ছবি : আপন দেশ
দুর্নীতির দায়ে সাজা মাথায় নিয়ে দেশ ত্যাগ করেছেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। বিএনপির স্থায়ী কমিটির কনিষ্ঠ সদস্য তিনি। বর্তমানে আছেন লন্ডনে। যেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রয়েছেন।
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর পারিবারিক ও ঘনিষ্ঠজন সূত্র নিশ্চিত করেছেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তন না হলে তিনি দেশে ফিরছেন না। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশে ফিরলে তাকে দুর্নীতির দায়ে ৯ বছরের সাজাভোগ করতে হবে।
১৯৮৪ ও ৮৮ সালে জাতীয় পার্টির নেতা টুকু সিরাজগঞ্জ-২ ( সদর-কামারখন্দ ) আসন থেকে এমপি নির্বাচিত। এরপর দল বদল। যোগদেন বিএনপিতে। নির্বাচিত হয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে (২০১-২০০৬) বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তার আমলেই বিদ্যুতের জন্য ঐতিহাসিক কানসার্টকাণ্ড ঘটে। জনতা-পুলিশের সংঘর্ষে গুলিতে ২০জন নিহত হয়।
আরও পড়ুন <> বিএনপি নেতা টুকু-আমানের সাজা বহাল
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর পিতা আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের শিল্প ও প্রাকৃতিক সম্পদমন্ত্রী ছিলেন। ভগ্নিপতি ছিলেন জাতীয় পার্টির সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি শাসন আমলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এম এ মতিন। ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ছেলেতে মেয়ে বিয়ে দিয়ে বেয়াই হয়েছেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তার সহধর্মীনি রুমানা মাহমুদও বিএনপির টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
আরও পড়ুন <> জোটের এক ও দুই নম্বর দলের মধ্যে বাকযুদ্ধ চলছে
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর ব্যাক্তিগত সহকারী দুইজন। আলাল ও কায়েস। তাদের একজন আপন দেশকে বলেন, জালেম সরকারের আদালতে স্যার আত্মসমর্পন করবেন না। স্যার চার মাস আগে বিদেশ গেছেন। এই সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত দেশে ফিরবেন না। এখন আছেন লন্ডনে। সেখানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে আছেন।
নেতার বিদেশে যাবার কারণ জানতে চাইলে জবাবে ওই ব্যক্তিগত সহকারী বলেন, দেশে থাকলে স্যারকে দুর্নীতির দায়ে সাজাভোগ করতে হবে। দেখলেন তো ২০দিন আগে কি রায় দিয়েছে? স্যার আগেই আন্দাজ করতে পারছিলেন। তাই চারমাস আগেই চলে গেছেন।
এদিকে ইকবাল হাসান মাহমুদকে নিয়ে দলের ভেতরে বাইরে অনেক আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারনী পর্যায়ের নেতার সঙ্গে আত্মীয়তা করায় সমালোচনার মাত্রাটা আরও বেড়েছে।
আরও পড়ুন <> জামায়াত নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে চাপে টুকু
দলীয় মহাসচিবের বন্ধু হওয়ায় বিএনপিতে তার প্রভাবটা ত্রিমুখী। অর্ধশতাধিক প্রবীণ নেতাকে সুপারসিট করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হওয়া নিয়েও রয়েছে নানান কথা।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গুলশানের বাড়ী ‘ফিরোজা’ ভাড়া নিয়ে বসবাস করছিলেন। এরই মধ্যে ২০১৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। চাউর আছে- ওই সময়ের দীর্ঘ দুই বছরের বকেয়া বাড়ী ভাড়া পরিশোধ করেছেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। বেগম খালেদা জিয়া কারাগার থেকে বাসায় ফিরলে বিষয়টি অবহিত করেন তার বন্ধু। এছাড়াও সরকার ঘরানার নেতাদের সঙ্গে পর্দার পেছনে যোগাযোগ থাকার উপকারিতাও দেখিয়েছেন সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী। বদৌলতে নীতি নির্ধারদের সারিতে বসানো হয় তাকে। এরপর থেকে দলের আভ্যন্তরীণ অতিগোপনীয় বার্তা বা সিদ্ধান্তও পৌছে যায় প্রতিপক্ষের কাছে।
যে কারণে নয় বছর সাজা :
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা দুর্নীতির মামলায় সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর নয় বছরের সাজা বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।
গত ৩০ মে (মঙ্গলবার) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ পৃথক মামলার আপিল খারিজ করে বিচারিক আদালতের সাজার রায় বহাল রাখেন। একইসঙ্গে রায় পাওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীকে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন <> জামায়াত-আওয়ামী লীগ সম্পর্ক নিয়ে যা বললেন বিএনপির টুকু
আদালত সূত্রে জানা যায়, চার কোটি ৯৬ লাখ ১১ হাজার ৯১৬ টাকার সম্পত্তির হিসাব ও আয়ের উৎস গোপন করার অভিযোগে ২০০৭ সালের মার্চে সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করে দুদক।
ওই বছরের ১৫ নভেম্বর বিচারিক আদালত এ মামলার রায়ে টুকুকে নয় বছরের কারাদণ্ড দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১১ সালের ১৫ জুন তাকে খালাস দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে দুদক আপিল করলে ২০১৪ সালের ২১ জানুয়ারি খালাসের রায় বাতিল করে পুনঃশুনানির আদেশ দেন আপিল বিভাগ।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।