ের রগ কাটে তাদের চেনে জনগণ, ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে একাত্তরের বিরোধিতাকারী জামায়াত। রিজভীর এ জাতীয় বক্তব্য বিগত কয়েক দশক যাবৎ প্রচার করা হচ্ছে। রগ কাটা, ঘোলা পানিতে মাছ শিকার, ৭১-এর বিরোধিতা এসব বক্তব্য জনগণ বহু পূর্বেই প্রত্যাখ্যান করেছে। রিজভী জামায়াতের বিরুদ্ধে এসব কথা উচ্চারণ করে কী অর্জন করতে চান, তা জনগণের কাছে স্পষ্ট নয়। জামায়াত রগকাটা ও ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের রাজনীতি কখনও করেনি। তিনি জামায়াতের দিকে ইঙ্গিত করে ‘ইসলাম নিয়ে রাজনীতি করেন, ইসলাম মানে তো বারবার মোনাফেকি করা না’- তার এ বক্তব্য চরম মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়।

আরও পড়ুন<<>> শেখ হাসিনাকে ক্ষমা করতে চায় জামায়াত: রিজভী

জামায়াত ‘ইসলাম’ নিয়ে রাজনীতি করে না। ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে রাজনীতি করে জামায়াত। জামায়াতে ইসলামী কখনো মোনাফেকি করেনি। জামায়াত দেশের মানুষের অধিকার, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আপসহীনভাবে লড়াই করেছে। জামায়াত কখনও মোনাফেকির আশ্রয় নেয়নি।-বলেনরফিকুল ইসলাম খান।

ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে ‘শেখ হাসিনাকে ক্ষমা করতে চায় জামায়াত’ মর্মে রিজভী আহমেদ যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে জনগণ বিস্মিত। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে জামায়াতের প্রতি অভিযোগ উত্থাপনের আগে রিজভীর আত্মপর্যালোচনা করা উচিত। কারা দলীয় টিম নিয়ে ভারত সফর করে সখ্য করার চেষ্টা করেছেন, তা জনগণ খুব ভালো করেই জানেন।

জামায়াতের অন্যতম নেতা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি ভারতের আধিপত্যবাদ ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। জামায়াতের এ ভূমিকা গোটা জাতি গ্রহণ করেছে। আর এ কারণেই সম্ভবত রিজভীর গাত্রদাহ সৃষ্টি হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বিগত কয়েক বছর ধরে বিএনপির নীতিনির্ধারণী ও সিনিয়র নেতারা জামায়াতের নানা সময়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কোনও কোনও নেতা আবারও নোটিশও পেয়েছেন বক্তব্য দিয়ে। যদিও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করায় জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করেছেন।

বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ শীর্ষক লেখায় জিয়াউর রহমান লিখেছেন, ‘...আবার মুসলিম লীগ, আইডিএল এবং জামাতীরা বলে থাকে যে ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের কথা। এ শতকের গোড়ার দিকে (বিংশ শতাব্দী) জামাল উদ্দিন আফগানি প্যান ইসলামী ইজমের যে স্লোগান তোলেন ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদী চেতনার উৎস সেখান থেকেই।’

‘আমার রাজনীতির রূপরেখা’ শীর্ষক গ্রন্থে লিপিবদ্ধ এ নিবন্ধে জিয়াউর রহমান আরও উল্লেখ করেন, সত্য করে বলতে গেলে বলতে হয়, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদ কায়েম করতে গিয়ে বাংলাদেশকে শোষণ ও শাসন চালানো হলো। কিন্তু ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের নাম ‘পলিটিক্স অব একসপ্লয়টেশন’ পাকিস্তানকে এক রাখতে পারলো না। প্রতিষ্ঠিত হলো স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

এ লেখায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ‘ধর্ম বিশ্বাস বা ধর্মের প্রতি অনুরক্ত থাকা বাংলাদেশি জাতির এক মহান ও চিরঞ্জীব বৈশিষ্ট্য’ বলে উল্লেখ করেন।

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়