Apan Desh | আপন দেশ

পদত্যাগ না করলে পালানোর পথ খুঁজে পাবেন না: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:২২, ৩১ জুলাই ২০২৩

আপডেট: ২১:০০, ৩১ জুলাই ২০২৩

পদত্যাগ না করলে পালানোর পথ খুঁজে পাবেন না: মির্জা ফখরুল

সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম

ঢাকা: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে জনগণের দাবি মেনে নিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অন্যথায় তারা পালানোর পথ খুঁজে পাবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তিনি।

সোমবার (৩১ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

গত শনিবার (২৯ জুলাই) ঢাকায় বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী হামলা, নিপীড়ন-নির্যাতন ও পাইকারি হারে গ্রেফতারের প্রতিবাদে সোমবার দেশের সব মহানগর ও জেলা সদরে জনসমাবেশের ঘোষণা দেয় দলটি।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক মো. আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও  উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হকের পরিচালনায় জনসমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা বরকতুল্লাহ বুলু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আমানউল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবদীন ফারুক, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, কামরুজ্জামান রতন, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, রকিবুল ইসলাম বকুল, মীর সরফত আলী সপু, শিরিন সুলতানা, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, কৃষক দলের শহীদুল ইসলাম বাবুল, ওলামা দলের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম তালুকদার, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক খান, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, মৎস্যজীবী দলের মো. আবদুর রহিম প্রমুখ।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, গত ২৮-৩০ তারিখ আওয়ামী লীগ ক্রিকেটের মতো গুগলি খেলেছে। অবৈধ সরকারের পুলিশ জানায় আমাদেরকে ২৭ জুলাই সমাবেশ করতে দেবে না। আমরাতো পরেরদিন করলাম। সেখানে প্রতিকূল পরিবেশেও টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার মানুষ জমায়েত হয়েছিলেন। তাদের বার্তা ছিল এই মুহূর্তে গদি ছাড়। আমাদের ছোট ও শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতেও সরকার ভয় পেয়েছে। তারা যুদ্ধের সাজে সাঁজোয়া যান নিয়ে নিরীহ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা মামলা করেছে। প্রবীণ নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে রাস্তায় ফেলে পিটিয়েছে।

তিনি বলেন, জনগণের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক থাকে না তারাই এগুলো করে। এই নাটকে তারাই ছোট হয়েছে। গয়েশ্বর-আমান ছোট হয়নি।

এই সরকারের পায়ের নিতে মাটি নেই। তারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করতে গিয়ে বিরোধী দলের ছয় শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করেছে। এক হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে খুন করা হয়েছে। চল্লিশ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এগুলো করে কী মানুষের ঢল থামানো গেছে। থামানো যায়নি, যাবে না। সুতরাং এনাফ ইজ এনাফ।

মির্জা ফখরুল বলেন, কয়েকটা লোককে বিদেশ থেকে ভাড়া করে এনেছে। একজন নাকি আমেরিকার। উনি কে?  তাকে তো আমেরিকার কেউ চেনে না! গতবারও তাকে আনা হয়েছিল। এভাবে মানুষকে বোকা বানিয়ে আবারো নিজেদের অধীনে নির্বাচন করতে চায়। তবে দেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন চায় না। আমরাও নির্বাচন চাই। সেটা হতে হবে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা সব দল আজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করছি। দাবি এক দফা, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে।

তিনি সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, অবিলম্বে পদত্যাগ করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দাও। না হলে পালাবার পথ খুঁজে পাবে না। অবিলম্বে দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করুন। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। হামলা, মামলা গ্রেফতার হয়রানি বন্ধ করুন। না হলে ফয়সালা হবে রাজপথে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, পরিষ্কার কথা- বার বার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান। এবার আর সেটা হবে না। দেশের মানুষকে বোকা বানিয়ে আর আগের মতো নির্বাচন করা যাবে না। কারা কর্তৃপক্ষ যদি জেলকোডের বাইরে কিছু করেন সবকিছুর হিসাব দেশের মানুষ বুঝে নেবে।

তিনি বলেন, আজকে সরকার প্রধান ভয় পাচ্ছেন। তাদেরকে বলব- জনগণের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচিতে বাধা দেবেন না। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে এগিয়ে যেতে চাই। শিগগিরই একদফার পরবর্তী নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

জনসমাবেশে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) নেতা ডা. হারুন আল রশিদ, ডা. এমএ সেলিম, ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, মো. মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে ফ্রি মেডিকেল সার্ভিস দেওয়া হয়।

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইউট্যাব) অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, অধ্যাপক শেখ মনির উদ্দিন, দেবাশীষ পাল, বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের কাদের গণি চৌধুরী, এসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্সের (অ্যাব) প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল, প্রকৌশলী মো. মোস্তাফা-ই জামান সেলিম, প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান চুন্নু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মির্জা আব্বাস বলেন, আইয়্যুব খান ও ইয়াহিয়া খানের স্বৈরশাসন দেখেছি। কিন্তু এই সরকার যেভাবে শাসন করছে সেটা কখনো দেখিনি। গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের ওপর কী নির্যাতন করা হয়েছে! সাপের মতো পেটানো হয়েছে। সাপকেও এভাবে মারা হয় না। এরপর গ্রেফতার করেছে অনেককে। আমরা বাংলাদেশটাকে আওয়ামী লীগের কাছে ইজারা দিয়েছি নাকি? আওয়ামী লীগের পতন অবশ্যম্ভাবী। কোনো অত্যাচার নির্যাতন করে টিকে থাকতে পারবে না। তাদের হুংকার আল্লাহর কাছে পৌঁছে যাবে এবং আপনাদের তখতে তাউস ভেঙে পড়ে যাবে। এখনো সময় আছে জেল ভাঙার আগেই গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের ছেড়ে দেন।

ড. আবদুল মঈন খান বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সত্যিকারের চরিত্র আবারো জাতির সামনে পরিষ্কার হয়ে গেছে। কারণ এরা একদলীয় সরকার। এ জন্যই কাউকে কথা বলতে দেয়া হয় না। মিডিয়াকে কিছুই লিখতে দেয় না। এরাই অতীতে বাকশাল কায়েম করেছিল। আজকে আবার বাকশাল কায়েম করেছে। এরা হচ্ছে লগি-বৈঠা ও ধোঁকাবাজির সরকার। মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী সরকার। সংবিধান  লঙ্ঘনের সরকার। মামলা-হামলার সরকার। মুখে বলে গণতন্ত্র আর দেশে স্বৈরাচার কায়েম করেছে। সুতরাং এরা গদিতে থাকতে পারে না। শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে বিতাড়িত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ভালোয় ভালোয় সালাম দিয়ে চলে যান। না হলে চলে যেতে বাধ্য হবেন। তখনই হবে নাটকের শেষ। যত দ্রুত যাবেন, ততই দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক হবে।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলছে এবং চলবে। প্রয়োজনে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। যারা আমাদের আন্দোলন কর্মসূচিতে বাধা দেবেন বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষ কিন্তু বসে থাকবে না।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতেও পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা হামলা ও সশস্ত্র আক্রমণ চালিয়ে অনেক নেতা-কর্মীকে আহত ও গ্রেফতার করেছে। তারা আমাদের অবস্থান কর্মসূচি কীভাবে বানচাল করা যায় সেভাবেই পরিকল্পনা করেছিল। আসলে আমাদের কর্মসূচি বানচাল করতে গিয়ে নিজেরাই বানচাল হয়ে গেছে। তারা এখন গায়েবি মামলা দিচ্ছে।

সভাপতির বক্তব্যে মো. আবদুস সালাম বলেন, আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করলো, বাসে আগুন দিলো; আর আমাদের বিরুদ্ধেই মামলা দেওয়া হয়েছে! এই হলো আওয়ামী লীগ! ওরা কুড়াল নিয়ে আসলো সেটা নিয়ে পুলিশ কিছু বললো না? এখন তারেক রহমানের বক্তব্য শুনে আওয়ামী লীগের মাথা খারাপ। এই সরকারের সঙ্গে চোর ডাকাত ও লুটেরা ছাড়া কেউ নেই। আমরা বারবার মার খেয়ে যাবো সেটা আর হবে না। এজন্য তো মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করিনি।

আপন দেশ/এবি/এমএমজেড

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়