ছবি: সংগৃহীত
ঈমানদারদের সৌভাগ্যের পূর্ণচন্দ্র আস্তে আস্তে হেলে পড়ছে। মুমিনের প্রাণোচ্ছল ইবাদতের ভরা মৌসুম মাহে রমজান শেষ হয়ে যাচ্ছে। রহমতের দশক শেষ হয়ে মাগফিরাতের দশকও শেষ। এ লগ্নে অসংখ্য মুমিন মুসলমান প্রস্তুতি নিচ্ছেন, দুনিয়ার মোহনিদ্রা ত্যাগ করে আল্লাহ সন্তুষ্টি অর্জনের প্রয়াসে মসজিদের কোনে অবস্থান নেবার। যাকে বলা হয় ইতিকাফ।
ইতিকাফ আল্লাহ প্রেমের বহিঃপ্রকাশ। খোদার প্রেমে মগ্ন থাকার কার্যকরী গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। আল্লাহর কাছে যাওয়ার অপার সুযোগ। ইতিকাফ আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ অবস্থান করা, স্থির থাকা, কোনো স্থানে আটকে পড়া বা আবদ্ধ হয়ে থাকা। ইতিকাফ সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া। রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করা সুন্নত।
রমজানের ২০ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব থেকেই ইতিকাফ শুরু করতে হবে। ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা যাওয়া পর্যন্ত ইতিকাফ অবস্থায় থাকতে হবে। এ সময় কেউ ইতিকাফ করলে সে-ই পূর্ণাঙ্গ ইতিকাফের সওয়াব অর্জন করতে পারবে।
ইতিকাফের কিছু শর্ত রয়েছে। যেমন- এমন মসজিদে ইতিকাফ করতে হবে, যেখানে নামাজের জামায়াত হয়। জুমুয়ার জামায়াত হোক বা না হোক। এটা পুরুষদের ইতিকাফের ক্ষেত্রে। তবে মহিলাগণ ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে ইতিকাফ করবে। আরেকটি শর্ত হচ্ছে, ইতিকাফের নিয়ত করতে হবে। মহিলারা ইতিকাফ করা অবস্থায় তাদের পিরিয়ড অথবা প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণ শুরু হলে ইতিকাফ ছেড়ে দিবে।
ইতিকাফ অবস্থায় দুনিয়াবী কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা থেকে দূরে থাকতে হবে। প্রতিটি সময় আল্লাহর স্মরণে এবং ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাতে হবে। এক্ষেত্রে দৈনন্দিন প্রাকৃতিক যে সমস্ত কাজ রয়েছে, যেমন- প্রস্রাব-পায়খানা, অজু-গোসল, ঘুম ইত্যাদি সবই করা যাবে, তবে এসব কিছুই নিয়মের মধ্যে থেকে আদায় করলে, সেই ব্যক্তি তার ইতিকাফের মধ্যে পরিগণিত হবে এবং পরিপূর্ণ ইতিকাফের সওয়াবের অধিকারী হবে।
ইতিকাফ অবস্থায় বিনা অজুহাতে মসজিদ থেকে এবং মহিলাদের বেলায় নির্ধারিত কামরা থেকে বের হওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। মসজিদুল হারামে আদায়কৃত ইতিকাফ ইসলামের দৃষ্টিতে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ইতিকাফ। তারপর মসজিদে নববীর ইতিকাফ এবং তারপর বায়তুল মুকাদ্দাস। তারপর উৎকৃষ্ট ইতেকাফ হলো, কোনো জামে মসজিদে ইতিকাফ করা যেখানে রীতিমতো জামায়াতে নামাজ হয়। এরপর মহল্লার মসজিদে।
আরও পড়ুন>> রমজানে ক্ষমা পেতে যে দোয়া পড়বেন
পবিত্র কোরআনে সূরা বাকারার ১৮৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, আর তোমরা মসজিদে ইতিকাফকালে স্ত্রীদের সঙ্গে মেলামেশা কর না। নবীজি (সা.) ইতিকাফকে খুব গুরুত্ব দিতেন। হযরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, রাসূল (সা.) প্রতি রমজানের শেষ দশক (মসজিদে) ইতিকাফ করতেন। এ আমল তার ইন্তেকাল পর্যন্ত জারি ছিল। (বুখারি ও মুসলিম)।
ইতিকাফ আদায় সহিহ হওয়ার জন্য চারটি শর্ত রয়েছে- ১. পুরুষের মসজিদে এবং নারীদের জন্য ঘরে অবস্থান করা। ২. ইতিকাফের নিয়ত করা। ৩. বড় নাপাক থেকে পবিত্রতা অর্জন করা। ৪. রোজা রাখা। ইতিকাফের ফজিলত সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রোজার শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করবে, সে ব্যক্তি দু’টি হজ ও দু’টি ওমরার সমপরিমাণ সওয়াব পাবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)।
ইতিকাফ মূলত তিন প্রকার। এক. ওয়াজিব ইতিকাফ। দুই. সুন্নত ইতিকাফ। তিন. মুস্তাহাব ইতিকাফ। ইতিকাফ তিন ধরনের ১. ওয়াজিব, ২. মুস্তাহাব, ৩. সুন্নতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়া। ইতিকাফ করার মানত করলে তা আদায় করা ওয়াজিব। রমজানের শেষ ১০ দিনে ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়া। সুন্নতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়া মানে হলো একটি মহল্লা বা এলাকার সবার পক্ষে অন্তত একজন আদায় করতে হবে। একজনও আদায় না করলে পুরো এলাকাবাসীর গুনাহ হবে। এছাড়া রমজানের শেষ ১০ দিন ছাড়া যত ইতিকাফ করা হবে, তা মুস্তাহাব বা নফল।
একজন ইতিকাফকারীকে পাঁচটি গুণে গুণান্বিত হতে হবে। অর্থ্যাৎ পাঁচটি গুণ না থাকলে কোনো মানুষ ইতিকাফ করতে পারবে না। ১. মুসলমান হওয়া। ২. বালেগ বা প্রাপ্তবয়স্ক ও বিবেচনাবোধ সম্পন্ন হওয়া। ৩. পবিত্র হওয়া। ৪. ইতিকাফের নিয়ত করা। ৫. পূর্ণাঙ্গ সময় (একান্ত আবশ্যক কাজ ছাড়া) ইতিকাফের স্থানে অবস্থান করা।
আপন দেশ/এসএমএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।