ছবি: সংগৃহীত
ইস্তিসকার নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা; কেননা বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ (সা.) অনাবৃষ্টি ও পানি স্বল্পতার সময় এ নামাজ আদায় করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) নামাজের মাঠের দিকে বের হয়ে গেলেন, অতঃপর আল্লাহর কাছে পানি তলব করলেন। তিনি কেবলামুখী হলেন। তার চাদর উল্টিয়ে পরলেন এবং ২ রাকাত নামাজ আদায় করলেন। (বুখারি ও মুসলিম)
ইস্তিসকার নামাজের সময়
যখন জমিন শুকিয়ে যায় অথবা অনাবৃষ্টি শুরু হয় অথবা কূপ ও ঝর্ণার পানি কমে যায়, নদী শুকিয়ে যায় তখন সূর্যোদয়ের পর ২০ মিনিটের মতো সময় অতিবাহিত হলে ইস্তিসকার নামাজ পড়তে হয়, ঈদের নামাজের সময়ের মতোই।
ইস্তিসকার নামাজের জায়গা
ইস্তিসকার নামাজ মসজিদে নয় মাঠে আদায় করা সুন্নত। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা.) এরুপই করেছেন। তবে প্রয়োজনে মসজিদেও আদায় করা যাবে।
ইস্তিসকার নামাজের বর্ণনা
(১) ইস্তিসকার নামাজ ২ রাকাত। আজান ইকামতবিহীন প্রকাশ্য কেরাতে এ নামাজ আদায় করতে হয়।
(২) মুসল্লি প্রথম রাকাতে তাকবিরে তাহরিমার পর ৭ বার তাকবির দেবে। আর দ্বিতীয় রাকাতে ৫ বার তাকবির দেবে।
(৩) প্রত্যেক তাকবিরের সময় হাত উঠাবে। তাকবিরগুলোর মাঝে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা এবং রাসূল (সা.)-এর উপর দরুদ পড়বে।
(৪) নামাজের পর ইমাম খুতবা দেবেন। খুতবায় বেশি বেশি ইস্তেগফার ও কোরআন তেলাওয়াত করবেন। অতঃপর ২ হাত উঠিয়ে মিনতির সঙ্গে দোয়া করবেন এবং হাদিসে বর্ণিত দোয়াগুলো বেশি পড়বেন।
(৫) অতঃপর ইমাম কিবলামুখী হয়ে তার চাদর উল্টিয়ে পরবেন, ডান দিকের অংশ বাম দিকে এবং বাম দিকের অংশ ডান দিকে দেবেন। সঙ্গে সঙ্গে চুপে চুপে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকবেন।
ইস্তিসকার নামাজের কিছু আহকাম
> ইস্তিসকার নামাজের পূর্বে ওয়াজ নসিহত করা, মানুষের হৃদয় গলে এমন কথা বার্তা বলা, যেমন গুনাহ থেকে তাওবা করার গুরুত্ব তুলে ধরা। জুলুম অন্যায়ভাবে হাতিয়ে নেয়া সম্পদ তার হকদারের কাছে পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা; কেননা মানুষের পাপ-গুনাহের কারণেই বৃষ্টিপাত বন্ধ করে দেয়া হয়। আর তাওবা ইস্তিগফার ও তাকওয়া অর্জন দোয়া কবুল হওয়া এবং খায়ের ও বরকত লাভের কারণ। অনুরূপভাবে মানুষদেরকে এ উপলক্ষ্যে দান সদকার ব্যাপারেও উৎসাহ দেয়া; কেননা দান খয়রাত আল্লাহর রহমত আকৃষ্ট করার কারণ।
> ইস্তিসকার নামাজের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট দিন ঠিক করা, যাতে মানুষ ওই দিনের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষায় থাকে।
> ইস্তিসকার নামাজে খুশু-খুজু, বিনয়-নম্রতার সঙ্গে গমন করা সুন্নত। সঙ্গে সঙ্গে একমাত্র আল্লাহ তা’আলাই যে বান্দার সব হাজত-প্রয়োজন পূরণ করেন এ মনোভাবও অন্তরে জাগ্রত রাখা উচিত।
ইবনে আব্বাস (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ইস্তিসকার নামাজের জন্য বের হওয়ার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ (সা.) অনাড়ম্বরভাবে, বিনয়-নম্রতা ও আকুতিসহ বের হয়ে নামাজের মাঠে উপস্থিত হয়েছেন’। (আবু দাউদ)
> ইস্তিসকার খুতবায় হাত উঠিয়ে বেশি বেশি দোয়া ও ইস্তিগফার করা।
বৃষ্টিপাত হলে যা করা মুস্তাহাব
বৃষ্টিপাতের শুরুতে বৃষ্টিতে নামা ও ভেজা মুস্তাহাব; হাদিসে এসেছে, আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে থাকা অবস্থায় আমাদেরকে বৃষ্টি পেয়ে বসল। তিনি বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) তার কাপড় গুটালেন। তিনি বৃষ্টিতে ভিজলেন। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এমন করলেন কেন? তিনি বললেন, কেননা এ বৃষ্টি তার রবের পক্ষ থেকে নতুন এসেছে’। (মুসলিম)
বৃষ্টি একমাত্র আল্লাহ তা’আলার দয়া ও করুণা
একজন মুসলমানের বিশ্বাস করা উচিত যে, আল্লাহ তা’আলার দয়া ও করুণার ফলেই বৃষ্টি বর্ষিত হয়। যারা বলে যে অমুক গ্রহের কারণে বৃষ্টি হয়েছে তাদের কথা ভুল, এটা বরং শিরক। আল্লাহ! আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।
সূত্র: আল-ফেকহ.কম
আপন দেশ/এসএমএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।