Apan Desh | আপন দেশ

মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের ছবক শুনতে জাতি রাজি নয়: গয়েশ্বর

নিজস্ব প্রতিবেদক 

প্রকাশিত: ১৫:৪৯, ২ জানুয়ারি ২০২৫

মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের ছবক শুনতে জাতি রাজি নয়: গয়েশ্বর

ছবি: আপন দেশ

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের নীতি শিক্ষা শোনার প্রয়োজন নেই জাতির। ৭১ ও ৭৫-এর পরাজিত শক্তি মিলে জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তবে জনগণ তা রুখে দিতে প্রস্তুত।

বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা বিএনপির উদ্যোগে কর্মীসভা ও সদস্য ফরম বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী।

গয়েশ্বর বলেন, আমরা ৩১ দফার মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলেছি। তবে বর্তমান বৈষম্যবিরোধী উদ্যোগগুলো মুক্তিযুদ্ধের সঠিক চেতনাকে উপেক্ষা করছে। যারা ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী। তারা আবার জাতিকে পথ দেখানোর চেষ্টা করছে।

গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, আমরাও সংস্কার চাই। এ জন্য আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। কিন্তু এ যে তারা ( বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি) যেটা দিতে চায়, সেটা আমাদের না দিলেও আমরা তা কোনো না কোনোভাবে পেয়েছি। সেখানে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এদের ঘাড়ে চাপছে ৭১ এ যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে তারা। আকারে ইঙ্গিতে তারা বলতে চায় ৫ আগস্ট (২০২৪ সাল) দেশ স্বাধীন হয়েছে। তাহলে ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে গরু ছাগল রক্ত দিয়েছে। নাকি মানুষ রক্ত দিয়েছে? ৭১ সালে যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে তাদের ছবক শুনতে জাতি রাজি না। 

তিনি বলেন, আমরা অনেককেই ক্ষমা করতে পারি, ভুলে যেতে পারি। ক্ষমা মহত্ত্বের লক্ষণ। কিন্তু ক্ষমা করার পর একই কাজ যদি আবার করেন তাহলে ভুলে গেলে চলবে না। মুক্তিযুদ্ধ ও ৭ নভেম্বরের পরাজিত শক্তি মিলে যারা জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবেন, তাদের রুখে দেয়ার ক্ষমতা এ দেশের জনগণ রাখে। 

বিএনপি এ নেতা আরও বলেন, জিয়াউর রহমান হারিয়ে গেছেন। কিন্তু খালেদা জিয়া সে জায়গা থেকে শুরু করেছেন। সেখান থেকেও নেতৃত্ব চলে এসেছেন তাদের যোগ্যউত্তরসূরী তারেক রহমান। যুক্তরাজ্য থেকে দল ও দেশবাসীকে সংগঠিত করে বিজয় নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু এর ফলাফল যতক্ষণ পর্যন্ত গোলায় না উঠে, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি সক্রিয় আছেন আমরাও সক্রিয় আছি।            

গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, সবচেয়ে সৌভাগ্যের বিষয় আমি মুক্তিযুদ্ধ করতে পেরেছি। বাংলাদেশে স্বাধীনতার যুদ্ধ তো বারবার হবে না, অমরা সে যুদ্ধটা করতে পেরেছি। সে ডাকটাই দিয়েছিল রাজনীতির বাইরের একজন মেজর তার নাম জিয়াউর রহমান। যার নাম মানুষের অন্তরে অন্তরে। যে আশা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছি, সে আশা পূরণ হয়নি বলেই তো আওয়ামী লীগের এমন পরিনতি হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মর্মান্তিক ঘটনার মধ্যদিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হলেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই কিন্ত সরকার গঠন করা হয়েছিল। যা নেতৃত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার মোসতাক।   

তিনি আরও বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার সংগঠিত হওয়ার মধ্যদিয়ে ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসলেন। বহু দলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করলেন তিনি। ৯০ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭৫ সালের সিপাহি-জনতার বিপ্লব এবং ৯০ তে গণঅভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরাচারের পতন-এসব কী ইতিহাসের অংশ নয়? এসব কি ইতিহাসের পাতা থেকে বের করে দেবেন? স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে প্রতিটি আন্দোলনে ছাত্রজনতা ছিল। তারা কি রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসেছিল? 

গত ১৬ বছর যাবৎ বিএনপি আন্দোলন করছে উল্লেখ করে গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, ছাত্রদের কোটাবিরোধী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৮ দফার মধ্যে সরকার পতনের দাবি ছিল না। তারা যখন এ আন্দোলনে নামছে আমরা পরদিন তাতে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছি, আমি একজন সাক্ষী। ছাত্ররা আন্দোলনে নামার পরপরই আমি আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে একটি মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠালাম। পাঁচ মিনিটের মধ্যে তিনি আমার মোবাইলে ফোনে কল করলেন। বললেন, বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাহলে সবাইকে ডেকে বসি। বিকাল চারটার দিকে কথা, ছয়টায় জরুরি দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকলেন তিনি। সে বৈঠক থেকে ছাত্রদের আন্দোলনের প্রতি নৈতিক সমর্থন জানানো হলো। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সক্রিয় হয়ে উঠলেন। টেলিফোনে তিনি সবার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করলেন। আমাকে বললেন, শুধু নৈতিক সমর্থন যথেষ্ট না, সবাইকে সক্রিয় করতে হবে। আমি বললাম অবশ্যই সক্রিয় করতে হবে। তবে দলীয় ব্যানার ছাড়া আমরা সবাই এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করব। আমাদের ছাত্র-যুবক নেতাকর্মীরা মাঠে নেমে পড়ল। হাসিনা কিন্তু বার বার বলছে এটা বিএনপির ষড়যন্ত্র। 

তিনি আরও বলেন, এরপর আমরা সর্বাত্মক সমর্থন জানালাম। আমরা বিএনপির পোশাক ছেড়ে হয়ে গেলাম ছাত্র-জনতা। এ আন্দোলনে শুধুমাত্র ছাত্রের বাবা-ই নামেনি, দেশের সব মানুষ নেমেছিল। এদেরকে কে নামিয়েছিল, এ বিএনপি-ই নামিয়েছিল। 

গয়েশ্বর রায় বলেন, আমরা ছাত্রদের অভিনন্দন জানাই। এখনও অভিনন্দন জানাই। তবে ১৫ দিনের পুজিঁ দিয়ে রাস্তায় হাঁটা হাটা যায় না। ১৬ বছর ধরে আমরা আন্দোলন করছি। প্রত্যেকটা রক্তের মূল্য আছে- যে সর্বশেষ রক্ত দিয়েছে তারও আছে, যে সবার আগে দিয়েছে তারও আছে।

গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু ছাত্র সেদিন মারা গেছে। আমাদের ছাত্ররা গত ১৬ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রবেশ করতে পারিনি। কিন্তু আপনাদের আওয়ামী লীগ চিনতে পারল না কেন? তাহলে নিশ্চয়ই ডাল মে কুচ কালা হে। 

তিনি আরও বলেন, ছাত্ররা তিনটি আন্দোলন করেছে। যে আন্দোলনের মাধ্যমে ভিপি নূর নেতা হয়েছেন। দ্বিতীয়ত বাড্ডায় দুই বাসের চাপায় এক শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। সেবার শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছিল। সর্বশেষ জুলাই মাসে কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করলেন, সেখানে আমরা সমর্থন দিলাম। কিন্তু আমাদের ১৬ বছরের আন্দোলনে আপনারা কবে নেমেছেন? সে কারণে জনগণের কাছে মুখ্য হচ্ছে গণতন্ত্র, নির্বাচন, নির্বাচিত প্রতিনিধি ও নির্বাচিত সরকার।

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়