সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন জামায়াত নেতা ডা. তাহের
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনা বা দলীয় সরকারের অধীনে বাংলাদেশের সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। জামায়াতের পক্ষ থেকে কেয়ারটেকার বা নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে।
ঢাকা সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম। বৈঠক শেষে দলটির নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনা বা দলীয় সরকারের অধীনে বাংলাদেশের সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। জামায়াতের পক্ষ থেকে কেয়ারটেকার বা নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার বিষয়টিতাদের ( ইইউ প্রতিনিধি) কাছে উত্থাপন করা হয়েছে।
দলটির শনিবার (১৫ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর গুলশান-২ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কার্যালয় থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
এর আগে ইইউ প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিতে দুপুর আড়াইটায় ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে ওই কার্যালয়ে ঢোকেন করে জামায়াতের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
সাংবাদিকদের ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, বৈঠকে আমরা স্পষ্ট বলেছি আগামী সংসদ নির্বাচন কেয়ারটেকার সরকার, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে। এর বাইরে বাংলাদেশের মানুষ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। আগামীতে প্রতারণামূলক ও পাতানো নির্বাচনের ভার আর এই দেশ বহন করতে পারবে না।
তিনি বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়েছে যে, এই সরকারের অধীনে, শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না।
বৈঠক সম্পর্কে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচন, এবং কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন স্বচ্ছ, ক্রেডিবল, পার্টিসিপেটরি, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কীভাবে তৈরি করা যায়, এসব ব্যাপারে আমাদের সঙ্গে মতবিনিময় হয়েছে। আমরা স্পষ্ট বলেছি, ২০১৪ ২০১৮ সালের নির্বাচনের মতো বর্তমান সরকারের অধীনে যে প্রহসনে নির্বাচন হয়েছে, তা পুরো জাতি ও বিশ্ববাসীর কাছে পুরোপুরি পরিষ্কার। ওই দুটি নির্বাচন কোনো নির্বাচনই ছিল না। নির্বাচনের নামে প্রহসন ছিল। ২০১৪ সালে জাতি দেখেছে, একটি নির্বাচনের আগেই ১৫৪ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। একটি জাতীয় নির্বাচনের আগেই যদি মেজরিটি পার্সেন্ট নির্বাচিত হয়ে যায়, সেটাকে আসলে নির্বাচন বলা যায় না। সেজন্য নতুন শব্দ আবিষ্কার করতে হবে।
>>> আরও পড়ুন: জাপার এক দফা সুষ্ঠু নির্বাচন: চুন্নু
তাহের বলেন, ২০১৮ সালে আমরা সকল দলেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। সেই নির্বাচনের পূর্বে ডায়ালগ হয়েছিল, যিনি আজকে সরকার প্রধান তিনি বারবারই বলেছিলেন। আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা আমি যা বলি তা থেকে সরে যাই না। ২০১৮ সালের নির্বাচন অবাধ হবে, সুষ্ঠু হবে এমনটি তিনি বলেছিলেন। কিন্তু আমরা দেখেছি, নির্বাচনটা আগের রাতেই হয়ে গিয়েছিল। এটাও পৃথিবীর ইতিহাসে একটি নতুন সংযোজন। আমরাও আশা করেছিলাম কিছুটা হলেও সরকার ডেমোক্রেটিক হয়েছে। হিউম্যান রাইটসের ব্যাপারে কিছুটা হলেও তারা সম্মান দেখাবে। কিন্তু সিলেটে জামায়াত কর্তৃক ডাকা সমাবেশের অনুমতি না দিয়ে ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারের চিত্রই আমাদের সামনে এসেছে।
এই জামায়াত নেতা দাবি করেন, যে সরকার নির্বাচনের ঠিক চার মাস আগে এখনই সভা, সমাবেশ করতে দিচ্ছে না, তাদের সব অফিস খুলতে দিচ্ছে না, এরকম একটা সময়ে আগামী নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হয়ে যাবে এমনটা আশা করার সুযোগ নেই। সরকার এখনই প্রমাণ করছে, তাদের অধীনে আসলে সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।
তিনি বলেন, সেই কথাটি আমরা অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে ইইউ প্রতিনিধি দলকে বলেছি। তারাও আমাদের সঙ্গে কূটনৈতিক ভাষায় ঐকমত্য পোষণ করেছেন। তারা আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন যে জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে তাদের পর্যবেক্ষক প্রতিনিধি পাঠানোর বিষয়টি আমরা কীভাবে দেখছি? আমরা বলেছি, বাংলাদেশের যে কোনো নির্বাচনে আমরা তাদের প্রতিনিধিকে স্বাগত জানাই। কিন্তু নির্বাচনের নামে যদি প্রহসন হয় তাহলে তো এখানে পর্যবেক্ষক পাঠানো অর্থহীন। অবৈধ নির্বাচনকে দেখতে আসাটা সম্মানজনক হবে কিনা সেটি আপনাদের বিবেচনা। একদলীয় সরকারের দিনে নির্বাচন দেখতে আসাটা আমরা মনে করি সমীচীন হবে না।
সরকারের পক্ষে বা যে কোনো দলের পক্ষে সংলাপের উদ্যোগ নেওয়া হলে সেটি সফল হবে কিনা বা আপনারা সংলাপে আগ্রহী কিনা জানতে চাইলে তাহের বলেন, অতীতে যে কয়টি সংলাপ হয়েছে তার একটিরও ইতিবাচক ফলাফল আসেনি। এখানেও সংলাপ হতে পারে, যদি একটা স্ট্রং পাটাতন তৈরি হয়। সেটা হচ্ছে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। সেই নির্দলীয় সরকারের গঠন প্রক্রিয়া, পাওয়ার অথরিটি কেমন হতে পারে, সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কীভাবে হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবেই একটি সংলাপ অর্থবহ হবে।
নিবন্ধন নিয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে জামায়াতের এ নেতা বলেন, ইইউ প্রতিনিধিদল আমাদের কাছে জানতে চেয়েছে, জামায়াত ইসলামীর নিবন্ধনের কী অবস্থা। আমরা বলেছি আমরা নিবন্ধিত দল। আমরা নিবন্ধিত দল হিসেবে ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬ ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লা মার্কায় অংশ নিয়েছিলাম। যেমনভাবে আমাদের দলীয় নেতাকর্মীদের অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে, আমাদের ১ লাখ ১০ হাজার নেতাকর্মীকে জেলে ঢুকানো হয়েছে, জুলুম অত্যাচার নির্যাতন করা হচ্ছে একইভাবে আমাদের নিবন্ধনটি হাইকোর্টে হত্যা করেছে।
তিনি আরও বলেন, কিন্তু আমরা এর বিপরীতে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছি। আমাদের দলের নিবন্ধনের বিষয়টি এখন আদালতে আপিল অবস্থায় রয়েছে। আশা করছি, আপিলে যদি সুষ্ঠু ও ন্যায় বিচার হয় তাহলে আমরা নির্বাচনের আগেই আমাদের নিবন্ধন ফিরে পাব। সমাবেশের অনুমতি না পাওয়া প্রসঙ্গে অনেকে বলেন, আমাদের নিবন্ধন নেই। দলের সভা, সমাবেশ করার জন্য নিবন্ধনের কোনো প্রয়োজন নেই।
আপন দেশ/এমএমজেড
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।