Apan Desh | আপন দেশ

বিএনপি কার দিকে তাকিয়ে?

আফজাল বারী

প্রকাশিত: ২৩:২৫, ১৭ মার্চ ২০২৩

আপডেট: ১৩:৩৭, ১৯ মার্চ ২০২৩

বিএনপি কার দিকে তাকিয়ে?

ফাইল ছবি

লক্ষ্যে পৌঁছাতে কোন পথে হাটছে বিএনপি-এমন প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে। দীর্ঘ ১৭ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটির মূলদাবি বিলুপ্ত ‘তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা’ আবারও ফিরিয়ে আনা। সে ফেরানোর দায়িত্ব পালনে বাধ্য করা হবে যারা বিলুপ্ত করেছেন তাদের মাধ্যমেই। বিএনপির হাতে থাকা সময়, আন্দোলনের ধরণ আর সরকারের অনড় অবস্থানে এই চাওয়া-পাওয়ার অঙ্ক মিলছে না।

প্রশাসন ও তৃণমূলে শক্তভীতে দাঁড়িয়ে থাকা আওয়ামী লীগ সরকার পতনের হাতিয়ার হিসাবে বিএনপির হাতে কী মহৌষধ আছে? বা কার দিকে তাকিয়ে আছে দলটির নীতিনির্ধারকরা। যাদের বজ্রাঘাতে স্বল্পতেই পড়ে যাবে সরকার? ফিরে আসবে সেই তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা?  

সভা-সমাবেশে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, কোনো বাকা পথে নয়, আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বাধ্য করা হবে। এমন আন্দোলন করা হবে যাতে বাধ্য হয়ে বর্তমান সরকারই বাতিলকৃত তত্বাবধায়ক ব্যবস্থাটি সংসদের মাধ্যমে সংবিধানে ফিরিয়ে আনবে। সেই সংবিধানের আলোকে গঠন করা হবে নির্বাচন কমিশন। নতুন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তফশিল ঘোষণা করবে। সেই নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি।  

অন্যদিকে সরকার প্রধান সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তারা সংবিধানে হাত দিবেন না। পুরনো ব্যবস্থায় ফিরে আসাতো তো দূরের কথা এই সংবিধানের কিঞ্চিত বাইরেও যাবে না। আর এর জন্য যতো কঠোর অবস্থানে যেতে হয় তাতে বিন্দুমাত্র পিছপা হবেন সরকার। ইতোমধ্যে তার প্রমাণ দিয়েছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ব্যবহারের মাধ্যমে।

দেশের সংবিধানমতে এক সরকার থেকে পরের সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছর। তাহলে আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতেই সম্পন্ন করতে হবে জাতীয় নির্বাচন।

যদি জানুয়ারিতেই নির্বাচন করতে হয় তাহলে বিএনপির হাতে আন্দোলনের সময় আছে আর মাত্র চার-পাঁচ মাস৷ চলতি মার্চ মাসেই রোজা শুরু ৷ রোজার এক মাসে বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণত বড় কোনো কর্মসূচির নজির নেই। রোজার পরে ঈদুল ফিতর। এরপর দুই সপ্তাহ রাজপথ থাকে প্রায় জনশূণ্য। মাঝখানে দুইসপ্তাহ পেলেও পরের দুইসপ্তাহ থেকেই কোরবানীর ঈদের দিকে ঝুকে মানুষ। জুন-জুলাইয়ে থাকবে বর্ষাকালের প্রভাব ৷ এই মাসগুলোতে রাজনৈতিক দলের বাইরে আন্দোলন ছড়িয়ে দেয়াটা বেশ কঠিন।

সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে৷ নির্বাচনের তফসিলও এই সময়ের মধ্যেই ঘোষণা করতে হয়৷ বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি৷ সেই হিসাবে ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে ভোট হতে হবে৷ অর্থাৎ, নির্বাচনের সময় বাকি আছে কম-বেশি ১০ মাস৷ তার মধ্যে সামাজিক ও ধর্মীয় নানা কারণে তিন-চার মাস বড় কোনো আন্দোলনের জন্য উপযোগী মনে করে না রাজনৈতিক দলগুলো৷ নির্বাচনের তফসিল যদি ২১ দিন হাতে সময় রেখেও করা হয় তাহলে সেখানেই এক মাস চলে যাবে৷

এদিকে, বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচির সঙ্গে মিলিয়ে কর্মসূচি দিচ্ছে আওয়ামী লীগও ৷ তারা ঘোষণা করেছে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত তাদের ধারাবাহিক কর্মসূচি চলবে ৷ কৌশল হিসেবে চলতি মার্চ মাস থেকেই তারা নির্বাচনের কাজ শুরুর জন্য তৃণমূলকে নির্দেশ দিয়েছে ৷ প্রার্থীও চূড়ান্ত করা শুরু হয়েছে৷ ঢাকার নেতারা এলাকামুখী হওয়া শুরু করেছেন৷ যার ইমেজসঙ্কটে তারাও ইমেজ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছেন। মনোনয়ন বহাল রাখতে যার যার নির্বাচনি এলাকায় তৎপর হওয়া শুরু করেছেন ৷ সরকার ও আওয়ামী লীগের একটি কৌশল হচ্ছে এবার আগেভাগেই সারাদেশে নির্বাচনের হাওয়া বইয়ে দেয়া৷

আন্দোলন থেকেই গড়ে উঠা রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে হাতেগুণা কয়েক মাসের মধ্যে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে নামানোর মতো কি মহৌষধ বিএনপির হাতে আছে, তা সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা মধ্য সারির বোদ্ধাদের হিসাব-নিকাশে মিলছে না।

শান্তি বজায় রেখে, গ্রেফতার এড়িয়ে, জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে বিএনপি ইতোমধ্যে নয়টি কর্মসূচি পালন করেছে। তাতে ছিল মানববন্ধন, ইউনিয়ন, থানা, জেলা ও মহানগরে পদযাত্রা, সমাবেশ। আগামীকাল শনিবার (১৮মার্চ) দশম কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরবর্তী কর্সূচির ধরনও সরকারের সহনীয়।

এদিকে বহুদলীয় জোটকে উপজোট বিভক্ত করে মাঠে নামিয়েছে প্রধান দল বিএনপি।  তারা যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে। তাতেও দেখা দিয়েছে নয়া প্রশ্ন। খোদ উপজোট নেতারাই বলছে- নিজেরাই জানি না  কবে কঠোর আন্দোলন? সামনে রোজা, এরপর কোরবানী ও বর্ষাকাল। সরকার পতনের কর্মসূচি আগেও ছিল, এবারও দেখছি তাতে আশার আলো দেখছেন না।

এদিকে স্বল্প সময়ে মাঠ গরম করা মিত্র সংগঠন জামায়াতও নিজ ডেরায় চলে গেছে। যুগপৎ কর্মসূচি পালন করবে ঘোষণা দিলেও, কথায় কাজে বিস্তর ফাঁরাক। ইতোমধ্যে দলটির মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কথা উঠেছে আগের পুরনো পথে হাঁটছে তারা।

বিএনপির কট্টরপন্থি নেতাদের কাছে প্রশ্ন করলে উত্তর আসে- হবে, হবে. এভাবে চলতে পারে না। কিছু একটা ঘটছে। মধ্যসারির নেতারা বলেন, সরকারের শত্রু বাড়ছে, স্যাংশন খেয়েছে, সামনে আরও আসছে। একটু ধাক্কা দিলেই পড়ে যাবে। আর রাজনৈতিক বোদ্ধারা বলছেন, ১৫ বছর সরকারে থেকে আওয়ামী লীগ প্রশাসনের সকল স্তরে নিজেদের লোক সেট করেছে, দলের নেতাকর্মীদের স্বাবলম্বি করেছে, বহির্বিশ্বের সাথে সম্পর্কের উন্নয় ঘটাচ্ছে, সাপ-নেউলের সম্পর্কের মতো রাশিয়া-চীনকে সমানতালে রেখেছে, ইসলামি দেশগুলোর সাথেও গড়ছে নতুন বন্ধুত্ব। সব মিলিয়ে সরকার ঘরে-বাইরে যে ভীত তৈরী করেছে তাতে ঠুনকো ধাক্কায় পতিত হবার প্রশ্নই আসে না। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সমন্বিত চাপ সৃষ্টি করতে না পারলে অতীতের মতোই অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ নির্বাচন।

বোদ্ধাদের এমনও কথা যে, বিদেশীরা চায় সুবিধা, তাদের তো দায় পড়েনি যে বর্তমান আওয়ামী লীগকে সরিয়ে বিএনপিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসাবে। হ্যাঁ, বিরোধীরা যদি ন্যায্য দাবিতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলতে পারে তাতে সায় দিতে পারে মোড়লরা। একটা পরিবেশ তৈরী হতে পারে। যে পরিস্থিতির কারণে বিএনপি সরকারও ২০০৭ সালে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল। তবে এ পরিবেশ সৃষ্টি সময় ইতোমধ্যে পার হয়ে গেছে।

এমন হিসাব বিএনপি ও মিত্রদের খাতাতেও আছে। ফলে অনেকটাই হতাশা দেখা দিয়েছে। কেউ ভিড়ছে ক্ষমতাসীনদের পথে, আবার কেউ গঠন করছে নতুন নামে নতুন প্লাটফর্ম। একদিন আগেও এমন ধরনের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিএনপির চেয়ারম্যানের কাতারের এক নেতার আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলেন যুগপৎ আন্দোলনকারী কয়েকটি দলের শীর্ষ নেতাও।

আপন দেশ/এবি  

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়