ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে এখন গ্রীষ্মকাল। তীব্র তাপদাহে জনজীবন ওষ্ঠাগত। ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবন যাপন। একটু স্বস্তি পেতে চাতকের মতো চেয়ে আছে মানুষ। কি করলে মিলবে শীতলতা। গরমের তীব্রতায় ছটফট করছে প্রানিকূল। এমন পরিস্থিতিতে ইসলাম সহজ করেছে ইবাদত বন্দেগি। শিথিল করেছে ইবাদতের সময়।
হযরত আবু জার (রা.) বলেন, এক সফরে আমরা আল্লাহর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। মুয়াজ্জিন জোহরের আজান দিতে চেয়েছিল। তখন নবিজি (সা.) বলেন, গরম কমতে দাও। কিছুক্ষণ পর আবার মুয়াজ্জিন আজান দিতে চাইলে মহানবি পুনরায় বলেন, গরম কমতে দাও। এভাবে তিনি (নামাজ আদায়ে) এত বিলম্ব করলেন যে আমরা টিলাগুলোর ছায়া দেখতে পেলাম। এরপর নবিজি (সা.) বলেন, গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ হতে। কাজেই গরম প্রচণ্ড হলে উত্তাপ কমার পর নামাজ আদায় করো।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৩৯)
গরমে অল্প আমলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। একজন মুমিন সে আমল করে সহজেই আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারে। অল্প আমলে বেশি সওয়াব পাওয়ার বেশ কিছু আমল রয়েছে। তা হলো-
নফল রোজা
গরমের রোজা শীতের থেকে বেশি কষ্টকর। সে কষ্ট উপেক্ষা করে যদি নফল রোজা রাখা যায়, তাহলে আল্লাহ তাআলা বেশি নেকি দেবেন। সাহাবায়ে কেরামরা বেশি সওয়াবের আশায় গরমকালে রোজা রাখতেন।
পিপাসার্তকে পানি পান করানো
পিপাসার্তকে পানি পান করানো একটি উত্তম কাজ। আর যদি প্রচন্ড গরমে কাউকে ঠাণ্ডা পানি পান করানো হয়, তাহলে তো কাজটি আরও উত্তম হবে। এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করলেন, ‘কোন দান উত্তম? তিনি বললেন, পানি পান করানো।’ (নাসাই: ৫৪৫৬)
ইমাম কুরতুবি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘তৃষ্ণার্তের তৃষ্ণা নিবারণ সর্বোত্তম মহৎ কাজের একটি’।
হাদিসের অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সদকা বা দান জাহান্নামের আগুন নির্বাপণ করে। আর পানি পান করানো উত্তম সাদকা।’ (আবু দাউদ: ৭৪৩৫)
নফল নামাজ
অতিরিক্ত গরম হলো জাহান্নামের নিঃশ্বাস, তাই জাহান্নামের ভয়ে বেশি করে এবং লম্বা লম্বা সূরা দিয়ে নফল নামাজ আদায় করা উত্তম। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন গরম বেশি পড়বে, তখন বেশি নামাজ আদায় করো। কারণ অতিরিক্ত গরম হলো জাহান্নামের নিশ্বাস।’ (মেশকাত: ৫৯১)
গরম থেকে শিক্ষা
গরমের তীব্রতা থেকে মুমিনের জন্য রয়েছে শিক্ষা। কেননা জাহান্নামের আগুনের উত্তাপ পৃথিবীর আগুনের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি। তাই এ গরম থেকে জাহান্নমের তীব্রতা অনুমান করে গুনাহ থেকে মুক্ত থাকা। হাদিসে পাকে এসেছে- রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জাহান্নাম তার প্রতিপালকের কাছে এ বলে নালিশ করেছিল, হে আমার প্রতিপালক! (দহনের প্রচণ্ডতায়) আমার এক অংশ আরেক অংশকে গ্রাস করে ফেলছে। ফলে আল্লাহ তাকে দুইটি শ্বাস ফেলার অনুমতি দেন। একটি শীতকালে অপরটি গ্রীষ্মকালে। আর তাই তোমরা গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড উত্তাপ এবং শীতকালে তীব্র ঠাণ্ডা অনুভব করো।’ (বুখারি: ৫৪৫৫)
গরিবদের ফল বিতরণ
আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার আরও মাধ্যম হচ্ছে, গরিব-দুঃখীর মাঝে সুমিষ্ট ফল বিতরণ করা। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করা। ঘামে ভেজা শরীরে জনসমাগমে গমন না করা। গরমের সময় প্রবাহিত ঘামের গন্ধ যেন অন্যের কষ্টের কারণ না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখা। গ্রীষ্মকালকে গালমন্দ না করা বিষয়টিও খেয়াল রাখার নির্দেশ দেয় ইসলাম।
আপন দেশ/এসএমএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।